‘যারা শ্রমিকদের অবস্থা জানতে আসেন তাদের চেয়ে বাংলাদেশ অগ্রগামী’

আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা | ছবি: টেলিভিশন থেকে নেওয়া

শ্রমিকের অধিকার বাংলাদেশ উন্নত অনেক দেশের চেয়ে অগ্রগামী মন্তব্য করে আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, 'অনেকেই আসেন আমাদের দেশে শ্রমিকের অবস্থা জানতে কিংবা শিল্প কল-কারখার অবস্থা জানতে। যেসব দেশ থেকে আসেন, তারাও কিন্তু এ ক্ষেত্রে পিছিয়ে আছেন।'

আজ মঙ্গলবার সকালে জাতীয় বস্ত্র দিবস এবং বস্ত্র ও পাট মন্ত্রণালয় স্থাপিত দেশের বিভিন্ন জেলায় ৬টি টেক্সটাইল শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে তিনি এ কথা বলেন।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, 'শ্রমিকদের অধিকার প্রতিষ্ঠার ব্যবস্থা আমরা করেছি। আইএলও কনভেনশন আমরা যত বেশি অনুমোদন করেছি, স্বাক্ষর করেছি, গ্রহণ করেছি অনেক উন্নত-ধনী দেশও করেনি। বাংলাদেশ করেছে। এটা হলো বাস্তবতা। এটা সবাইকে স্মরণ রাখতে হবে। অনেকেই আসেন আমাদের দেশে শ্রমিকের অবস্থা জানতে কিংবা শিল্প কল-কারখার অবস্থা জানতে। যেসব দেশ থেকে আসেন, তারাও কিন্তু এ ক্ষেত্রে পিছিয়ে আছেন। তাদের থেকে আমরা অনেকটা অগ্রগামী, এটা আমি বলতে বাধ্য হচ্ছি।'

তিনি আরও বলেন, 'বস্ত্র মানুষের মৌলিক অধিকার। বাংলাদেশে এমন সময় ছিল যখন দেশের সাধারণ মানুষের এক টুকরো কাপড় জোগাড় করতে তাদের কষ্ট ছিল। পেটে ভাত ছিল না, পরণে কাপড় ছিল না, মাথা গোঁজার ঠাঁই ছিল না, রোগে চিকিৎসা ছিল না—এমন একটি অবস্থা।'

'স্বাধীনতার পর জাতির পিতা বিশেষ উদ্যোগ নেন এবং আমাদের বস্ত্র খাত যেন গতিশীল হয়, আরও উন্নত মানের হয় সেই ব্যবস্থা নিয়েছিলেন। যেসব শিল্প বন্ধ ছিল; কারণ অধিকাংশ কল-কারখানার মালিক তো পাকিস্তানিরা, ছিল যারা মহান মুক্তিযুদ্ধের সময় এই কল-কারখানা বন্ধ করে দিয়ে চলে যায়। সব বন্ধ কল-কারখানা জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান জাতীয়করণ করে সেগুলো পুনরায় চালু করে। আর বস্ত্র খাতকেও আরও উন্নত করার বিভিন্ন পদক্ষেপ তিনি নেন,' বলেন শেখ হাসিনা।

মেয়েদের কর্মসংস্থানে একটি নতুন দার উন্মোচন করেছে পোশাক শিল্প মন্তব্য করে তিনি বলেন, 'আমাদের দেশে শুধু অর্থনীতিকে সমৃদ্ধশালী না, নারী-পুরুষ উভয়েরই কর্মসংস্থানের বিরাট সুযোগ হয়েছে এই বস্ত্র শিল্পের থেকে। বিশেষ করে আমাদের পোশাক শিল্প থেকে। তাছাড়া বস্ত্র-সুতা উৎপাদনের আমাদের যে ঐতিহ্য ছিল তা একে একে হারিয়ে যাচ্ছিল। সেগুলো আজকে আমরা চেষ্টা করে যাচ্ছি আবার নতুনভাবে শুরু করতে। তৈরি পোশাক রপ্তানির মাধ্যমে আমরা যে বৈদেশিক মুদ্রা অর্জন করি, ২০২২ সালে বাংলাদেশের ৪৫ দশমিক ৭০ বিলিয়ন মার্কিন ডলারের তৈরি পোশাক রপ্তানি করা হয়। সেদিক থেকে আমি বলবো, এটা আমাদের অর্থনীতিতে একটা বিরাট অবদান রেখে যাচ্ছে। গ্রামের প্রত্যন্ত অঞ্চল থেকে গ্রামের মহিলারা এসে যখন কাজ করে, এই কাজের ফলে গ্রামীন অর্থনীতিতেও তারা বিশেষ অবদান রেখে যাচ্ছে। একেকটি পরিবার আর্থিক সক্ষমতা অর্জন করছে।'

