৫৩ বছরেও বাড়ানো হয়নি ইস্টার্ন রিফাইনারির সক্ষমতা

ইস্টার্ন রিফাইনারি লিমিটেড

১৯৬৮ সালে প্রতিষ্ঠার পর থেকে দেশের তেল শোধনাগারের পরিশোধন ক্ষমতা বাড়ানোর কোনো উদ্যোগ নেওয়া হয়নি। বর্তমানে দেশে নেই পর্যাপ্ত সংরক্ষণাগার সুবিধাও। ফলে চাহিদা মেটাতে নিয়মিত সরাসরি ডিজেল আমদানির পরিমাণ বাড়ছে।

দেশের একমাত্র রাষ্ট্রায়ত্ত শোধনাগার ইস্টার্ন রিফাইনারি লিমিটেডের (ইআরএল) সক্ষমতা বাড়াতে প্রকল্প প্রস্তাব করা হয়েছিল ১০ বছর আগে।

১০ বছর পেরোলেও সেই প্রকল্পটি এখনো মন্ত্রিসভার অনুমোদন পায়নি। বরং এই সময়কালে প্রকল্পটির কাটাছেঁড়া হয়েছে ১০ বারের বেশি। চলতি বছরের জানুয়ারিতে প্রস্তাব জমা দেওয়ার আগে ঘুরপাক খেয়েছে মন্ত্রণালয়, বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম করপোরেশন (বিপিসি) ও ভারতীয় কনসালটেন্সি প্রতিষ্ঠানের কাছে।

সংশ্লিষ্টরা বলছেন, প্রকল্পটি যদি আরও আগে বাস্তবায়িত হতো, তাহলে বাংলাদেশ আরও বেশি পরিমাণে অপরিশোধিত তেল আমদানি করতে সক্ষম হতো। সেই তেল শোধন করে ডিজেল পাওয়া যেত। এতে বৈদেশিক অর্থও যেমন বাঁচত, তেমনি দেশীয় উৎস থেকে পেট্রোল, অকটেন ও এলপিজির উৎপাদন বাড়ানো যেত।

চলতি বছরের জানুয়ারিতে পরিকল্পনা কমিশনে জমা দেওয়া 'ইস্টার্ন রিফাইনারি লিমিটেড-২ স্থাপন' এর উন্নয়ন প্রকল্প প্রস্তাবে উল্লেখ করা তথ্য অনুযায়ী, প্রকল্পটি বাস্তবায়িত হলে বাংলাদেশ বছরে ২ হাজার ৫০০ কোটি টাকা সাশ্রয় করতে পারত। প্রকল্পটি এখনো জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির (একনেক) অনুমোদন পায়নি বলে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা জানিয়েছেন।

২০১২ সালে যখন পরিকল্পনাটি তৈরি করা হয়েছিল, তখন ব্যয় ধরা হয়েছিল ১৩ হাজার কোটি টাকা। কিন্তু পরবর্তী সংশোধনের পরে এর ব্যয় বেড়ে ১৯ হাজার ৩৭২ কোটি টাকায় দাঁড়ায়।

ইস্টার্ন রিফাইনারি লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) মো. লোকমান দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, 'প্রকল্পটি একনেকের অনুমোদন পাওয়ার পরে আন্তর্জাতিক দরপত্র আহ্বান করা হবে।'

জ্বালানি বিশেষজ্ঞ ম তামিম বলেন, 'একটি গোষ্ঠী অতীতে এ খাতে বিনিয়োগে আগ্রহ দেখিয়েছে। এ খাতে সরকারের সক্ষমতা যাতে না বাড়ে, তা নিশ্চিত করার জন্য তারা প্রভাব বিস্তার করে থাকতে পারে।'

বছরে ১৫ লাখ টন অপরিশোধিত তেল পরিশোধন করতে সক্ষম ইস্টার্ন রিফাইনারি লিমিটেড। প্রকল্পটির লক্ষ্য হলো এ সক্ষমতা বাড়িয়ে ৪৫ লাখ টন করা।

গতকাল আন্তর্জাতিক বাজারে প্রতি ব্যারেল অপরিশোধিত তেলের দাম ছিল ৮৮ ডলার ও ডিজেলের দাম ছিল ১৩৫ ডলার। প্রতি ব্যারেলে তেল থাকে প্রায় ১৫৯ লিটার।

সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, প্রকল্পটি মন্ত্রিসভায় অনুমোদন পেলে ঠিকাদার নিয়োগের জন্য আন্তর্জাতিক দরপত্র আহ্বান করা হবে। এ প্রক্রিয়ায় প্রায় ৯ মাস সময় লাগতে পারে। সব মিলিয়ে রিফাইনারি পরিষেবা পেতে কমপক্ষে ৫ বছর সময় লাগবে।

আন্তর্জাতিক বাজারে মূল্যবৃদ্ধির কারণে সাম্প্রতিক মাসগুলোতে বিপিসি চাপে রয়েছে। গত বছরের ডিসেম্বরে আন্তর্জাতিক বাজারে এক ব্যারেল ডিজেল বিক্রি হয়েছিল ৮৩ ডলারে। জুনে সেই দাম বেড়ে ১৭০ ডলারে পৌঁছায়।

এম তামিম বলেন, জুনে ইস্টার্ন রিফাইনারি লিমিটেড যদি নিজেরা পরিশোধন করে ডিজেল সরবরাহ করত, তাহলে প্রতিটি ব্যারেলে প্রায় ১১৫ ডলার খরচ হতো।

সংশ্লিষ্ট এক কর্মকর্তা বলেন, 'দাম কম থাকার সময় যদি বিপিসি আরও বেশি তেল আমদানি করতে পারত, তাহলে সরকার বৈদেশিক মুদ্রা বাঁচাতে পারত।'

ওই কর্মকর্তা আরও বলেন, 'সরকার যদি অপরিশোধিত তেল আমদানি করে বাংলাদেশে পরিশোধন করতে পারত, তাহলে প্রতি লিটার ডিজেলে অন্তত ১৫ টাকা সাশ্রয় হতো।'

ইস্টার্ন রিফাইনারি লিমিটেডের এমডি মো. লোকমান বলেন, 'আমরা চেয়েছিলাম যেন প্রকল্পটি ফরাসি সংস্থা টেকনিপ বাস্তবায়ন করে, কেননা বর্তমান অংশটা তাদের করা এবং এটা দীর্ঘ সার্ভিস দিয়ে আসছে। তবে ওই সংস্থাটি খুব বেশি মুনাফা চাওয়ায় তা সম্ভব হয়নি।'

এত দীর্ঘ সময় লাগছে কেন, জানতে চাইলে গত বছর যোগ দেওয়া এই এমডি বলেন, এ বিষয়ে মন্তব্য করার জন্য পর্যাপ্ত তথ্য তার কাছে নেই।

২০২০-২১ সালে বাংলাদেশে ৭২ লাখ টন ডিজেল ব্যবহৃত হয়েছে। এর মধ্যে ইস্টার্ন রিফাইনারি লিমিটেড সরবরাহ করেছে মাত্র ৭ লাখ ২০ হাজার টন।

ধারণা করা হচ্ছে, ২০২৬-২৭ সালে বার্ষিক চাহিদা বেড়ে ৮০ লাখ টনে পৌঁছাবে।

Comments

The Daily Star  | English

Each martyr family to get Tk 30 lakh: Prof Yunus

Vows to rehabilitate them; govt to bear all expenses of uprising injured

2h ago