কুকুর কামড়ালে কী করবেন

কুকুর কামড়ালে কী করবেন
ছবি: সংগৃহীত

ভালোবেসে বাড়িতে কুকুর পোষেন অনেকেই। আবার নিত্যদিনের চলার পথেও কুকুরের দেখা মেলে হরহামেশাই। প্রভুভক্ত হিসেবে খ্যাত বেশিরভাগই কুকুরের শরীরেই রয়েছে র‌্যাবিস ভাইরাস। র‌্যাবিস আক্রান্ত কুকুরের কামড় বা আঁচড়ে হতে পারে জলাতঙ্ক।

কুকুর কামড়ালে বা আঁচড় দিলে করণীয় সম্পর্কে জানিয়েছেন মহাখালীর সংক্রামক ব্যাধি হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক ডা. মিজানুর রহমান

কুকুরের কামড় বা আঁচড়ে কী হয়

ডা. মিজানুর রহমান বলেন, কুকুর হচ্ছে রেবিড অ্যানিমেল। বিড়াল, শিয়াল, অন্যান্য হিংস্র বণ্যপ্রাণী এবং বাদুড় এগুলো সবই রেবিড অ্যানিমেল। রেবিড অ্যানিমেল কামড় বা আঁচড় দিলে জলাতঙ্ক রোগ হওয়ার আশঙ্কা সবচেয়ে বেশি। বিশেষ করে র‌্যাবিস আক্রান্ত কুকুর কামড় দিলে ৯৯ শতাংশ ক্ষেত্রে জলাতঙ্ক রোগ হতে পারে।

তবে কুকুর কামড় দিলেই যে জলাতঙ্ক রোগ হবে তা কিন্তু ঠিক নয়, কুকুরের মধ্যে জলাতঙ্কের জীবাণু থাকতে হবে। র‌্যাবিস ভাইরাসে আক্রান্ত কুকুরের লালা থেকে ভাইরাসটি ছড়ায়।

কুকুরের লালা যদি কামড়, আঁচড় বা শরীরের ক্ষতস্থানের সংস্পর্শে আসে আর লালার মধ্যে যদি র‌্যাবিস ভাইরাস থাকে তাহলেই জলাতঙ্ক হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। যেহেতু কুকুর রেবিড প্রাণী, সেহেতু তার মধ্যে র‌্যাবিস ভাইরাস থাকতেই পারে। তাই কুকুর কামড় দিলে ঝুঁকি না নিয়ে অবশ্যই দেরি না করে জলাতঙ্কের টিকা নিতে হবে।

জলাতঙ্ক রোগের লক্ষণ

ডা. মিজানুর রহমান বলেন, জলাতঙ্কের ইনকিউবেশন পিরিয়ড থাকে অর্থাৎ কুকুরের কামড়ের কারণে র‌্যাবিস ভাইরাস শরীরে প্রবেশের পর লক্ষণ বা উপসর্গের বিকাশে যে সময় লাগে সেটি এক বছর পর্যন্তও হতে পারে। তবে সাধারণভাবে এই সময়কাল ৩ মাস ধরা হয়।  অনেক সময় ইনকিউবেশন পিরিয়ড ক্ষতস্থান কোথায় তার ওপর নির্ভর করে। কুকুরের কামড় বা আঁচড় যদি ঘাড় বা মাথায় হয় তাহলে ইনকিউবেশন পিরিয়ড কমে আসবে। সেন্ট্রাল নার্ভাস সিস্টেমের যত কাছাকাছি কামড় বা আঁচড় দিবে তত তার  ইনকিউবেশন পিরিয়ড হ্রাস-বৃদ্ধি হবে।

জলাতঙ্ক রোগ হলে প্রথম যে লক্ষণ দেখা দেয় সেটি হলো হাইড্রোফোবিয়া মানে পানি ভীতি দেখা দেয়। রোগী পানি খেতে পারেনা। পরবর্তীতে অন্যান্য লক্ষণগুলো প্রকাশ পেতে শুরু করে। এরোফোবিয়া দেখা দেয় যার কারণে রোগী বাতাস সহ্য করতে পারেনা। আলোও সহ্য করতে পারেনা, অস্বাভাবিক আচরণ করে, মস্তিষ্কের প্রদাহ দেখা দেয়, রোগী অজ্ঞান হয়ে যায়।

রোগীর মধ্যে এসব লক্ষণ প্রকাশ পেলে তাকে জলাতঙ্ক বলা হয়। আর জলাতঙ্কে আক্রান্ত হওয়ার ৪৮ থেকে ৭২ ঘণ্টার মধ্যে রোগী মারা যায়।

