ডিমের দাম বৃদ্ধি: ১০ কোম্পানি ও সংগঠনের বিরুদ্ধে কারসাজির অভিযোগে মামলা

ডিম, ডিমের দাম, পোল্ট্রি ফার্ম, বাংলাদেশ প্রতিযোগিতা কমিশন, বিসিসি, কারসাজি,
ইলাস্ট্রেশন বিপ্লব চক্রবর্তী

দেশের ১০টি পোল্ট্রি ফার্ম ও পোল্ট্রি সংশ্লিষ্ট সংগঠনের বিরুদ্ধে ডিমের দাম বৃদ্ধিতে বাজারে কারসাজির অভিযোগে মামলা করেছে বাংলাদেশ প্রতিযোগিতা কমিশন (বিসিসি)।

এই প্রতিষ্ঠানগুলো হলো- কাজী ফার্মস, প্যারাগন পোল্ট্রি লিমিটেড, ডায়মন্ড এগ লিমিটেড, পিপলস পোল্ট্রি অ্যান্ড হ্যাচারি লিমিটেড, নাবা ফার্ম লিমিটেড, বাংলাদেশ পোল্ট্রি ইন্ডাস্ট্রিজ সেন্ট্রাল কাউন্সিল, বাংলাদেশ পোল্ট্রি ইন্ডাস্ট্রিজ অ্যাসোসিয়েশন, বাংলাদেশ পোল্ট্রি ফার্ম প্রোটেকশন ন্যাশনাল কাউন্সিল, পোল্ট্রি প্রফেশনালস বাংলাদেশ ও ইউনাইটেড এগ সেল পয়েন্ট।

কমিশন বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের অধীনে কাজ করে এবং প্রতিযোগিতা আইন লঙ্ঘনের জন্য দায়ী প্রতিষ্ঠানগুলোর তদন্ত, বিচার ও শাস্তি দেওয়ার ক্ষমতা রাখে এবং প্রতিযোগিতা আইন-২০১২ এর অধীনে। এই আইনে আদালতে না গিয়ে মামলা নিষ্পত্তির সুযোগ আছে।

বিসিসি সদস্য হাফিজুর রহমান দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, 'আমাদের প্রাথমিক অনুসন্ধানে দেখা গেছে- এসব প্রতিষ্ঠান তাদের ডিমের দাম বাড়িয়েছে, বাজার নিয়ন্ত্রণ করছে এবং একটি সিন্ডিকেটের মাধ্যমে কৃত্রিম সংকট তৈরি করেছে।'

তিনি আরও বলেন, 'প্রতিযোগিতা আইন-২০১২ এর ১৫ ধারায় মামলা দায়ের করা হয়েছে এবং ১৫ দিনের মধ্যে জবাব দিতে কোম্পানিগুলিকে আজ বা আগামীকাল নোটিশ পাঠানো হবে।'

কমিশনের একজন জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তা বলেন, দোষী সাব্যস্ত হলে কোম্পানিগুলোকে তিন বছরের গড় টার্নওভারের ১০ শতাংশ পর্যন্ত সর্বোচ্চ জরিমানা করা হতে পারে।

প্রতিযোগিতা আইনের ১৫ ধারায় বলা হয়েছে, কোনো ব্যক্তি প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে কোনো পণ্য বা সেবার উৎপাদন, সরবরাহ, বিতরণ, মজুত বা অধিগ্রহণে কোনো চুক্তি বা যোগসাজশ করতে পারবেন না, যা প্রতিযোগিতার ওপর বিরূপ প্রভাব ফেলবে বা বাজারে একচেটিয়া প্রভাব তৈরি করবে।

চলতি বছরের আগস্টের মাঝামাঝি সময়ে এক ডজন ডিমের দাম ১৪৫ টাকা থেকে বেড়ে ১৮০ টাকা পর্যন্ত হয়েছিল। ফলে, সেসময় অনেকেই বিপাকে পড়েন।

পরে ডিমের অস্বাভাবিক মূল্যবৃদ্ধির কারণ অনুসন্ধানে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের নির্দেশে দুটি কমিটি গঠন করে বিসিসি।

গত ১৩ আগস্ট মৎস্য ও প্রাণিসম্পদমন্ত্রী শ ম রেজাউল করিম বলেছিলেন, দেশে একটি ডিম উৎপাদনে খরচ হয় প্রায় ১০ টাকা ৫০ পয়সা। তাই খুচরা বাজারে ১২ টাকায় ডিম বিক্রি হলে সবাই লাভবান হবেন।

ডিমের মূল্য বৃদ্ধির পর জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর অভিযান চালানোর পর দাম কমে।

ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশের (টিসিবির) তথ্য বলছে, গতকাল এক ডজন ডিম বিক্রি হয়েছে ১৫০ টাকায়। আর গত এক বছরে ডিমের দাম বেড়েছে ১৮ দশমিক ৩৯ শতাংশ।

কাজী ফার্মস গ্রুপের পরিচালক কাজী জাহিন হাসান বলেন, ডিমের দাম বাড়ানোর জন্য কাজী ফার্মস কোনো কার্টেল বা 'সিন্ডিকেটের' সঙ্গে জড়িত নয়। ডিমের দাম বাড়লে মানুষ ভেবে নেয় বড় বড় কোম্পানিগুলো সিন্ডিকেট করেছে।

