শিশু-কিশোরদের সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ব্যবহারে অভিভাবকদের করণীয়

সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম, স্ক্রিন টাইম, মানসিক স্বাস্থ্য,
অলঙ্করণ: বিপ্লব চক্রবর্তী

সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ব্যবহার শিশু-কিশোরদের মানসিক স্বাস্থ্যের ওপর মারাত্মক প্রভাব ফেলতে পারে। তাই বিশেষজ্ঞরা শিশু-কিশোরদের ক্ষেত্রে আদর্শ স্ক্রিন টাইম মেনে চলার পরামর্শ দেন।

শিশু-কিশোরদের ক্রমবর্ধমান মানসিক স্বাস্থ্য সংকট মোকাবিলায় অভিভাবক, নীতিনির্ধারক ও প্রযুক্তি সংস্থাগুলোর প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন মার্কিন সার্জন জেনারেল ডা. বিবেক মুরতি। তিনি পরামর্শ দিয়েছেন, সামাজিক মাধ্যম ব্যবহার শিশু-কিশোরদের মানসিক স্বাস্থ্য ও সুস্থতায় মারাত্মক ঝুঁকি তৈরি করতে পারে।

তিনি বলেন, দিনে ৩ ঘণ্টার বেশি সময় সামাজিক মাধ্যম ব্যবহার শিশু-কিশোরদের মধ্যে হতাশা ও উদ্বেগের ঝুঁকি বাড়িয়ে তুলতে পারে। এছাড়া, অতিরিক্ত সামাজিক মাধ্যম ব্যবহার শিশু-কিশোরদের ঘুমের ওপর বিরূপ প্রভাব ফেলতে পারে। যা তাদের মানসিক স্বাস্থ্যে আরও ক্ষতিকর প্রভাব ফেলতে পারে।

এসব কারণে স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা সামাজিক মাধ্যমের ক্ষতিকর প্রভাব নিয়ে বারবার কথা বলেছেন এবং শিশু-কিশোরদের জন্য আদর্শ স্ক্রিন টাইম মেনে চলারও পরামর্শ দিয়েছেন।

মানসিক স্বাস্থ্য ঝুঁকি বৃদ্ধি করে

যেসব শিশু প্রচুর স্ক্রিন টাইম কাটায় ও কোনো নিয়ন্ত্রণ ছাড়াই সামাজিক মাধ্যম ব্যবহার করে, তারা মারাত্মক মানসিক সমস্যার মুখোমুখি হতে পারে। সাধারণত এই শিশুরা হিংস্র বা বিরক্তিকর কনটেন্ট দেখে, যা তাদের মানসিক সুস্থতাকে ক্ষতিগ্রস্ত করে। এটি অনেক বড় একটি উদ্বেগ, কারণ শিশুরা স্ট্রেস, হতাশাগ্রস্ত, হতাশ ও একাকীবোধ করতে পারে। এছাড়া, অনেকে বিশেষ করে কিশোরীরা তাদের পছন্দের কোনো সেলেব্রিটিকে অনুকরণ করার চেষ্টা করে। যা তাদের জীবনযাপনে বিরূপ প্রভাব ফেলতে পারে। এমন অনেক শিশু আছে যারা ২৪/৭ স্মার্টফোনের দিকে ঝুঁকে থাকে। সেক্ষেত্রে বাবা-মায়ের দায়িত্ব হলো, শিশুরা যেন কোনোভাবেই নির্দিষ্ট স্ক্রিন টাইম অতিক্রম না করে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, শিশুদের জন্য প্রতিদিন প্রায় ১ ঘণ্টা স্ক্রিন টাইম আদর্শ। ভারতের পুনের মাদারহুড হাসপাতালের কনসালট্যান্ট নিওনেটোলজিস্ট এবং শিশু রোগ বিশেষজ্ঞ ডা. জগদীশ কাঠওয়াতে বলেন, শিশুরা যেন অনলাইনে শিক্ষামূলক বিষয়বস্তু দেখে তা অভিভাবকদের নিশ্চিত হতে হবে।

