কাজী নজরুল ইসলাম: অসুস্থতা, ভাতা ও চিকিৎসা
১৯৩৯ সাল। পক্ষাঘাতে আক্রান্ত হলেন বিদ্রোহী কবি কাজী নজরুল ইসলামের স্ত্রী প্রমীলা। স্ত্রীর অসুস্থতায় ভীষণ ভেঙে পড়েছিলেন নজরুল। রোগ সারানোর সর্বোচ্চ চেষ্টা করেছিলেন, বাদ দেননি কোনো চিকিৎসা। নিজের প্রকাশিত বই আর গ্রামোফোন কোম্পানি থেকে প্রাপ্ত রয়্যালিটি ও সম্মানী কবি দেদারসে খরচ করেছেন স্ত্রীর চিকিৎসার পেছনে।
অ্যালোপ্যাথি, হোমিওপ্যাথি চিকিৎসা তো বটেই, দেব-দেবী, ভূত-প্রেত, সাধু-সন্ন্যাসীর মন্দির, পীর-ফকির, তাবিজ-কবজ, পানিপড়া সব দিয়েই নজরুল প্রমীলাকে সুস্থ করার জন্য প্রচেষ্টা চালিয়েছিলেন।
কবি জসীম উদদীনের বিবরণী থেকে জানা যায়, এক দরবেশের পরামর্শে নজরুল কচুরিপানা ভর্তি এক পচা ডোবায় সন্ধ্যা থেকে সকাল পর্যন্ত শরীর নিমজ্জিত রেখে দরবেশের তাবিজ নিয়ে প্রমীলাকে দিয়েছেন। কিন্তু কাজের কাজ কিছুই হয়নি। সুস্থ হননি প্রমীলা।
১৯৪১ সালে নজরুল সত্যযুগ পত্রিকার প্রধান সম্পাদক হিসেবে কর্মরত ছিলেন। পত্রিকার সম্পাদক ছিলেন সাহিত্যিক আবুল মনসুর আহমেদ। স্ত্রীর চিকিৎসার কারণে তৈরি হওয়া অর্থনৈতিক দুরাবস্থার মধ্যে সাংবাদিকতার পাশাপাশি নজরুল তখন বেতারেও কাজ করছেন।
সে বছরের ৬ এপ্রিল মুসলিম ইন্সটিটিউট হলে আয়োজিত বঙ্গীয় মুসলমান সাহিত্য সমিতির রজত-জয়ন্তীর অনুষ্ঠানে সভাপতি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন নজরুল। সভাপতির বক্তব্যে বলেছিলেন, 'রবীন্দ্রনাথ আমায় প্রায়ই বলতেন, ''দ্যাখ উন্মাদ, তোর জীবনে শেলীর মত, কীটসের মত খুব বড় একটা ট্র্যাজেডি আছে, তুই প্রস্তুত হ"।'
নজরুল কি ভেতরে ভেতরে বুঝতে পেরেছিলেন সামনেই তার জীবনে বয়ে যাবে এক প্রবল ঝড়। যে ঝড় থামিয়ে দেবে তার লেখার গতি, যে ঝড় কেড়ে নেবে তার বাকশক্তি?
