১৯ বছর ধরে স্বজনদের অপেক্ষায় জ্যোৎস্না

জ্যোৎস্না। ছবি: সংগৃহীত

নাম জ্যোৎস্না হলেও তার জীবনের বাস্তব চিত্রটা যেন ঠিক বিপরীত। সেখানে কেবলই অনিশ্চয়তা, কোনো আলোর খোঁজ নেই। মায়ের সঙ্গে ৩ বছর কারাগারে কাটানোর পর ৭ বছর বয়সে পা রেখেছিলেন সরকারি শিশু পরিবারে। গত ১৯ বছর ধরে বিভিন্ন শিশু পরিবার ও কারিগরি প্রশিক্ষণ কেন্দ্রই তার ঠিকানা।

জ্যোৎস্নার (২৬) বাবা-মা কেউ বেঁচে নেই। স্বজনরা কেউ বেঁচে আছেন কি না জানেন না তিনি। ২ খালা ও ২ মামার কথা মনে করতে পারলেও তারা কোথায় আছেন জানা নেই তার। তারপরও প্রতিদিনই স্বজনদের জন্য অপেক্ষা করেন তিনি। আশা করেন, একদিন ফিরে যেতে পারবেন স্বজনদের কাছে, ফিরতে পারবেন তার সত্যিকারের ঠিকানায়।

বর্তমানে জ্যোৎস্না আছেন পটুয়াখালী সমাজসেবা অধিদপ্তরের এতিম, প্রতিবন্ধী ও দুস্থ মেয়েদের কারিগরি প্রশিক্ষণ কেন্দ্রে।

প্রশিক্ষণ কেন্দ্র থেকে জানা যায়, জ্যোৎস্নার বাবার নাম জয়নাল খা ও মায়ের নাম জুলি। তাদের বাড়ি ছিল শরীয়তপুরের জাজিরা থানার গঙ্গানগর গ্রামে। জ্যোৎস্না ছোট থাকতেই তার বাবা মারা যান। মা জুলি তাকে নিয়ে ঢাকার মিরপুর-১ সনি সিনেমা হল এলাকায় বস্তিতে থাকতেন। গৃহকর্মীর কাজ করে তিনি যা পেতেন তা দিয়েই মা ও মেয়ের চলে যেত।

তবে জ্যোৎস্নার বয়স যখন ৪ বছর তখন শিশু চুরির মামলায় মা জুলিকে পুলিশ গ্রেপ্তার করে কারাগারে পাঠায়। অভিভাবক না থাকায় জ্যোৎস্নারও মায়ের সঙ্গে কারাগারে থাকার অনুমতি মেলে।

২০০৩ সালের ২২ মার্চ ৭ বছর বয়সে তাকে লেখাপড়ার জন্য কারাগার থেকে পাঠানো হয় ঢাকার আজিমপুর সরকারি শিশু পরিবারে। এরইমধ্যে কারাগারে তার মা মারা যান। আজিমপুরে ৩ বছর থাকার পর জ্যোৎস্নাকে নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জের সরকারি শিশু সদনে (বালিকা) পাঠানো হয়।

২০১৮ সালে তাকে কারিগরি প্রশিক্ষণ দেওয়ার মাধ্যমে স্বাবলম্বী হিসেবে গড়ে তোলার উদ্যোগ নেওয়া হয়। সেজন্য তাকে পাঠানো হয় পটুয়াখালী সমাজসেবা অধিদপ্তরের এতিম, প্রতিবন্ধী ও দুস্থ মেয়েদের কারিগরি প্রশিক্ষণ কেন্দ্রে। সেই থেকে গত ৪ বছর ধরে তার ঠিকানা এখানে।

প্রশিক্ষণ শেষ হওয়ার পরও কোথাও যেতে পারছেন না। কারণ স্বজনরা কোথায় আছেন তিনি তা জানেন না।

দীর্ঘশ্বাস ফেলে জ্যোৎস্না বলেন, 'লেখাপড়া মনে থাকে না। হাঁস-মুরগি পালন শিখেছি এখানে। এখান থেকে মামারা বা খালারা আমাকে নিয়ে গেলে হাঁস-মুরগি পালন করে চলতে পারতাম। কিন্তু কেউ আমাকে নিতে আসেন না।'

জ্যোৎস্নার দেওয়া তথ্যমতে, তার খালাদের নাম আয়শা ও শেফালি। ২ মামার নাম হারুন ও শাহজাহান। তবে তারা কোথায় আছে তিনি জানেন না।

'মামা-খালারা কেন আমারে নিতে আয় না? আমি তাদের কাছে যেতে চাই', কান্নাজড়িত কণ্ঠে বলেন জ্যোৎস্না।  

পটুয়াখালী সমাজসেবা অধিদপ্তরের এতিম, প্রতিবন্ধী ও দুস্থ মেয়েদের কারিগরি প্রশিক্ষণ কেন্দ্রের উপ-পরিচালক কাজী মুহাম্মদ ইব্রাহিম দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, 'দীর্ঘদিন এভাবে এখানে বাস করছেন জ্যোৎস্না, প্রশিক্ষণ নিয়েছেন। এখন স্বজনদের কাছে যেতে ব্যাকুল হয়ে পড়েছেন। প্রতিদিনই জিজ্ঞাসা করেন, কেউ তার খোঁজে এসেছে কি না। সবাই তাকে বুঝিয়ে শান্ত রাখে।'

এভাবেই স্বজনদের অপেক্ষায় দিন, মাস, বছর কাটছে জ্যোৎস্নার। অপেক্ষার পালা কবে ফুরাবে জানেন না তিনি বা কেউ।

Comments

The Daily Star  | English
Election in Bangladesh

Election in first half of ’26 is not unreasonable, but Dec ’25 is doable

Whatever the differing stances of various political parties may be, people in general would prefer to exercise their franchise.

11h ago