ঝুঁকিপূর্ণ ৪২ ভবন: রাজউকের উচ্ছেদ কার্যক্রমে গতি নেই
সম্প্রতি রাজউকের কাছ থেকে ৪২টি ঝুঁকিপূর্ণ ভবন খালি করার নোটিশ পেয়েছে সংশ্লিষ্ট শিক্ষা প্রতিষ্ঠান কর্তৃপক্ষ। তবে রাজউকের দেওয়া ১ সপ্তাহের সময়সীমা আমলে নিতে পারছে না প্রতিষ্ঠানগুলো। এখন পর্যন্ত একটি ভবনও খালি করা হয়নি। রাজউকের এই চিঠি সুচিন্তিত নয় বলে অনেকেই মনে করছেন। শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলো কর্তৃপক্ষের এ সিদ্ধান্ত নিয়ে প্রশ্ন তুলেছে।
প্রশ্ন উঠেছে নোটিশে ৭ দিনের মধ্যে স্থাপনাগুলো খালি এবং ৩ মাসের মধ্যে ভেঙে ফেলার যে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে তা কতটা বাস্তবায়নযোগ্য।
২ সপ্তাহ আগে নোটিশ পাওয়া সত্ত্বেও ঢাকা, গাজীপুর ও নারায়ণগঞ্জের ৮টি সরকারি ও স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠানের মালিকানাধীন স্থাপনাগুলো এখনও খালি করা হয়নি।
উল্লেখিত প্রতিষ্ঠানগুলোর সঙ্গে কথা বলে দ্য ডেইলি স্টার জানতে পেরেছে, রাজউকের পক্ষ থেকে পুনর্বাসনের কোনো বিকল্প না দেওয়ার কারণেই এ বিষয়ে কোনো অগ্রগতি নেই।
ঢাকা কলেজিয়েট স্কুলের কথাই ধরা যাক। আরবান রিজিলিয়েন্স প্রকল্পের (ইউআরপি) আওতায় ২০২১ থেকে ২০২২ সালের মধ্যে ক্যাম্পাসের ৩ ভবনকে ঝুঁকিপূর্ণ হিসেবে চিহ্নিত করেছে রাজউক। এ ভবনগুলো এ মুহূর্তে ল্যাব, শ্রেণিকক্ষ ও মিলনায়তন হিসেবে ব্যবহার হচ্ছে।
কিন্তু স্কুল কর্তৃপক্ষের কাছে আপাতত এই ৩ ভবনের কার্যক্রম স্থানান্তরের কোনো বিকল্প নেই।
জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের (জাবি) ৩টি ভবন ঝুঁকিপূর্ণ হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধান প্রকৌশলী আবদুস সালাম মো. শরীফ জানান, এগুলো খালি করতে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের অন্তত ৬ মাস সময় লাগবে।
'তবে (ভবন) ভেঙে ফেলার আগে, আমাদের জানতে হবে নতুন ভবন নির্মাণের জন্য তহবিল কোথা থেকে আসবে। বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষা কার্যক্রম অব্যাহত রাখতে এটি গুরুত্বপূর্ণ', যোগ করেন তিনি।
তিনি আরও জানান, রাজউকের নোটিশে ১০টি ভবন সংস্কারের কথাও বলা হয়েছে।
জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের ৪টি ভবনকে ঝুঁকিপূর্ণ হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধান প্রকৌশলী হেলাল উদ্দিন পাটোয়ারী গত ১৫ মার্চ রাজউকের কাছ থেকে ১টি চিঠি পাওয়ার কথা স্বীকার করেন। তবে চিঠিতে ভবনগুলোর নাম উল্লেখ করা হয়নি বলে তিনি জানান।
পাটোয়ারি বলেন, 'ল্যাব ও শ্রেণিকক্ষ স্থানান্তরের জন্য আমাদের কোথাও জায়গা নেই।'
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় (বিএসএমএমইউ) ক্যাম্পাসের ৩টি ভবনকে ঝুঁকিপূর্ণ হিসেবে চিহ্নিত করেছে রাজউক। এর মধ্যে ১৭ তলা ডি ব্লক ভবনটি ২০১১ সালে নির্মিত হয়।
গণমাধ্যমের সঙ্গে কথা বলার অনুমতি না থাকায় নাম না প্রকাশের শর্তে বিএসএমএমইউর একজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা বলেন, 'মাত্র ১০ বছর আগে গণপূর্ত অধিদপ্তরের তত্ত্বাবধানে নির্মিত একটি ভবন কীভাবে ঝুঁকিপূর্ণ হতে পারে?'