নজরুল তার বক্তব্যের শেষে বলেছিলেন, 'যেদিন আমি চলে যাব, সেদিন হয়তোবা বড় বড় সভা হবে। কত প্রশংসা, কত কবিতা বের হবে হয়তো আমার নামে। দেশপ্রেমী, ত্যাগী, বীর, বিদ্রোহী- বিশেষণের পর বিশেষণ, টেবিল ভেঙে ফেলবে থাপ্পড় মেরে, বক্তার পর বক্তা। এই অসুন্দরের শ্রদ্ধা নিবেদনের শ্রাদ্ধ দিনে বন্ধু তুমি যেন যেও না।'
'তোমাদের পানে চাহিয়া বন্ধু আর আমি জাগিব না,
কোলাহল করে সারা দিনমান কারো ধ্যান ভাঙিব না।
নিশ্চল নিশ্চুপ আপনার মনে পুড়িব একাকী গন্ধবিধুর ধূপ'
নজরুলের কথা জড়িয়ে যাওয়ার বিষয়টি প্রথম খেয়াল করেছিলেন সুরকার নিতাই ঘটক। ১৯৪২ সালের মে মাসে রেডিওতে এক অনুষ্ঠানের রেকর্ডিংয়ের সময় নজরুলের কথা জড়িয়ে আসছিল। বিষয়টি খেয়াল করেছিলেন নজরুলের স্ত্রী প্রমীলা ও শাশুড়ি গিরিবালাও। চোখ এড়ায়নি কবির প্রতিবেশী বরদাপ্রসাদ গুপ্তেরও। কিন্তু এটিকে তেমন গুরুত্ব দেননি নজরুল।
১৯৪২ সালের ৯ জুলাই। দিনটি ছিল বৃহস্পতিবার। রাতে অল ইন্ডিয়া রেডিওর কলকাতা বেতারকেন্দ্রে শিশুদের এক অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন নজরুল। অনুষ্ঠানের এক পর্যায়ে হঠাৎ তার ঠোঁট কেঁপে উঠল। আড়ষ্ট হয়ে উঠল জিভ। তীব্র চেষ্টা সত্ত্বেও কোনো কথা বলতে পারলেন না। এমন সময় নজরুলের পাশে ছিলেন বন্ধু প্রখ্যাত গীতিকার ও শিশু সাহিত্যিক নৃপেন্দ্রকৃষ্ণ চট্টোপাধ্যায়। রাত ১০টার দিকে নৃপেন্দ্রকৃষ্ণ চট্টোপাধ্যায়ই নজরুলকে বাড়ি পৌঁছে দিলেন। সেদিন রাতে অসুস্থতার কারণে কিছুই খেতে পারেননি কবি। রাতে ঘুমও হয়নি তার।
অসুস্থ অবস্থাতেই নজরুল পরদিন সকালে বন্ধু জুলফিকার হায়দারকে একটি চিঠিতে লিখেছিলেন,
`প্রিয় হায়দার, তুমি এখনই চলে এস। অমলেন্দুকে আজ পুলিশে অ্যারেস্ট করেছে। আমি কাল থেকে অসুস্থ।- নজরুল।'
সেই চিঠিটিতে তারিখের জায়গায় তিনি লিখেছিলেন ৯ জুলাই। যদিও তারিখ থাকার কথা ছিল ১০ জুলাই।
আসলে অসুস্থতার কারণে নজরুলের মাঝে তখন একটি ঘোর কাজ করছিল। নবযুগ পত্রিকার সম্পাদকমণ্ডলীর সদস্য অমলেন্দু দাশগুপ্তকে সেদিন রাতে পুলিশ আটকও করেনি। তা ছিল নিছকই নজরুলের কল্পনা।
১০ জুলাই সকালে অসুস্থ কবিকে প্রথম দেখেছিলেন ডা. ডিএল সরকার। এই চিকিৎসক ছিলেন নজরুলের তৎকালীন বাড়িওয়ালা। তিনিই নজরুলকে প্রাথমিক চিকিৎসা দেন। কিন্তু তিনি অ্যালোপ্যাথির চিকিৎসার বদলে হোমিওপ্যাথি চিকিৎসা শুরু করেন।
নজরুল ডা. সরকারকে বলেছিলেন, 'আমার হাত কাঁপছে।' তবে তিনি তখনো পুরোপুরি গুরুতর অসুস্থ হননি। তখনও অনেকটাই সবাক। এভাবেই টানা ১৫ দিন চিকিৎসা চলেছিল নজরুলের। কোনোদিন শরীরের অবস্থা ভালো তো, কোনোদিন খারাপ। এরমধ্যে বেশ কয়েকজনকে চিঠি লিখেছেন। সেসব চিঠিতেও ছিল অসংলগ্ন কথাবার্তা ও আচরণ।
