৩২ দিনে যা ঘটল গাজায়
ফিলিস্তিনের গাজা উপত্যকায় ইসরায়েলের নির্বিচার হত্যাযজ্ঞের ৩২ দিন চলছে। ইতোমধ্যে ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুর প্রতি যুদ্ধবিরতি কার্যকরের দাবি জানিয়েছে বিভিন্ন দেশ ও আন্তর্জাতিক সংস্থা। তবে জিম্মিদের মুক্তি না দেওয়া পর্যন্ত এ ধরনের দাবি মানতে একেবারেই নারাজ নেতানিয়াহু।
এতদিন পর হলেও আজ গাজায় মানবিক যুদ্ধবিরতি ও ত্রাণ সহায়তা পৌঁছানোর পথ করে দেওয়ার আহ্বান জানিয়েছে পশ্চিমা সাত শক্তির রাজনৈতিক জোট জি-৭ (গ্রুপ অব সেভেন)। যদিও জোটের পক্ষে সাধারণ যুদ্ধবিরতির আহ্বান জানানো হয়নি।
এদিকে ইসরায়েলের সামরিক বাহিনী বলছে, উত্তর গাজা থেকে বাসিন্দাদের দক্ষিণ গাজায় সরে যেতে তারা টানা পঞ্চম দিনের মতো আজ একটি পথ (করিডর) খুলে দিয়েছে। প্রথমে চার ঘণ্টার জন্য এই পথ খোলা হলেও পরে এক ঘণ্টা সময় বাড়ানো হয়।
জাতিসংঘ জানায়, এ পথ ধরে গতকাল ১৫ হাজার, সোমবার পাঁচ হাজার এবং রোববার দুই হাজার ফিলিস্তিনি উত্তর গাজা ত্যাগ করেছেন।
এরপরও বহু মানুষ উত্তর গাজায় রয়ে গেছেন। গতকাল হামাস জানায়, উত্তর গাজায় এখনো ছয় লাখ ফিলিস্তিনি অবস্থান করছেন।
৬৫০ ট্রাক ত্রাণ গাজায়
ফিলিস্তিনের রেড ক্রিসেন্ট সোসাইটি জানায়, আজ রাফাহ সীমান্তে মিশরের রেড ক্রিসেন্ট সোসাইটির কাছ থেকে তারা ৮১টি ত্রাণবাহী ট্রাক গ্রহণ করেছে। এসব ট্রাকে খাদ্য, পানি, ওষুধ এবং চিকিৎসা সামগ্রী রয়েছে।
গাজায় এ পর্যন্ত ৬৫০টি ত্রাণবাহী ট্রাক ঢুকলেও জ্বালানিবাহী কোনো ট্রাককে ঢুকতে দেওয়া হয়নি বলেও জানিয়েছে সংস্থাটি।
গতকাল গাজায় আন্তর্জাতিক রেড ক্রস কমিটি (আইসিআরসি) পরিচালিত ত্রাণবাহী ট্রাক লক্ষ্য করে ইসরায়েল হামলা চালিয়েছে বলে অভিযোগ করেছে ফিলিস্তিন রেড ক্রিসেন্ট সোসাইটি।
আজ আইসিআরসি জানায়, এই হামলায় তাদের দুটি ট্রাক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে এবং একজন চালক আহত হয়েছেন।
গাজায় নিহত বেড়ে ১০৫৬৯
গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় জানায়, ইসরায়েলের নির্বিচার হামলায় গাজায় নিহতের সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১০ হাজার ৫৬৯ জনে। যাদের মধ্যে ৪ হাজার ৩২৪ জনই শিশু।
জাতিসংঘের মতে, গত ৭ অক্টোবরের পর থেকে ২৩ লাখ গাজাবাসীর প্রায় দুই-তৃতীয়াংশ বাস্তুহারা হয়েছেন।
ইউএনআরডব্লিউএ'র ৯২ কর্মী নিহত
ফিলিস্তিনি শরণার্থীদের জন্য কাজ করা জাতিসংঘের প্রধান সংস্থা ইউনাইটেড নেশনস রিলিফ অ্যান্ড ওয়ার্ক এজেন্সি (ইউএনআরডব্লিউএ) জানায়, গত ৭ অক্টোবরের পর থেকে ইসরায়েলের হামলায় গাজায় কর্মরত তাদের ৯২ কর্মী নিহত হয়েছেন।
সংস্থাটির প্রধান ফিলিপ্পে লাজারিনি এক্সে (সাবেক টুইটার) বলেছেন, 'গাজায় ইসরায়েলের নিকৃষ্ট হামলা ও কঠোর অবরোধের এক মাস হয়ে গেছে। আমি আবারও মানবতার স্বার্থে সেখানে যুদ্ধবিরতির আহ্বান জানাচ্ছি।'
৩৯ সাংবাদিক নিহত
বিশ্বব্যাপী সাংবাদিকদের অধিকার রক্ষায় সোচ্চার যুক্তরাষ্ট্রের নিউইয়র্কভিত্তিক সংগঠন কমিটি টু প্রটেক্ট জার্নালিস্টস (সিপিজে) জানায়, ইসরায়েল ও হামাস যুদ্ধে এখন পর্যন্ত অন্তত ৩৯ সাংবাদিক নিহত হয়েছেন।
সিপিজে বলছে, ১৯৯২ সাল থেকে তাদের তথ্য সংগ্রহ শুরুর পর থেকে এটিই 'সাংবাদিকদের জন্য সবচেয়ে মারাত্মক মাস'।
নিহত সাংবাদিকদের মধ্যে ৩৪ জন ফিলিস্তিনি, চারজন ইসরায়েলি এবং একজন লেবাননের। আহত হয়েছেন আরও আট সাংবাদিক এবং তিনজন নিখোঁজ।
ইসরায়েলের ৩৫০ সেনা নিহত
ইসরায়েলের প্রতিরক্ষা বাহিনী (আইডিএফ) জানায়, গাজায় গত ২৭ অক্টোবরের স্থল অভিযান শুরুর পর থেকে তাদের ৩২ সেনা সদস্য নিহত হয়েছেন।
এরমধ্যে ইসরায়েলি বিমান বাহিনীর শালদাগ ইউনিটের সার্জেন্ট জোনাথান চাজোর রয়েছেন।
গত ৭ অক্টোবর হামাসের হামলার পর থেকে নিহত ৩৫০ সেনা সদস্যের নাম ইতোমধ্যে প্রকাশ করেছে আইডিএফ।
Comments