এখনো নিয়ন্ত্রণের বাইরে ছাত্রলীগ

কিন্তু ২ মাস পরে এসে দেখা যাচ্ছে, তার সেই প্রতিশ্রুতি কেবল প্রতিশ্রুতিই রয়ে গেছে। কারণ, এ সময়টাতে নানা অপরাধ সংশ্লিষ্ট বিষয়ে সংবাদের শিরোনাম হয়েছে এই ছাত্র সংগঠনটি।

বাংলাদেশ ছাত্রলীগ তার অতীতের গৌরব ফিরে পাবে, গত বছরের ডিসেম্বরে ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক হওয়ার পর শেখ ওয়ালী আসিফ ইনান এমন প্রতিশ্রুতিই দিয়েছিলেন।

নতুন কেন্দ্রীয় কমিটি ঘোষণার কয়েক দিন পর একটি জাতীয় দৈনিককে দেওয়া সাক্ষাৎকারে তিনি বলেন, 'সংগঠনকে সব ধরনের বিতর্কমুক্ত করতে আমরা কাজ করব।'

কিন্তু ২ মাস পরে এসে দেখা যাচ্ছে, তার সেই প্রতিশ্রুতি কেবল প্রতিশ্রুতিই রয়ে গেছে। কারণ, এ সময়টাতে নানা অপরাধ সংশ্লিষ্ট বিষয়ে সংবাদের শিরোনাম হয়েছে এই ছাত্র সংগঠনটি।

বছরের পর বছর ধরে চাঁদাবাজি, ছিনতাই থেকে শুরু করে শিক্ষার্থী এমনকি শিক্ষকদের ওপর হামলার যে অভিযোগ তাদের বিরুদ্ধে আসছে, তা এখনো অব্যাহত রয়েছে। অভ্যন্তরীণ কোন্দল এবং অন্যান্য ছাত্র সংগঠনের কর্মীদের ওপর নিপীড়নও আগের মতোই চলছে।

নতুন কমিটি গঠনের পর অনেকেই আশা করেছিলেন, ছাত্র সংগঠনটি ধীরে ধীরে অপরাধমূলক কার্যক্রমের অভিযোগ থেকে নিজেদের দূরে নিয়ে যেতে পারবে।

এ লক্ষ্যে নতুন নেতৃত্ব সারাদেশে অপকর্মের সঙ্গে জড়িত ২৩ জন নেতাকর্মীর বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণসহ বেশ কিছু উদ্যোগও নিয়েছে।

যেমন: চাঁদাবাজির অভিযোগে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অমর একুশে হল ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক ইমদাদুল হাসান সোহাগকে দায়িত্ব থেকে অব্যাহতি দেওয়া হয়েছে।

কিন্তু অভিযুক্ত নেতাকর্মীদের দমন করতে এবং অতীতের গৌরব ফিরিয়ে আনতে এই উদ্যোগগুলো অপর্যাপ্ত বলে মনে হচ্ছে।

সংবাদমাধ্যমের প্রতিবেদন অনুযায়ী, গত বছরের ১৮ ডিসেম্বর নতুন কেন্দ্রীয় কমিটি ঘোষণার পর থেকে ১৩টি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা বিভিন্ন ধরনের অন্তত ২৫টি অপরাধমূলক কর্মকাণ্ডে জড়িত ছিলেন।

এর মধ্যে আবাসিক হলগুলোতে শিক্ষার্থীদের নির্যাতন, শিক্ষকদের লাঞ্ছিত করা ও আসন দখলের ঘটনা সবচেয়ে বেশি ঘটে।

এ ছাড়া, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়সহ বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে চাঁদাবাজি ও আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে দলের নেতাকর্মীদের মধ্যে অভ্যন্তরীণ সংঘর্ষের ঘটনাও ঘটেছে।

সম্প্রতি ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের (ইবি) ছাত্রাবাসে ২ ছাত্রলীগ নেত্রী এক ছাত্রীকে নির্যাতন করার ঘটনায় ব্যাপক নিন্দার ঝড় ওঠে এবং বিষয়টি হাইকোর্ট পর্যন্ত গড়ায়।