নজরুলকে যখন পরবর্তীতে রাঁচি মানসিক হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছিল তখন চিকিৎসকরা বলেছিলেন, অসুস্থতার প্রথম দিকে এই ধরনের রোগীরা সন্দেহ বাতিকগ্রস্ত হয়ে থাকে। যার প্রমাণ পাওয়া যায় বন্ধু জুলফিকার হায়দারকে লেখা নজরুলের এক চিঠিতে।
কবিরাজি কায়দায় নজরুলের চিকিৎসা করেছিলেন এক বন্ধুপ্রতিম কবিরাজ বিমলানন্দ তর্কতীর্থ। সেই বছরের ২০ জুলাই নজরুলকে চিকিৎসা ও বিশ্রামের জন্য নিয়ে যাওয়া হয় বিহারের মধুপুরে।
কিন্তু সেখানেও তার অবস্থার কোনো উন্নতি হয়নি। শেষমেশ ৬৪ দিন পর নজরুল পরিবারসহ কলকাতায় ফিরে আসেন।
সে বছরই কলকাতায় নজরুলের চিকিৎসার জন্য গঠন করা হয় নজরুল নিরাময় সমিতি। সমিতির সাধারণ সম্পাদক ছিলেন কাজী আবদুল ওয়াদুদ।
কিন্তু কয়েক সপ্তাহের চিকিৎসার পরও নজরুলের কোনো উন্নতি হয়নি। এ সময় তার মানসিক সমস্যা চরম আকার ধারণ করে। তাকে নিয়ে যাওয়া হয় লুম্বিনি পার্ক হাসপাতালে। সেখানে ডা. গিরীন্দ্রশেখর বসু ও ডা. নগেন্দ্রনাথ দের অধীনে তাকে চিকিৎসা দেওয়া হয়। ডা. গিরীন্দ্রশেখর বসু তখন ইন্ডিয়ান সাইকোঅ্যানালিটিক সোসাইটির সভাপতি হিসেবে দায়িত্ব পালন করছিলেন। কিন্তু সেখানেও কোনো উন্নতি হয়নি নজরুলের। ১৯৪৩ সালের জানুয়ারি মাসে তাকে লুম্বিনি পার্ক হাসপাতাল থেকে বাড়িতে নিয়ে যাওয়া হয়।
তখন উন্নত চিকিৎসার জন্য নজরুলকে ইউরোপে পাঠানোর উদ্যোগ নেওয়া হয়। কিন্তু দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ চলায় তা আর সম্ভব হয়নি।
সে বছরেই নজরুলের চিকিৎসা খরচ ও তার পরিবারের ভরণপোষণের সাহায্যার্থে তৎকালীন অর্থমন্ত্রী শ্যামাপ্রসাদ মুখার্জীকে সভাপতি ও সজনীকান্ত দাসকে সম্পাদক করে গঠিত হয় নজরুল এইড ফান্ড।
এই কমিটির মাধ্যমে বিভিন্ন তহবিল থেকে নজরুলের জন্য তহবিল সংগ্রহ করা হয়। এই তহবিল থেকে তার পরিবারকে মাসিক ২০০ টাকা করে ভাতা প্রদান করা হতো।
কিন্তু এক পর্যায়ে ভাতা বন্ধ হয়ে যায়। এর সবচেয়ে বড় কারণ ছিলেন নজরুলের শাশুড়ি গিরিবালা দেবী। নজরুল এইড ফান্ডে সজনীকান্ত দাস যুক্ত থাকায় আপত্তি জানিয়েছিলেন গিরিবালা দেবী। তিনি কমরেড মুজফ্ফর আহমদের কাছে নতুন একটি ফান্ড গঠনের দাবি জানান। মুজফ্ফর আহমদ জানিয়েছিলেন, একটি ফান্ড থাকা অবস্থায় তার পক্ষে আরেকটি ফান্ড গঠন করা সম্ভব হবে না। তখন গিরিবালা শ্যামাপ্রসাদ মুখার্জীকে বিভিন্ন বিষয়ে আপত্তি জানালে এক পর্যায়ে বন্ধ হয়ে যায় কমিটি।
এ ছাড়া নজরুলের চিকিৎসা সাহায্যার্থে ভারতবর্ষের বিভিন্ন স্থানে একাধিক তহবিল গঠন করা হয়েছিল। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য ১৯৪৪ সালে কলকাতার কলেজ স্কয়ারে আয়োজিত ফ্যাসিবাদ বিরোধী সভা। সভা থেকে নজরুল ফান্ডে ১০০ টাকা সাহায্যের ঘোষণা দেওয়া হয়েছিল। সভায় উপস্থিত ছিলেন তারাশঙ্কর বন্দ্যোপাধ্যায় এবং মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়।
