গাজায় তীব্র প্রতিরোধের মুখে ইসরায়েলের স্থল অভিযান

ইসরায়েলি বাহিনীর বিরুদ্ধে ট্যাংক-বিধ্বংসী মিসাইল ছুঁড়ছেন এক হামাস যোদ্ধা। ছবি: এএফপি (হামাসের মিডিয়া উইং এর কাছ থেকে পাওয়া)
ইসরায়েলি বাহিনীর বিরুদ্ধে ট্যাংক-বিধ্বংসী মিসাইল ছুঁড়ছেন এক হামাস যোদ্ধা। ছবি: এএফপি (হামাসের মিডিয়া উইং এর কাছ থেকে পাওয়া)

অবশেষে বড় আকারে শুরু হয়েছে গাজায় ইসরায়েলের স্থল হামলা। এ মুহূর্তে গাজার সড়কগুলোতে দুই পক্ষের মধ্যে তুমুল যুদ্ধ চলছে। এখন পর্যন্ত ইসরায়েলের ট্যাংক বহরকে সাফল্যের সঙ্গে প্রতিহত করার দাবি জানিয়েছে হামাস।

আজ বৃহস্পতিবার এই তথ্য জানিয়েছে বার্তাসংস্থা রয়টার্স।

ইসরায়েলি সামরিক বাহিনী জানিয়েছে, তাদের সেনাদল গাজা শহরের (গাজা সিটি) একেবারে কেন্দ্রে পৌঁছে গেছে। এটি গাজা উপত্যকার সবচেয়ে বড় শহর। ধারণা করা হয়, এখানেই হামাসের অবস্থান সবচেয়ে শক্তিশালী। অপরদিকে, হামাসের যোদ্ধারা তাদের ভূগর্ভস্থ সুড়ঙ্গ নেটওয়ার্ক ব্যবহার করে ইসরায়েলি বাহিনীর ওপর অতর্কিতে হামলা চালিয়ে তাদের বড় আকারের ক্ষয়ক্ষতি করার দাবি জানিয়েছে।

উত্তর গাজায় ইসরায়েলের স্থল হামলা পরিদর্শনের জন্য সাংবাদিকদের বিশেষ অনুমতি দেওয়া হয়। ছবি: এএফপি
উত্তর গাজায় ইসরায়েলের স্থল হামলা পরিদর্শনের জন্য সাংবাদিকদের বিশেষ অনুমতি দেওয়া হয়। ছবি: এএফপি

হামাসের সামরিক শাখা আল-কাসাম ব্রিগেড গতকাল বুধবার একটি ভিডিও প্রকাশ করেছে, যেখানে গাজা শহরের সড়কগুলোতে দুই পক্ষের মধ্যে তুমুল যুদ্ধ ও বোমা বিধ্বস্ত দালান দেখা যায়।

হামাসের প্রতিরোধ

গাজায় ইসরায়েলের স্থল হামলা শুরু হয়েছে। ছবি: রয়টার্স
গাজায় ইসরায়েলের স্থল হামলা শুরু হয়েছে। ছবি: রয়টার্স

হামাস ও ইসলামিক জিহাদের সূত্ররা রয়টার্সকে জানিয়েছে, ইসরায়েলি ট্যাংকগুলো প্রবল প্রতিরোধের মুখোমুখি হয়েছে। মূলত ভূগর্ভস্থ সুড়ঙ্গপথ ব্যবহার করে হামাসের যোদ্ধারা ইসরায়েলের অত্যাধুনিক ভারী অস্ত্রের বিরুদ্ধে লড়ছেন।

হামাসের অন্যতম নেতা খালিল আল-হাইইয়া নিউইয়র্ক টাইমসকে জানান, সংগঠনটি ইসরায়েলে হামলা চালিয়ে এ অঞ্চলের তথাকথিত স্থিতাবস্থা চুরমার করতে চেয়েছে। তিনি মত দেন, এই হামলার মাধ্যমে হামাস-ইসরায়েল সংঘাতে নতুন অধ্যায় শুরু হয়েছে।

