রংপুর সিটি নির্বাচন

ইভিএমে আঙুলের ছাপ না মেলার অভিযোগ ভোটারদের

ইভিএম জটিলতায় দেখা দিয়েছে ভোটারদের দীর্ঘ লাইন। ছবি: স্টার

রংপুর সিটি করপোরেশন (রসিক) নির্বাচনে ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিনে (ইভিএম) ভোট গ্রহণের সময় আঙুলের ছাপ না মেলার অভিযোগ করেছেন ভোটারা। সকাল থেকে অন্তত ১২টি কেন্দ্রের ভোটারদের সঙ্গে কথা বলে এ অভিযোগ পাওয়া গেছে। 

আজ মঙ্গলবার দুপুর ১২টা পর্যন্ত সিটি করপোরেশনের ২৯ নম্বর ওয়ার্ডের মাহিগঞ্জ কলেজ কেন্দ্র, ২৬ নম্বর ওয়ার্ডের নূরপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্র, কেল্লাবন্দ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্র, ধাপ কেল্লাবন্দ হাফিজিয়া মাদ্রাসা এতিমখানা ও লিল্লাহ বোর্ডিং কেন্দ্র, লালকুঠী বালিকা উচ্চ বিদ্যালয় কেন্দ্র ও আল জামিয়াতুল মাদরাসা কেন্দ্রসহ অন্তত ১২টি কেন্দ্র ঘুরে ভোটারদের সঙ্গে কথা হয় দ্য ডেইলি স্টারের দুই প্রতিবেদকের। 

২৬ নম্বর ওয়ার্ডের নূরপুর এলাকার নূরপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্রের ভোটার আজগর আলী (৫৮) দ্য ডেইলি স্টারকে জানান, দুপুর ১১টায় তিনি ভোটকেন্দ্রে যান কিন্তু আঙুলের ছাপ না মেলায় ভোট দিতে পারেননি।

দুপুর ১২টা পযর্ন্ত ওই কেন্দ্রে এ রকম সমস্যার ২২ জন ভোটার পাওয়া গেছে বলে জানান প্রিজাইডিং কর্মকর্তা মোশারফ হোসেন। 

আঙুলের ছাপ না মেলায় ভোট না দিয়ে ফিরে যাচ্ছেন ২ ভোটার। ছবি: স্টার

এ ছাড়া ২৯ নম্বর ওয়ার্ডের মাহিগঞ্জ কলেজ কেন্দ্রের ভোটার আফতার আলী (৬৭) ও নায়েব আলীর (৬০) সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে আঙুলের ছাপ না মেলায় তারা ভোট দিতে পারেননি।

দুপুর সাড়ে ১১টা পযর্ন্ত সেখানে প্রায় ২৬ জন ভোটারের সন্ধান পাওয়া গেছে যারা আঙুলের ছাপ না মেলায় ভোট দিতে পারেননি। এই কেন্দ্রে মোট ভোটারের সংখ্যা ২ হাজার ৬৭৫ জন। 

নির্বাচনী কর্মকর্তা ও ভোটারদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, ইভিএমে ভোটপ্রদান প্রক্রিয়া বুঝতে ভোটারদের অনেক সময় লাগছে। পাশাপাশি ফিঙ্গারপ্রিন্ট না মেলায় ভোটপ্রদান প্রক্রিয়া ধীরগতিতে এগুচ্ছে। এ ধরনের নানা জটিলটায় প্রায় সব কেন্দ্রের বাইরে ভোটারদের দীর্ঘ লাইন দেখা যাচ্ছে।

এ ছাড়া অনেকক্ষণ চেষ্টা করেও ভোট দিতে না পেরে হতাশ হয়ে ফিরতে দেখা গেছে অনেক ভোটারকে।

রংপুর সিটি করপোরেশন এলাকার সিও বাজারের আশেপাশে ১৬ নম্বর ওয়ার্ডের বিভিন্ন কেন্দ্রে সকাল থেকেই ভোটারদের দীর্ঘ লাইন দেখা গেছে। 