তিনি জানান, তারা ইতোমধ্যে ৫০ এর দশকে নির্মিত ২টি ভবনকে ২০০৫ সালে পুনঃস্থাপন করেছেন।
তিনি দাবি করেন, 'কোনো ভবনই ঝুঁকিতে নেই'।
শিক্ষা প্রকৌশল অধিদপ্তরের (ইইডি) প্রধান প্রকৌশলী দেলোয়ার হোসেন মজুমদার বলেন, এ বিষয়ে তারা একটি চিঠি পেয়েছেন এবং রাজউক ভুলভাবে তাদেরকে ৩০টি স্কুল ভবনের কর্তৃপক্ষ হিসেবে চিহ্নিত করেছে।
ইইডি রাজউককে চিঠি দিয়ে বলেছে, তারা উল্লেখিত ভবনের মাঝে মাত্র ২টি নির্মাণ করেছে এবং সেগুলো স্কুল কর্তৃপক্ষের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে।
দেলোয়ার হোসেন বলেন, 'অনেক ভবনই এতটা ঝুঁকিপূর্ণ নয় যে তাৎক্ষণিকভাবে সেগুলো ভাঙার প্রয়োজন রয়েছে। যদি ৭ মাত্রার ভূমিকম্প আঘাত হানে, তাহলে সেটা ভিন্ন ঘটনা।'
তিনিও প্রথমে পুনর্বাসনের কথা বলেন।
জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের নগর ও আঞ্চলিক পরিকল্পনা বিভাগের শিক্ষক আদিল মোহাম্মদ খান বলেন, 'সবগুলো ভবনই পুরোনো এবং এ বিষয়ে কোনো সন্দেহ নেই'।
এখানে দুটি বিকল্প রয়েছে-- হয় সংস্কার করে তাদের রক্ষা করুন বা ভেঙে ফেলুন।
'যেহেতু ভবন ভাঙা একটি বড় সিদ্ধান্ত, তাই রাজউকের আদেশ বাস্তবায়নের আগে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের দ্বিতীয়বারের মতো মূল্যায়ন করা উচিত', যোগ করেন তিনি।
বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব প্ল্যানার্সের সাবেক সাধারণ সম্পাদক আদিল আরও বলেন, 'যদি উভয় মূল্যায়ন একই কথা বলে, তাহলে ভবনগুলো খালি করে শেষ পর্যন্ত ভেঙে ফেলতে হবে।'
৩ হাজার ২৫২টি স্থাপনার সমীক্ষা করে ৪২টিকে ঝুঁকিপূর্ণ হিসেবে চিহ্নিত করার প্রকল্পের পরিচালক আব্দুল লতিফ হেলালী বলেন, অত্যাধুনিক সরঞ্জাম ব্যবহার করে মূল্যায়ন করা হয়েছে এবং সংশ্লিষ্ট যে কেউ চাইলে তৃতীয় পক্ষের মতামত নিতে পারেন।
তিনি জানান, ৪২টি স্থাপনার মধ্যে এখন পর্যন্ত মাত্র ১টি ভবন ভেঙে ফেলা হয়েছে।
এত সংক্ষিপ্ত সময়সীমার বিষয়ে জানতে চাইলে হেলালী বলেন, 'আমরা তাদের ঝুঁকির কথা জানিয়েছি এবং এখন যেকোনো দুর্ঘটনা রোধে উদ্যোগ নেওয়ার দায়িত্ব সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের'।
ভবন ভাঙার কারা অর্থায়ন করবে জানতে চাইলে তিনি বলেন, 'শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বা হাসপাতালগুলোর উচিত তাদের নিজ নিজ মন্ত্রণালয়কে এ বিষয়ে প্রশ্ন করা'।
তিনি বলেন, 'বিশ্বব্যাংকের কাছ থেকে আরেকটি প্রকল্পের অর্থায়ন পাওয়া গেলে আমরা নতুন ভবন নির্মাণ করতে পারি। তবে এতে অনেক সময় লাগতে পারে'।
'সেক্ষেত্রে ভবন সংস্কার করা যেতে পারে', যোগ করেন তিনি।
হেলালী আরও বলেন, 'তবে এ মুহূর্তে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো, নিরাপত্তা নিশ্চিত করার জন্য ভবনগুলো খালি করে ফেলা'।
গত ১১ মার্চ রাজউকের চেয়ারম্যান আনিসুর রহমান মিয়া বলেন, ভবনগুলো ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থায় থাকায় সেগুলোকে ভেঙে ফেলার উদ্যোগ নেওয়া হবে।
তিনি জানান, যেসব প্রতিষ্ঠান এসব ঝুঁকিপূর্ণ ভবনের মালিক, তারা সবাই রাজউকের নোটিশ পেয়েছে।
'আমাদের কাছে প্রাপ্তি স্বীকার রশিদ রয়েছে', যোগ করেন তিনি।
সংক্ষেপিত। মূল প্রতিবেদন পড়তে ক্লিক করুন 42 Risky Buildings: Rajuk evacuation move going nowhere
অনুবাদ করছেন মোহাম্মদ ইশতিয়াক খান
Comments