প্রতিদিন কয়েক মিনিট স্ক্রিন টাইম

মুম্বাইয়ের এনএইচ এসআরসিসি চিলড্রেনস হাসপাতালের কনসালট্যান্ট ডা. সাচি পান্ডিয়া বলেন, আমরা সাপ্তাহিক ছুটির দিনের চেয়ে অন্যান্য দিনের জন্য মাত্র প্রতিদিন কয়েক মিনিট স্ক্রিন টাইম দেওয়ার পরামর্শ দিই। শিশু-কিশোরদের অনেক সময় ধরে সামাজিক মাধ্যম বা অনলাইনে সময় কাটাতে চায়। কিন্তু, হঠাৎ করে স্ক্রিন টাইম বাবা-মা সীমাবদ্ধ করার চেষ্টা করলে তারও বিরূপ প্রভাব আছে। তারা তখন কথা নাও শুনতে পারে, কিংবা জেদি হয়ে উঠতে পারে। কিন্তু, কঠোর হওয়ার পরিবর্তে সীমা নির্ধারণের কিছু পরিমাণ স্ক্রিন টাইমের অনুমতি দেন, তাহলে শিশু-কিশোরদের কাছে এই বার্তা যায় যে, তারা স্ক্রিন থেকে বঞ্চিত হচ্ছে না। তাই বাবা-মায়ের এমন পজিটিভ আচরণ তার স্ক্রিন টাইমের আকাঙ্ক্ষা কমাতে সহায়তা করবে।

সাইবার বুলিং, বিষণ্নতা, ঘুমের ঘাটতি

শিশু-কিশোরদের জন্য সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ব্যবহারের কিছু উপকারিতা থাকলেও অসুবিধা কিন্তু কম নয়। এই প্লাটফর্মগুলো শিশুদের সৃজনশীল হতে সহায়তা করছে। সামাজিক মাধ্যম শিশুদের ভার্চুয়াল নেটওয়ার্কিংয়ের ভালো সুযোগ করে দেয়। কিন্তু, অতিরিক্ত ব্যবহার বা আসক্তি স্বাস্থ্যের ওপর ক্ষতিকর প্রভাব ফেলতে পারে। সামাজিক মাধ্যমে অত্যধিক সময় ব্যয়ের কারণে তারা বাস্তব জীবন থেকে কিছুটা বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ে। যা তাদের মধ্যে হতাশা, উদ্বেগ, চাপ বাড়াতে পারে। এমনকি তারা সাইবার বুলিংয়ের শিকার হতে পারে। এসব সমস্যা তাদের ঘুমের ঘাটতি বা অপর্যাপ্ত ঘুমের কারণ হতে পারে।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, শিশুরা যখন সারাক্ষণ সামাজিক প্লাটফর্মগুলোতে আসক্ত থাকে, তখন তারা শারীরিকভাবে কম সক্রিয় থাকে। ফলে, তাদের মধ্যে কিছু স্বাস্থ্য সমস্যা দেখা দিতে পারে।

শিশুদের জন্য আদর্শ স্ক্রিন টাইম

বিশেষজ্ঞরা বিভিন্ন বয়সের শিশু-কিশোরদের জন্য নিম্নলিখিত স্ক্রিন টাইমের পরামর্শ দেন-

১. দুই বছরের কম বয়সীদের ভিডিও চ্যাটিং ব্যতীত স্ক্রিন টাইম শূন্য হওয়া উচিত।

২. ২-৫ বছর বয়সীদের জন্য এক ঘণ্টা স্ক্রিন টাইম ঠিক আছে।

৩. ৫ বছরের বেশি বয়সীদের প্রতিদিন ২ ঘণ্টা বিনোদনমূলক স্ক্রিন টাইম যথেষ্ট।

Comments

The Daily Star  | English

‘No room for politics under AL name, ideology’

Nahid Islam, adviser to the interim government, spoke with The Daily Star on the nation's key challenges and the way forward.

14h ago