শারীরিক অসুস্থতা সত্ত্বেও কেল্লাবন্দ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্রে ভোট দিতে এসেছিলেন ৫৫ বছর বয়সী আলেয়া খাতুন। হাতের ছাপ না মেলায় ভোট দিতে না পেরে বাড়ি ফিরে যান।

ফেরার পথে তিনি দ্য ডেইলি স্টারকে জানান, অনেক চেষ্টা করেও হাতের ছাপ না মেলার কারণে ভোট দিতে পারেননি। মানুষের বাড়িতে কাজ করে হাতের ছাপ উঠে গেছে বলেও আক্ষেপ প্রকাশ করেন তিনি।

কেল্লাবন্দ এলাকার মনোয়ারা বেগমও এ কেন্দ্রে এসে হাতের ছাপ না মেলার কারণে ভোট দিতে পারেননি। ফেরার সময় দায়িত্বরত এক পুলিশ কর্মকর্তাকে অনুরোধ করতে দেখা গেছে ভোট দেওয়ার ব্যবস্থা করার জন্য।

একজন ভোটার দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, 'হাতের ছাপ মিললেও ব্যালট শো করেনি, তাই ভোট দিতে পারিনি।' 

ভোটের এই ধীর গতির কারণে বিভিন্ন প্রার্থীর কর্মীদের উদ্বিগ্ন হয়ে ছোটাছুটি করতে দেখা গেছে। কোনো কোনো প্রার্থীর কর্মীরা ইভিএমের ডামি বোর্ড হাতে নিয়ে ভোটারদের কীভাবে ভোট দিতে হয় সেটা বোঝাচ্ছেন কেন্দ্রের বাইরে।

প্রার্থীর কর্মীরা ইভিএমের ডামি বোর্ড হাতে নিয়ে ভোটারদের ইভিএম ব্যবহার শেখাচ্ছেন। ছবি: স্টার

কেল্লাবন্দ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্রের প্রিসাইডিং অফিসার মোকছেদ আলী দ্য ডেইলি স্টারকে জানান, 'ইভিএমে ভোটগ্রহণে বেশ সময় লাগছে। ১ হাজার ৬১৭ ভোটের মধ্যে সকাল ১০টা পর্যন্ত দেড় ঘণ্টায় মোট ভোট পড়েছে ৮১টি।'

কেল্লাবন্দ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় মহিলা ভোটকেন্দ্রের প্রিসাইডিং অফিসার আহসানুল ইসলাম চৌধুরী দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, 'সকাল ১০টা পর্যন্ত ভোট দিয়েছেন ১১২ জন। এই কেন্দ্রে মোট ভোটারের সংখ্যা ১ হাজার ৬২৮ জন।'      

ভোটের ধীর গতি স্বীকার করে তিনি বলেন, 'ইভিএমে কীভাবে ভোট দিতে হয়, অধিকাংশ ভোটারকে তা বুঝিয়ে দিতে হচ্ছে।'

মহিলা কেন্দ্রের চেয়ে পুরুষ কেন্দ্রে ভোটগ্রহণের হার খানিকটা বেশি হলেও সেখানেও কেন্দ্রের বাইরে লম্বা লাইন দেখা যায়।

ধাপ কেল্লাবন্দ হাফিজিয়া মাদ্রাসা এতিমখানা ও লিল্লাহ বোর্ডিং (পুরুষ-১) কেন্দ্রের প্রিসাইডিং অফিসার সুদীপ্ত রায় দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, 'সকাল ১০টা পর্যন্ত ১ হাজার ৭৪৩টি ভোটের মধ্যে ১৫৫ জন ভোটার তাদের ভোট প্রদান করেছেন। সকাল ১১টা পর্যন্ত ভোট প্রদানের সংখ্যা প্রায় ৩০০ জন।'    

এ অবস্থা চলতে থাকলে নির্ধারিত সময়ের চেয়ে অতিরিক্ত সময় নিয়ে ভোট গ্রহণ করতে হতে পারে বলেও জানান তিনি।

 

Comments

The Daily Star  | English
China urges US for fair trade talks

China warns countries against striking trade deals with US at its expense

Beijing "will take countermeasures in a resolute and reciprocal manner" if any country sought such deals, a ministry spokesperson said

28m ago