কুকুর কামড়ালে বা আঁচড় কাটলে করণীয়

ডা. মিজানুর রহমান বলেন, কুকুর কামড় দিলে বা আঁচড় কাটলে যদি কোন ধরনের ক্ষত তৈরি হয় তাহলে ক্ষতস্থান তাৎক্ষণিকভাবে ১৫ থেকে ২০ মিনিট সময় নিয়ে কাপড় ধোয়ার ক্ষারযুক্ত সাবান দিয়ে ফেনা উঠিয়ে ধুতে হবে। আতঙ্কিত হওয়া যাবে না, কুকুরের কামড় বা আঁচড় দেয়ার ২ থেকে ৫ দিনের মধ্যে অবশ্যই টিকা নিতে হবে।

রাজধানীর মহাখালীতে সংক্রামক ব্যাধি হাসপাতাল জলাতঙ্ক রোগীদের জন্য কেন্দ্রীয় সেন্টার। সেখান থেকে টিকা নিতে পারবেন। এর পাশাপাশি ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল, শহীদ সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল, কুর্মিটোলা জেনারেল হাসপাতালসহ ৫টি মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে জলাতঙ্কের টিকা দেওয়া হয়। ঢাকার বাইরে জেলা হাসপাতাল এবং প্রায় ২০০ উপজেলা হেড কমপ্লেক্সে বিনামূল্যে জলাতঙ্কের টিকা দেওয়া হয়। সেখান থেকে চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী টিকা নিতে হবে, কুকুরের কামড় ও আঁচড়ে ক্ষতস্থানের ক্যাটাগরির ভিত্তিতে।

ক্ষতস্থানের ক্যাটাগরি

কুকুরের কামড় বা আঁচড়ের ফলে সৃষ্ট ক্ষতস্থানকে ৩টি ক্যাটাগরিতে ভাগ করা হয়। যেমন-

ক্যাটাগরি ১: শরীরে যেখানে কোনো ক্ষতস্থান থাকে না। কুকুরের সংস্পর্শে আসা, কুকুরকে খাওয়ানোর সময়, আদরের সময় লালা লেগে গেছে কিন্তু কোনো কামড় বা আঁচড় হয়নি বা কোনো ক্ষতস্থানে লালা লাগেনি সেক্ষেত্রে এটি ক্যাটাগরি ১। এর জন্য টিকা নেওয়ার প্রয়োজন নেই। জায়গাগুলো সাবান পানি দিয়ে ধুয়ে ফেললেই হবে।

ক্যাটাগরি ২: এক্ষেত্রে কুকুরের কামড় বা আঁচড়ের ফলে শরীরে ক্ষত থাকে, কিন্তু রক্তপাত হয় না। এর জন্য অ্যান্টি র‌্যাবিস ভ্যাকসিন (এআরভি) নিতে হবে।

ক্যাটাগরি ৩: এক্ষেত্রে শরীরে ক্ষত থাকে এবং রক্তপাত হয়। এ ছাড়া মাথায়, বুকে বা ঘাড়ে কুকুরের কামড় বা আঁচড়ে রক্তপাত হোক বা না হোক, সেটিকে ক্যাটাগরি ৩ ধরা হয়। কারণ এই জায়গাগুলো মস্তিষ্কের একদম কাছাকাছি। র‌্যাবিস ভাইরাসটি মস্তিষ্কে ছড়িয়ে পড়ে প্রদাহ সৃষ্টি করে ফলে মৃত্যু হয়। এক্ষেত্রে রোগীকে জলাতঙ্কের টিকা নিতে হবে। বিশেষ করে ক্যাটাগরি ৩ বাইটের জন্য অ্যান্টি র‌্যাবিস ইমিউনোগ্লোবিউলিন (আরআইজি) ইনজেকশনও নিতে হবে।

ডা. মিজানুর রহমান বলেন, জলাতঙ্ক শতভাগ প্রতিরোধযোগ্য, আবার শতভাগ প্রাণঘাতী। র‌্যাবিস আক্রান্ত কুকুর কামড় বা আঁচড় দিলে সঙ্গে সঙ্গে টিকা নিলে জলাতঙ্ক শতভাগ প্রতিরোধ করা যাবে। আর তা না হলে মৃত্যু অনিবার্য। তাই শুধু টিকার মাধ্যমেই সুরক্ষা সম্ভব।

 

Comments

The Daily Star  | English

65pc of suicide victims among students are teens: survey

Teenagers (aged 13-19) made up 65.7% of 310 students who died by suicide in 2024, according to a survey by Aachol Foundation.

38m ago