এ সময় কবি নজরুলের জন্য এগিয়ে আসে বাংলার সরকার। মাসিক ২০০ টাকা হারে নজরুলকে দেওয়া হয় সাহিত্যিক ভাতা। এই ভাতা মঞ্জুরের ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছিলেন প্রাদেশিক মুসলিম লীগের প্রচার সম্পাদক এবং বঙ্গীয় আইন সভার সদস্য হবীবুল্লাহ বাহার চৌধুরী।
ভাতা চলেছিল ১৯৪৭ সালে দেশভাগের আগ পর্যন্ত। দেশভাগের কারণে পরে বন্ধ হয়ে যায় সরকারের এই ভাতা।
এদিকে ১৯৪৬ সালে বিভিন্ন কারণে নিরুদ্দেশ হয়ে যান গিরিবালা দেবী। তখন নজরুলের পাশে ছিলেন কবি সুফি জুলফিকার হায়দার। জুলফিকার হায়দার কবিকে দেখভালের সর্বোচ্চ চেষ্টা চালিয়েছেন।
সে বছরের অক্টোবর মাসে ফেনী কলেজের অধ্যাপক নাজমুল করিম আজাদ পত্রিকায় আকুল আবেদনসহ একটি চিঠি পাঠান। যেখানে নজরুলের অর্থনৈতিক অবস্থার বর্ণনা এবং চিকিৎসার জন্য পূর্ববঙ্গ সরকারকে এগিয়ে আসার অনুরোধ জানানো হয়। সেই চিঠির ভাষ্য ছিল এমন,
`যে কবি বাঙ্গালী জাতিকে এক যুগ ধরে স্বাধীনতার গান শুনিয়েছেন, যে কবি জাতিকে স্বাধীনতা সংগ্রামে উদ্বুদ্ধ করেছেন; তাকে আজ যে আর্থিক দৈন্যের সঙ্গে লড়াই করতে হচ্ছে। এটি যে কোনো স্বাধীন রাষ্ট্রের পক্ষে লজ্জাজনক ব্যাপার। বাঙ্গালী সরকার নামমাত্র যে ভাতা কবিকে দিতেন তা কোনো অজ্ঞাত কারণে আজ বন্ধ। আমরা পূর্ববঙ্গ সরকারকে অনুরোধ করছি, তারা শীঘ্রই কবির জীবন নির্বাহের সব দায়িত্বগ্রহণ করুন।'
এই চিঠির পাশাপাশি অধ্যাপক নাজমুল করিম পূর্ববঙ্গ সরকারের স্বাস্থ্যমন্ত্রী হবীবুল্লাহ বাহার চৌধুরী ও শিক্ষামন্ত্রী আবদুল হামিদকে পৃথক চিঠি পাঠিয়ে নজরুলকে ভাতা প্রদানের অনুরোধ করেন।
এরপর নজরুলের শারীরিক অবস্থা বিবেচনা করে নভেম্বর মাসেই পূর্ব পাকিস্তানের পূর্ববঙ্গ সরকার ঘোষণা দেয়, নজরুলকে মাসিক ২০০ টাকা হারে ভাতা প্রদান করা হবে। একই ঘোষণা দিয়ে ভারতের পশ্চিমবঙ্গ সরকার বলে, নজরুলের ভাতা বন্ধ করার কোনো ইচ্ছাই তাদের নেই।
পূর্ববঙ্গ সরকার কলকাতার পাকিস্তানি উপ- দূতাবাসের মাধ্যমে কবিকে ভাতা দিত। এ ছাড়া এ সময় বিভিন্ন সামাজিক সংগঠন নজরুলের চিকিৎসা ও ভরণপোষণের সাহায্যার্থে এগিয়ে এসেছিল।
১৯৫২ সালের জুন মাসে নজরুলের চিকিৎসার সাহায্যার্থে বিশিষ্ট নাগরিকদের নিয়ে গঠিত হয় 'নজরুল নিরাময় সমিতি'। সেই সমিতিতে ছিলেন তারাশঙ্কর বন্দ্যোপাধ্যায়, সজনীকান্ত দাস, কাজী আবদুল ওদুদ, অতুল গুপ্ত প্রমুখ। সেই সমিতির উদ্যোগেই ওই বছরের জুলাই মাসে নজরুলকে রাঁচির মানসিক হসপাতালে পাঠানো হয়। ওইবার হাসপাতালে ৪ মাস ছিলেন কবি। হাসপাতালে তাকে রাখা হয় ইউরোপিয়ান কটেজে। কিন্তু দীর্ঘ ৪ মাসেও তার কোনো রোগ নির্ণয় করতে পারেননি চিকিৎসকরা।