আওয়ামী লীগ সরকারের উদ্যোগ তুলে ধরে শেখ হাসিনা বলেন, 'এই শিল্প পরিচালনা সম্পূর্ণ বিদেশ নির্ভর ছিল। ফরওয়ার্ড-ব্যাকওয়ার্ড লিংকেজের ব্যবস্থা ছিল না, বন্ডেড হাউস ছিল না। প্রথমবার সরকারে এসে বন্ডেড হাউস ও ফরওয়ার্ড লিংকেজের ব্যবস্থা এবং ব্যাকওয়ার্ড লিংকেজের ব্যবস্থাও এখন আমরা যথাযথভাবে নিয়েছি। তার ফলে আমাদের সম্পূর্ণভাবে বিদেশ নির্ভর না হয়ে আমরা যেন নিজের দেশে নিজেই উৎপাদন করতে পারি সেদিকে বিশেষভাবে দৃষ্টি দেওয়া।'

'একটি শিল্প পরিচালনা করতে গেলে যে দক্ষ জনশক্তি দরকার, বিশেষ করে পরিচালন ক্ষেত্রে আমরা অনেকটা পিছিয়ে ছিলাম। বিদেশ থেকে লোক নিয়ে এসে পরিচালনা করা হতো। সেদিকে লক্ষ্য রেখে আমরা ইতোমধ্যে টেক্সটাইল বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা করে দিয়েছি। এখন বিভিন্ন জায়গায় টেক্সটাইল ইনস্টিটিউট তৈরি করে দিয়ে দক্ষ জনশক্তি সৃষ্টি করে দিচ্ছি,' বলেন।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, 'আমাদের সব থেকে দুর্ভাগ্য হলো যে, করোনাভাইরাসের ফলে সারা বিশ্বে অর্থনীতি স্থবির। বিশ্বে মানুষের ক্রয় ক্ষমতা কমে গেছে, ব্যাপকভাবে মূল্যস্ফীতি বেড়ে গেছে। করোনা কাল থেকে আমরা যখন কেবল উত্তরণ ঘটাচ্ছিলাম সেই সময় এলো রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ। স্যাংশন-কাউন্টার স্যাংশন। যার ফলে একদিকে যেমন মূল্যস্ফীতি, পণ্য পরিবহনের ভাড়া বৃদ্ধি অন্যদিকে যেসব দেশ থেকে আমরা আমদানি করি বা যেসব দেশে আমরা রপ্তানি করি সেখানেও একটা বিরাট সমস্যা দেখা দিচ্ছে। এর মাঝেও আমাদের সব ধরনের চেষ্টা রয়েছে; আমাদের ব্যবসা-বাণিজ্য, শিল্প কল-কারখানা যেন সঠিকভাবে চলতে পারে, তার ব্যবস্থা আমরা করে যাচ্ছি বলেই আমাদের উৎপাদন, পণ্য পরিবহন বা কোনো কিছুতে খুব বেশি ক্ষতি হতে পারেনি।'

'আমরা চেষ্টা করে যাচ্ছি, করোনার প্রভাব, রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ ও স্যাংশন-পাল্টা স্যাংশনের প্রভাবমুক্ত রেখেই আমাদের শিল্পগুলো যেন সচল থাকে। তার জন্য যথাযথ ব্যবস্থা আমরা নিয়ে যাচ্ছি,' বলেন শেখ হাসিনা।

বৈশ্বিক মন্দার প্রসঙ্গে তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী বলেন, 'একটা কঠিন অবস্থার মধ্য দিয়ে আমাদের চলতে হচ্ছে। তারপরও কঠোর মনিটরিংয়ের মাধ্যমে যাতে ব্যয় সাশ্রয় হয়, আমরা তার ব্যবস্থা নিচ্ছি। আর উৎপাদনশীলতা যাতে বৃদ্ধি পায় তার জন্য যথাযথ পদক্ষেপ আমরা নিয়েছি। আমরা সব ধরনের সহযোগিতা করে যাচ্ছি।'

Comments

The Daily Star  | English
Drug sales growth slows amid high inflation

Drug sales growth slows amid high inflation

Sales growth of drugs slowed down in fiscal year 2023-24 ending last June, which could be an effect of high inflationary pressure prevailing in the country over the last two years.

17h ago