ত্বক ও চুলের ওপর মানসিক চাপের প্রভাব কতটা

ছবি: সংগৃহীত

ঘরে-বাইরে প্রতিনিয়ত কাজের চাপ, সম্পর্কের টানাপোড়েন বা শারীরিক অসুস্থতা, নানা কারণেই বাড়তে পারে মানসিক চাপ বা স্ট্রেস। দীর্ঘ সময় মানসিক চাপে থাকলে তা যেমন মানসিক স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর, তেমন শারীরিক স্বাস্থ্যেও এর নেতিবাচক প্রভাব পড়ে।

বিভিন্ন গবেষণায় দেখা গেছে, দীর্ঘদিন মানসিক চাপে ভুগতে থাকলে তা ত্বক ও চুলের ওপর মারাত্মক ক্ষতিকর প্রভাব ফেলতে পারে।  

ত্বকের লাবণ্য কমে যাওয়া, ত্বকে বয়সের ছাপ দ্রুত পড়ে যাওয়া, চুল পড়া এই সবই হতে পারে মানসিক চাপ থেকে। অবসাদ, মন খারাপ, ক্লান্তি থেকে হতে পারে গা-হাত-পায়ে ব্যাথা, মাইগ্রেনের সমস্যা এবং ত্বক ও চুলের সমস্যা।

নর্দার্ন ইন্টারন্যাশনাল মেডিক্যাল কলেজ ও হাসপাতালের ত্বক ও যৌনরোগ বিভাগের সহকারী অধ্যাপক ডাক্তার তাসনীম খানের কাছ থেকে চলুন জেনে নিই মানসিক চাপের প্রভাবে আমাদের ত্বক এবং চুলে কী ধরনের ক্ষতি হতে পারে –

ত্বকের ওপর মানসিক চাপের প্রভাব

● অতিরিক্ত মানসিক চাপের কারণে শরীর ট্রেস হরমোন নিসঃরণ করে। যার ফলে প্রাপ্তবয়স্ক মানুষের ত্বকে তেল উৎপাদন বেড়ে যায়। যারা দীর্ঘদিন ধরে মানসিক চাপে ভুগছেন তাদের হরমোনাল ইমব্যালেন্সের কারণে ব্রন হতে পারে৷

● স্ট্রেসের কারণে শরীরে কোলাজেন হরমোনের (যে হরমোন ত্বক টানটান রাখতে সহায়তা করে) ব্রেক ডাউন হয়। ফলে ত্বক কুঁচকে যাওয়া বা বলিরেখা পড়ার মতো সমস্যা দেখা দিতে পারে।

● অতিরিক্ত মানসিক চাপের কারণে শরীরে কর্টিসল নামক হরমোন বেড়ে যায়। ফলে শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কমে যায়। এর ফলে ত্বকে চুলকানিসহ অন্যান্য চর্মরোগ দেখা দিতে পারে।

● মানসিক চাপের ফলে বেশিরভাগ মানুষের ঘুমের সমস্যা দেখা দেয়। রাতে ভালো ঘুম না হলে চোখের নিচে কালি পড়ে এবং ত্বকের স্বাভাবিক লাবণ্য কমে যায়।

● অতিরিক্ত মানসিক চাপের ফলে ত্বক মলিন ও নিষ্প্রাণ হয়ে যেতে পারে। যার কারণে বয়সের আগেই ত্বকে বয়সের ছাপ পড়ার একটা প্রবণতা তৈরি হয়৷

● মানসিক চাপের কারণে অনেকেই খাওয়া-দাওয়ার ব্যাপারে উদাসীন হয়ে পড়েন। পর্যাপ্ত পানি পান করেন না। ফলে ত্বকে ক্ষতিকর প্রভাব পড়ে।

চুলের ওপর মানসিক স্বাস্থ্যের প্রভাব

● দীর্ঘকাল প্রচণ্ড মানসিক চাপে ভুগতে থাকলে ২-৩ মাস পর থেকে খেয়াল করবেন, আপনার অতিরিক্ত চুল পড়ছে, চুল পাতলা হয়ে যাচ্ছে বা নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। অতিরিক্ত স্ট্রেস চুল পড়ার অন্যতম কারণ। এটা শারীরিক বা মানসিক যেকোনো ধরনের স্ট্রেসের কারণেই হতে পারে। যেমন গর্ভাবস্থায়, কোনো পরীক্ষার আগে সেটা নিয়ে অতিরিক্ত উদ্বিগ্ন থাকলে, পারিবারিক কোনো বিষয় নিয়ে চিন্তিত থাকলেও প্রচুর চুল পড়তে পারে।  

● মানসিক অবসাদে ভুগতে থাকলে বেশিরভাগ সময় মানুষ নিজের ব্যাপারে উদাসীন থাকেন। নিজের বা নিজের শরীরের যত্ন নিতে ভুলে যান। হয়তো চুলের যত্ন নেন না ঠিকমতো অনেকদিন ধরে। ফলে চুল পড়তে পারে বা ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে৷

● এ ছাড়া অতিরিক্ত মানসিক চাপের ফলে শরীরে অতিমাত্রায় হরমোন নিসঃরিত হয়। ফলে অল্প বয়সে চুল পেকে যায়।

কীভাবে কমাবেন মানসিক চাপ?

বহুদিন ধরে মানসিক চাপে ভুগতে থাকার ফলে ত্বক ও চুলের যে ক্ষতি হয়, তার একমাত্র সমাধান মানসিক চাপমুক্ত থাকা। নিজের মানসিক ও শারীরিক স্বাস্থ্যের যত্ন নেওয়া। কারণ মন ও শরীর একে অপরের পরিপূরক। তাই শরীরকে ঠিক রাখতে হলে অবশ্যই আপনার মনের যত্ন নিতে হবে।

চাপমুক্ত থাকার জন্য ব্যায়াম করতে পারেন। প্রতিদিন অন্তত ৭-৮ ঘণ্টা ঘুমানোর চেষ্টা করা উচিত। স্বাস্থ্যকর খাদ্যাভ্যাস গড়ে তুলুন এবং পর্যাপ্ত পানি পান করুন।

মানসিক চাপ যদি নিজে কোনোভাবেই কমাতে না পারেন তাহলে অবশ্যই একজন বিশেষজ্ঞের পরামর্শ নিতে হবে।

 

Comments

The Daily Star  | English

Made with US cotton? Pay less at US customs

US customs will apply a tariff rate only to the non-American portion of a product's value

10h ago