ইবির ওই ভুক্তভোগী ছাত্রী ফুলপরী খাতুনের দায়ের করা অভিযোগে বলা হয়, ইবি ছাত্রলীগের সহ-সভাপতি সানজিদা চৌধুরী অন্তরা ও কর্মী তাবাসসুম ইসলাম প্রায় ৪ ঘণ্টা ধরে তাকে নির্যাতন ও লাঞ্ছিত করেন।

এর আগে গত ৬ ফেব্রুয়ারি বুয়েট ক্যাম্পাসে এক লরি চালককে পিটিয়ে ১৫ হাজার টাকা ছিনিয়ে নিয়ে পালানোর চেষ্টা করলে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের ৩ কর্মীকে আটক করে পুলিশ।

পরে তাদের সংগঠন ও বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বহিষ্কার করা হয়।

রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে বেড়াতে আসা এক শিক্ষার্থীকে অপহরণ করে মুক্তিপণ দাবির অভিযোগে গত ১১ ফেব্রুয়ারি রাজশাহী মহানগর ছাত্রলীগের নেতা পারভেজ আলী হৃদয়কে  গ্রেপ্তার করে পুলিশ।

গত ১২ ফেব্রুয়ারি রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের প্রথম বর্ষের শিক্ষার্থী কৃষ্ণ রায়কে হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দী হলের একটি কক্ষে আটকে রেখে নির্যাতন করার অভিযোগ ওঠে ছাত্রলীগের বিরুদ্ধে।

অভিযোগের পর ২ নেতাকর্মীকে কারণ দর্শানোর নোটিশ দিয়েছে রাবি ছাত্রলীগ।

গত জানুয়ারিতে ছাত্রলীগ কর্মীরা অন্তত ৫ জন শিক্ষার্থীকে ছাত্রাবাস থেকে বের করে আসন দখল করে নেয়।

এর আগে গত ১৯ জানুয়ারি শাহ মখদুম হলের এক আবাসিক শিক্ষার্থী চাঁদা না দেওয়ায় তাকে মারধর করে ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা।

এই ২ ঘটনায় ছাত্রলীগ কোনো ব্যবস্থা নেয়নি।

জানুয়ারির শেষ সপ্তাহে বঙ্গবাজারের একটি দোকানের মালিক চাঁদা দিতে অস্বীকৃতি জানানোয় ভাঙচুর চালায় ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা। পরে অমর একুশে হলের তৎকালীন সাধারণ সম্পাদক  ইমদাদুল হাসান সোহাগকে তার পদ থেকে অপসারণ করা হয়।

ছাত্রলীগের কর্মকাণ্ডের বিষয়ে আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক ও সাবেক ছাত্রলীগ নেতা বিএম মোজাম্মেল হক দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, 'আমরা ছাত্রলীগ নেতাদের সঙ্গে বসব এবং সংগঠনের সাম্প্রতিক কর্মকাণ্ড নিয়ে আলোচনা করব। আশা করছি, পূর্ণাঙ্গ কমিটি ঘোষণা করার সঙ্গে সঙ্গে ছাত্রলীগ আরও সুশৃঙ্খল হবে।'

এ বিষয়ে জানতে চাইলে ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক শেখ ওয়ালী আসিফ ইনান ডেইলি স্টারকে বলেন, 'ছাত্রলীগের কিছু নেতাকর্মী বিতর্কিত কর্মকাণ্ডে জড়িয়ে পড়েছে। তবে একইসঙ্গে আমরা অতীতের চেয়ে অনেক বেশি ইতিবাচক কর্মসূচি গ্রহণ করছি।'

সংক্ষেপিত: ইংরেজিতে পুরো প্রতিবেদন পড়তে ক্লিক করুন BCL stays off the leash

Comments

The Daily Star  | English

Upazila Polls: AL, BNP struggle to keep a grip on grassroots

The upazila election has exposed how neither of the two major parties, the Awami League and BNP, has full control over the grassroots leaders.

5h ago