অবশেষে ১৯৫৩ সালের এপ্রিল মাসে নজরুলকে উন্নত চিকিৎসার জন্য দেশের বাইরে পাঠানোর উদ্যোগ নেয় নজরুল নিরাময় সমিতি। সেই অনুযায়ী গঠন করা হয় মেডিকেল বোর্ডও। ওই বছরের মে মাসে স্ত্রী প্রমীলা দেবী, কনিষ্ঠ পুত্র কাজী অনিরুদ্ধসহ রকিবউদ্দিন আহমেদ ও নজরুলকে লন্ডনে পাঠানো হয়। ৮ জুন তারা লন্ডনে পৌঁছান।
লন্ডনের হাসপাতালে নজরুলের চিকিৎসায় ৩ প্রখ্যাত চিকিৎসক রাসেল ব্রেইন, ম্যাককিংকা ও উইলিয়াম সারগ্যান্টকে নিয়ে গঠিত হয় মেডিকেল বোর্ড। মেডিকেল বোর্ড শেষ পর্যন্ত নজরুলের রোগ নির্ণয় করতে পারে। তার মস্তিষ্কে এয়ার এনসেফালোগ্রাফি এক্সরে করে দেখা যায়, মস্তিষ্কের ফ্রন্টাল লোব সঙ্কুচিত হয়ে গেছে। চিকিৎসকরা জানান, নজরুলের মস্তিষ্কে প্যারালেটিক অ্যাটাক হয়েছে। এই রোগটি দুরারোগ্য।
ম্যাককিংকা এ সময় নজরুলের মাথায় ম্যাককিস্ক সার্জারি করার বিষয়ে অভিমত দিলেও ডা. রাসেল ব্রেইন অপারেশনের বিরোধিতা করেন।
তখন নজরুলের চিকিৎসার রিপোর্ট পাঠানো হয় অস্ট্রিয়ার ভিয়েনা, জার্মানির বনসহ ইউরোপের বিখ্যাত চিকিৎসকদের কাছে। জার্মানির বন বিশ্ববিদ্যালয়ের নিউরো সার্জন অধ্যাপক রোঁয়েন্টগেনসহ বেশ কয়েকজন চিকিৎসকই ম্যাককিস্ক অপারেশনের ব্যাপারে দ্বিমত পোষণ করেন।
সে বছরের ডিসেম্বর মাসে নজরুলকে চিকিৎসার জন্য নিয়ে যাওয়া হয় ভিয়েনাতে। সেখানে বিখ্যাত স্নায়ু চিকিৎসক ডা. হানস হফের অধীনে চিকিৎসাধীন ছিলেন নজরুল। ৯ ডিসেম্বর নজরুলের মস্তিষ্কে সেরিব্রাল অ্যানজিগ্রাফি এক্সরে করে বলা হয়, নজরুল 'পিকস ডিজিজ' নামের নিউরনঘটিত বিরল এক মস্তিষ্কের রোগে ভুগছেন। এই রোগের কারণে মস্তিষ্কের সম্মুখ ও পার্শ্ববর্তী অংশগুলো সঙ্কুচিত হয়ে যায়।
ডা. হফ বলেন, 'রোগটি এখন এতদূর অগ্রসর হয়েছে যে এই পরিস্থিতিতে কোনো চিকিৎসা বর্তমান পৃথিবীতে নেই।' এ সময় কবির রিপোর্ট জার্মানি ও সোভিয়েত ইউনিয়নেও পাঠানো হয়। সেখানকার চিকিৎসকদের এ ব্যাপারে একই অভিমত ছিল। অর্থাৎ নজরুলের চিকিৎসা অসম্ভব।
লন্ডনের চিকিৎসকরা নজরুলের চিকিৎসার জন্য মোটা অঙ্কের ফি নিলেও ইউরোপের চিকিৎসকরা কোনো ফি গ্রহণ করেননি। ১৯৫৩ সালের ১৪ ডিসেম্বর এক রকম বিনা চিকিৎসায় রোম থেকে কলকাতার উদ্দেশে যাত্রা করেন তিনি। অসুস্থ হওয়ার পর জীবনের বাকি ৩৪ বছর ১ মাস ২০ দিন নির্বাক অবস্থাতেই ছিলেন কাজী নজরুল ইসলাম।
তথ্যসূত্র:
কবি নজরুলের অসুস্থতা তর্ক-বিতর্ক ও দলিলপত্র/ ড. ইসরাইল খান
নজরুল জীবনের ট্র্যাজিডি/ শেখ মুহম্মদ নূরুল ইসলাম
দৈনিক আজাদ/ ৫ অক্টোবর ও ১৯ নভেম্বর ১৯৪৭
Comments