তিনি জানান, প্রতিদিন শত শত ব্যবসায়ী ডিম কেনা-বেচা করেন। তাই যারা কম দামে বিক্রি করবেন মানুষ তাদের কাছ থেকেই ডিম কিনবেন। কাজী ফার্মস যদি ছোট খামারিদের চেয়ে বেশি দামে ডিম বিক্রির চেষ্টা করে, তাহলে ব্যবসায়ীরা আমাদের কাছ থেকে নয় ছোট খামারিদের কাছ থেকে ডিম কিনবেন।

'গত এক বছর ধরে অনেক ডিম খামারি উৎপাদন বন্ধ করে দিয়েছেন, কারণ মুরগির খাদ্যের দাম বেশি এবং তাদের লোকসানে ডিম বিক্রি করতে হচ্ছিল। এসব কারণে সরবরাহ কমে গেছে। এছাড়া প্রচণ্ড গরমে ডিমের উৎপাদন ও সরবরাহ অনেক কমেছে,' যোগ করেন তিনি।

পিপলস পোল্ট্রি অ্যান্ড হ্যাচারি লিমিটেডের মহাব্যবস্থাপক নজরুল ইসলাম লিটন দাবি করেন, তার প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে আনা অভিযোগ সত্য নয়।

তিনি ডিমের দাম বৃদ্ধির জন্য উৎপাদন কমে যাওয়া ও পোল্ট্রি ফিডের উচ্চ মূল্যকে দায়ী করেন।

ইউনাইটেড ডিম সেল পয়েন্টের মালিক ও বাংলাদেশ পোল্ট্রি ইন্ডাস্ট্রিজ অ্যাসোসিয়েশনের মহাসচিব খন্দকার মো. মহসিন বলেন, 'প্রতিযোগিতা কমিশনের আনিত অভিযোগ যৌক্তিক নয়। গত তিন বছরে ৬০ হাজারেরও বেশি পোল্ট্রি খামার বন্ধ হয়ে গেছে। মুরগির খাদ্যের দাম বৃদ্ধির কারণে ডিমের দামও বেড়েছে। এ ছাড়া এ বছর তাপদাহে সারাদেশের অনেক খামারে লেয়ার মুরগি মারা গেছে।'

পোল্ট্রি প্রফেশনালস বাংলাদেশের সদস্য আমজাদ হোসেন বকুল বলেন, বৈজ্ঞানিক পদ্ধতিতে খামার পরিচালনায় খামারিদের পরামর্শ দেওয়াই তাদের প্রতিষ্ঠানের প্রধান কাজ।

তিনি বলেন, 'তাদের প্রতিষ্ঠান একটি জ্ঞান আদান-প্রদানভিত্তিক প্ল্যাটফর্ম, যা পোল্ট্রি উৎপাদক, খাদ্য উৎপাদনকারী, প্রাণিসম্পদ বিজ্ঞানের শিক্ষার্থী, গবেষক, শিক্ষক ও প্রাণিসম্পদ খাতের স্টেকহোল্ডারদের সঙ্গে কাজ করে।'

সম্প্রতি ডিমের দাম বৃদ্ধির জন্য তারা দায়ী নয় বলেও তিনি দাবি করেন।

ডায়মন্ড এগ লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক কায়সার আহমেদ ও প্যারাগন গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মশিউর রহমানের সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও সম্ভব হয়নি।

কনজ্যুমারস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের সভাপতি গোলাম রহমান বলেন, ডিম, ব্রয়লার মুরগিসহ নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের দাম বাড়ানোর অভিযোগে গত বছর প্রতিযোগিতা কমিশন বেশ কয়েকটি কোম্পানি ও প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে মামলা করলেও কোনো ফল পাওয়া যায়নি। মামলাগুলো দ্রুত নিষ্পত্তি না হলে ও দোষীদের শাস্তি না হলে হঠাৎ যে কোনো পণ্যের অস্বাভাবিক মূল্য বৃদ্ধি বন্ধ করা সম্ভব হবে না এবং ভোক্তাদের ভোগান্তি বাড়বে।

এবার কমিশন মামলাগুলো দ্রুত শুনানি করে আইনানুগ ব্যবস্থা নেবে বলে আশা প্রকাশ করেন তিনি।

এর আগে, গত বছরের সেপ্টেম্বরে চাল, আটা, ডিম, হাঁস-মুরগি ও টয়লেট্রিজ পণ্যের দাম অস্বাভাবিকভাবে বেড়ে যাওয়ার অভিযোগে বিভিন্ন ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে ৪৪টি মামলা করেছিল বিসিসি। সেই মামলার তালিকায় কাজী ফার্মস, প্যারাগন পোল্ট্রি লিমিটেডও আছে। বর্তমানে কমিশনে এসব মামলার শুনানি চলছে।

Comments

The Daily Star  | English
The Indian media and Bangladesh-India relations

The Indian media and Bangladesh-India relations

The bilateral relationship must be based on a "win-win" policy, rooted in mutual respect, non-hegemony, and the pursuit of shared prosperity and deeper understanding.

7h ago