সুদান যুদ্ধে পাট রপ্তানি আরও সংকটে

পাট
ফাইল ছবি

গত ২ বছর ধরে চলা পাট রপ্তানি নিম্নগামী। এর মধ্যে সুদানে যূদ্ধ আরও বেশি সংকটে ফেলেছে এই খাতকে।

পাটকল মালিকরা বলছেন, লোহিত সাগরের তীরবর্তী এই দেশটিতে বাংলাদেশের পাটের বস্তা ও ব্যাগের ভালো বাজার ছিল।

গত এপ্রিলের মাঝামাঝি রাষ্ট্রীয় ক্ষমতা দখলকে কেন্দ্র করে দেশটিতে গৃহযুদ্ধ শুরু হওয়ায় সেখানে রপ্তানি বাধাগ্রস্ত হচ্ছে।

ইতোমধ্যে যেসব পণ্য রপ্তানি করা হয়েছে সেগুলোর মূল্য পেতে অনেকে অসুবিধার সম্মুখীন হতে হচ্ছে।

রহমান জুট স্পিনার প্রাইভেট লিমিটেডের পরিচালক মো. মামুনুর রহমান দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, 'আমদের উৎপাদন ক্ষমতার প্রায় ৪০ শতাংশ পাটের ব্যাগ সুদানে রপ্তানি করতাম।'

তিনি আরও বলেন, 'রপ্তানি কমেছে। রপ্তানি পণ্যের মূল্য পরিশোধ নিয়ে অনিশ্চয়তার কারণে আমরা সেখানে পণ্য পাঠানোর সাহস করছি না।'

২০২১-২২ সালে এই প্রতিষ্ঠান সুদানে পাটের প্রায় ১ হাজার টন বস্তা রপ্তানি করেছিল। চলতি অর্থবছরে সেই রপ্তানি ২০০ টনে নেমে এসেছে।

এই সংকট ২০২১ সালের অক্টোবরে সুদানে সামরিক অভ্যুত্থানের পর থেকেই দেখা যাচ্ছে। গত ৬ থেকে ৮ মাসের মধ্যে তা আরও প্রকট হয়েছে।

২০২০-২১ অর্থবছরের ১১ মাসে বাংলাদেশ থেকে সুদানে ৪০ মিলিয়ন ডলারের বেশি বস্তা ও ব্যাগ রপ্তানি হয়েছে।

রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরোর তথ্য অনুসারে, চলতি অর্থবছরে বস্তা ও ব্যাগ থেকে রপ্তানি আয় বাড়লেও ২০২০-২১ অর্থবছরের তুলনায় তা ৩৭ শতাংশ কমেছে।

গোল্ডেন ফাইবার ট্রেড সেন্টার লিমিটেডের (জিএফটিসিএল) ব্যবস্থাপনা পরিচালক মুশতাক হোসেন ডেইলি স্টারকে বলেন, 'বাংলাদেশের পাটের বড় বাজার সুদান। দেশটির তুলা ও খাদ্যশস্য রাখতে পাটের বস্তা ও ব্যাগ ব্যবহার করা হয়।'

তাদের প্রতিষ্ঠান থেকে প্রায় ৩ কোটি টাকার পণ্য পাঠানো হলেও এর দাম এখনো পরিশোধ করা হয়নি উল্লেখ করে তিনি আরও বলেন, 'যুদ্ধের পর থেকে বায়ারদের খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না। আরও বেশ কিছু রপ্তানিকারকের টাকাও আটকে আছে।'

গত বছরের তুলনায় চলতি অর্থবছরের ১১ মাসে পাট ও পাটপণ্য রপ্তানি আয় ২০ শতাংশ কমে ৮৪৫ মিলিয়ন ডলার হয়েছে। এমন পরিস্থিতিতে সুদানের যুদ্ধ রপ্তানি সংকট আরও বাড়িয়ে তুলেছে।

অন্যদিকে যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপে মূল্যস্ফীতি বেড়ে যাওয়ায় এবং রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে পাটের সুতা রপ্তানিতেও ভাটা পড়েছে। সাধারণত কার্পেট তৈরিতে পাটের সুতা ব্যবহার করা হয়।

দেশে পাটের সুতা ও পাটপণ্য তৈরি ও রপ্তানিকারক প্রতিষ্ঠান জনতা জুট মিলস ও সাদাত জুট ইন্ড্রাস্ট্রিজ লিমিটেডের চিফ অপারেটিং অফিসার হেলাল আহমেদ ডেইলি স্টারকে বলেন, 'কার্পেটের বাজার থেকেও পাটের সুতার চাহিদা কমছে।'

তিনি জানান যে তাদের প্রতিষ্ঠানে উৎপাদন কমানো না হলেও অন্যান্য ছোট ছোট প্রতিষ্ঠান লোকসানে পড়ে টিকে থাকার লড়াই করছে।

রহমান জুট স্পিনার প্রাইভেট লিমিটেডের পরিচালক মো. মামুনুর রহমান বলেন, 'লোকসান হওয়া সত্ত্বেও শুধু বায়ার ধরে রাখতে পণ্য বিক্রি করে যাচ্ছি।'

২০২০-২১ অর্থবছরে কাঁচা পাটের দাম রেকর্ডমাত্রায় বেড়ে যাওয়ায় অনেক বায়ার সিনথেটিক বা অন্যান্য বিকল্প সুতার দিকে ঝুঁকেছেন।

তিনি আরও বলেন, 'বায়ারদের হাতে অন্য সুযোগও আছে। তারা পাটের সুতা ‍ও সিনথেটিক সুতার দাম যাচাই করে ক্রয়-আদেশ দিচ্ছেন।'

আকিজ জুট মিল লিমিটেডের চেয়ারম্যান শেখ নাসির উদ্দিন জানান, কাঁচা পাটের অত্যধিক দামের প্রভাব রপ্তানিকারকদের ওপর পড়েছে।

তিনি বলেন, 'পাটের উচ্চ মূল্যের কারণে যেসব বায়ার বিকল্প পণ্যের দিকে ঝুঁকেছেন তারা পাটপণ্যের দিকে আর ফিরে আসেননি।'

তার মতে, সরকার যদি সে সময় পাট মজুদদারির বিরুদ্ধে জোরদার ব্যবস্থা নিত তাহলে এমন সমস্যা হতো না।

'পাট কাটার মৌসুমের আগেই সরকারকে এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়া প্রয়োজন। সরকারকে রপ্তানি বন্ধ করতে হবে এবং পাটের গুণগতমান বিচার করে মনপ্রতি মূল্য ২ হাজার থেকে আড়াই হাজার টাকা বেঁধে দিতে হবে,' যোগ করেন তিনি।

 

Comments

The Daily Star  | English

Nowfel gained from illegal tobacco trade

Former education minister Mohibul Hassan Chowdhoury Nowfel received at least Tk 3 crore from a tobacco company, known for years for illegal cigarette production and marketing including some counterfeit foreign brands.

3h ago