বুধবার এই পত্রিকার দেওয়া সংবাদ অনুযায়ী, তিনি আরও বলেন, 'আমরা ফিলিস্তিনিদের সমস্যাগুলোকে আবারও সবার নজরে ফিরিয়ে আনতে সক্ষম হয়েছি। এখন এ অঞ্চলের কেউ আর শান্তিতে নেই।'

হামাসের নির্বাসিত কমান্ডার সালে আল-আরৌরি আল-আকসা টিভিকে বুধবার জানান, তাদের যোদ্ধারা গাজার স্থলযুদ্ধে ইসরায়েলি বাহিনীর ব্যাপক ক্ষতিসাধনের জন্য অঙ্গীকারবদ্ধ।

'(ইসরায়েলের বাহিনী) যত বেশি ছড়িয়ে পড়বে এবং তাদের স্থলযুদ্ধ যত বিস্তৃত আকারে শুরু করবে, ততই বাড়বে তাদের ক্ষয়ক্ষতির মাত্রা', যোগ করেন সালেহ।

বুধবার হামাসের প্রকাশ করা ভিডিওতে দেখা যায়, সংগঠনটির যোদ্ধারা ভাঙা পাথরের স্তূপের পাশ দিয়ে দৌড়ে যাচ্ছেন এবং থেমে থেমে ঘাড়ে বহন করা মিসাইল লঞ্চার ব্যবহার করে ইসরায়েলি ট্যাংকের ওপর হামলা চালাচ্ছেন। অপর ভিডিওতে তাদেরকে দালান ও ময়লার ভাগাড়ের আড়াল থেকে রাইফেল দিয়ে গুলি ছুঁড়তে দেখা যায়।

তবে রয়টার্স এসব ভিডিওর সত্যতা যাচাই করতে পারেনি।

সুড়ঙ্গপথে ইসরায়েলের হামলা

হামাসের আল-কাসাম ব্রিগেডের সদস্যরা ইসরায়েলি বাহিনীর বিরুদ্ধে তুমুল প্রতিরোধ গড়ে তুলেছেন। ছবি: এএফপি (হামাসের মিডিয়া উইং এর কাছ থেকে পাওয়া)
হামাসের আল-কাসাম ব্রিগেডের সদস্যরা ইসরায়েলি বাহিনীর বিরুদ্ধে তুমুল প্রতিরোধ গড়ে তুলেছেন। ছবি: এএফপি (হামাসের মিডিয়া উইং এর কাছ থেকে পাওয়া)

গতকাল থেকে ইসরায়েল হামাসের সুড়ঙ্গপথ ধ্বংসের লক্ষ্য নিয়ে যুদ্ধ চালাচ্ছে। ইসরায়েলের সেনাবাহিনীর প্রধান মুখপাত্র রিয়ার অ্যাডমিরাল ড্যানিয়েল হাগারি গতকাল দাবি করেন, 'হামাস উত্তর গাজার নিয়ন্ত্রণ হারিয়েছে।'

ইসরায়েলের যুদ্ধ প্রকৌশলীরা বিস্ফোরক ব্যবহার করে গাজার সুড়ঙ্গগুলো ধ্বংস করছিলেন। তারা দাবি করেন, এ পর্যন্ত তারা ১৩০টি সুড়ঙ্গ ধ্বংস করেছে।

৭ অক্টোবর হামাসের যোদ্ধার ইসরায়েলের ভূখণ্ডে হামলা চালালে এক হাজার ৪০০ ইসরায়েলি নিহত হন। হামাসের হাতে জিম্মি হন প্রায় ২৪০ জন। এর পর থেকে টানা ৩৩ দিন ধরে গাজা উপত্যকায় নির্বিচারে প্রতিশোধমূলক হামলা চালাচ্ছে ইসরায়েল। শুরুতে বিমানবাহিনীর বোমাবর্ষণের সঙ্গে ২৮ অক্টোবর থেকে যোগ দিয়েছে স্থল বাহিনী।

গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় জানায়, ইসরায়েলের নির্বিচার হামলায় গাজায় নিহতের সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১০ হাজার ৫৬৯ জনে। যাদের মধ্যে ৪ হাজার ৩২৪ জন শিশু। ইসরায়েল জানিয়েছে, এই সংঘাতে তাদের ৩৩ সেনা নিহত হয়েছেন।

যুদ্ধ পরবর্তী ফিলিস্তিনি সরকার

হামাসের যোদ্ধারা কুচকাওয়াজে অংশ নিচ্ছেন। ফাইল ছবি: রয়টার্স
হামাসের যোদ্ধারা কুচকাওয়াজে অংশ নিচ্ছেন। ফাইল ছবি: রয়টার্স

ইতোমধ্যে ওয়াশিংটন ইসরায়েল ও আরব বিশ্বের নেতাদের সঙ্গে গাজা উপত্যকার ভবিষ্যৎ নিয়ে আলোচনা শুরু করেছে। আলোচনার মুখ্য বিষয়, গাজার জন্য একটি হামাস-বিহীন প্রশাসন প্রতিষ্ঠা করা।

মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যান্টনি ব্লিঙ্কেন এ বিষয়ে দেশটির প্রত্যাশা জানিয়েছেন।

বুধবার টোকিওতে এক সংবাদ সম্মেলনে ব্লিঙ্কেন বলেন, 'যুদ্ধের পর ইসরায়েল গাজা অধিগ্রহণ করবে না। গাজার ওপর কোনো ধরনের অবরোধ আরোপ বা হামলা করার প্রচেষ্টা চালানো হবে না। গাজার ভূখণ্ডও কমে আসবে না।'

ব্লিঙ্কেন জানান, যুদ্ধ শেষে গাজার শাসন ব্যবস্থায় 'ফিলিস্তিনিদের নেতৃত্ব' থাকতে হবে এবং গাজাকে ফিলিস্তিনি কর্তৃপক্ষের আওতায় পশ্চিম তীরের সঙ্গে সমন্বিত করতে হবে।

তবে এই লক্ষ্য অর্জনে কিছুটা সময় লাগতে পারে বলেও জানান তিনি।

এর আগে সোমবার ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু জানান, যুদ্ধ পরবর্তী সময়ে অনির্দিষ্টকালের জন্য ইসরায়েল গাজার নিরাপত্তার দায়িত্ব নেবে।

তবে ইসরায়েলি কর্মকর্তারা বিষয়টি পরিষ্কার করে জানান, ইসরায়েল গাজার শাসনভার নিতে আগ্রহী নয়। ইসরায়েলের প্রতিরক্ষামন্ত্রী গ্যালান্ট জানান, যুদ্ধের পর হামাস বা ইসরায়েল, কেউই গাজা শাসন করবে না।

২০০৫ সালে হামাসের প্রবল প্রতিরোধের মুখে গাজা থেকে সেনা প্রত্যাহার করতে বাধ্য হয়েছিল ইসরায়েল।

ফিলিস্তিনি কর্তৃপক্ষ (পিএ) ইসরায়েল অধিকৃত পশ্চিম তীরে সীমিত আকারে স্বায়ত্তশাসন উপভোগ করে। তারা জানিয়েছে, ২০০৭ থেকে হামাসের শাসনে থাকা গাজা ভবিষ্যৎ ফিলিস্তিনি রাষ্ট্রের অত্যাবশ্যক অংশ।

 

Comments

The Daily Star  | English
The Indian media and Bangladesh-India relations

The Indian media and Bangladesh-India relations

The bilateral relationship must be based on a "win-win" policy, rooted in mutual respect, non-hegemony, and the pursuit of shared prosperity and deeper understanding.

9h ago