আপনার সঙ্গে ‘পকেটিং’ হচ্ছে কি না কীভাবে বুঝবেন

পকেটিং
ছবি: সংগৃহীত

অধুনা প্রেমের অভিধানের আরেকটি নতুন শব্দ পকেটিং। পকেটিং বলতে সাদা কথায় বোঝায়, কোনোকিছু পকেটে ঢুকিয়ে রাখা। আর এইক্ষেত্রে যে ব্যক্তি আপনার সঙ্গে পকেটিং করছেন, তিনি পুরো দুনিয়া থেকে লুকিয়ে আপনাকে এক রকম পকেটে ঢুকিয়ে রাখছেন বা আড়াল করে রাখছেন।

রোমান্টিক সম্পর্ক যখন এগোতে থাকে, তখন উভয় পক্ষই এক সময় আশা করে যে তারা একে অন্যের বাইরের ও ভেতরের জগত দুটোর সঙ্গেই যুক্ত হবেন। কারণ বন্ধু, পরিবারসহ প্রিয় ব্যক্তির আশপাশের মানুষগুলোর সঙ্গে দেখা-সাক্ষাৎ, আড্ডাবাজি, ঘুরতে যাওয়া ইত্যাদির মাধ্যমে সম্পর্ক আরও বেশি উদযাপিত, আরও বেশি স্বীকৃত হয়। সাধারণত এমনটাই দেখা যায়। কিন্তু যখন কোনো সম্পর্ক নিয়ে এক পক্ষ খুব একটা নিশ্চিত থাকেন না এবং তারা বিষয়টিকে শুধু দুজনের মধ্যে রেখে অন্য সবার কাছ থেকে লুকিয়ে রাখতে চান, তখন অপর ব্যক্তিটি শিকার হন পকেটিংয়ের।

পরিচিত কেউ সামনে পড়লেও প্রিয় মানুষটিকে তার সঙ্গে আলাপ না করিয়ে দিয়ে নিজে একা কথা বলে চলে আসলে মনে একটু খটকা তো বাঁধেই। কিন্তু সবক্ষেত্রে যে তা পকেটিং তা নাও হতে পারে। তাহলে আসলেই পকেটিংয়ের শিকার হচ্ছেন কি না, বুঝবেন কীভাবে? বোঝা খুবই সহজ। উপরের যে বৈশিষ্ট্যগুলো বলা হলো, তা আছেই। এ ছাড়াও রয়েছে আরো কিছু উপায়–

  • আপনাদের বেশিরভাগ সময় দেখা হয় একটু আড়াল আছে এমন জায়গায়, বা শহরের বাইরে কোথাও। এই জায়গাগুলোতে পরিচিতদের সামনে পড়ার সুযোগ নেই।
  • আপনার সঙ্গীটি কখনোই তার পরিচিত অন্য কারো সঙ্গে দেখা করান না কিংবা দেখা করার কথাও তোলেন না।
  • সঙ্গীর সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে আপনার কোনো উল্লেখ নেই।
  • পিডিএ বা পাবলিকলি শোওন অ্যাফেকশন, সবার সামনে হাত ধরা বা একসঙ্গে হাঁটাচলার ক্ষেত্রে সঙ্গীর মধ্যে সংকোচ কাজ করে।
  • সঙ্গীর পরিবার বা বন্ধুরা কেউই আপনাকে চেনেন না।

কী করবেন

পকেটিং বা এ ধরনের কোনো ঘটনা নিজের সঙ্গে ঘটছে কি না– এ বিষয়ে যদি নিশ্চিত না হতে পারেন, তবে সবার আগে নিজের কাছে স্বীকার করতে হবে যে, 'হ্যাঁ, এমন কিছু আমার সঙ্গেও ঘটতে পারে।'

এর পরবর্তী ধাপ হচ্ছে সম্পর্কে থাকা অপর ব্যক্তিটির সঙ্গে সামনাসামনি কথা বলা এবং এ বিষয়ে আপনার চাহিদাগুলো তাকে জানানো। এমন যদি হয় যে আপনিও একইভাবে এগোতে চাচ্ছেন, আপনার কাছেও এই দুটো জগতের মেলামেশা না ঘটলে খুব একটা সমস্যা হচ্ছে না, তাহলে দুজনের মধ্যে বিষয়টি স্পষ্ট করে নিয়ে সম্পর্ক চালিয়ে যেতে পারেন। আর যদি এমনটা না হয় অর্থাৎ আপনার ও তার চাহিদার মধ্যে পার্থক্য দেখা যায়, সামনাসামনি আলাপের পরও যদি তিনি কারো সঙ্গেই আপনাকে পরিচয় করিয়ে দেওয়া বা জনপরিসরে আপনাদের সম্পর্ককে স্বীকৃতি জানাতে অস্বীকার করেন, তাহলে বুঝতে হবে আপনারা একই সম্পর্কে থাকলেও বর্তমানে দুজন দুই সফরে আছেন। আপনাদের গন্তব্যটা এক নয়। তাই অবস্থা বুঝে ব্যবস্থা নেওয়াটাই হবে বুদ্ধিমানের কাজ।

কেউ যখন পকেটিং করেন, তখন যে তিনি কোনো খারাপ উদ্দেশ্য থেকেই করছেন, এমনটা নাও হতে পারে। এর পেছনে তাদের আগেকার বাজে অভিজ্ঞতা কিংবা সম্পর্কে বেশি জড়িয়ে পড়ার ভয়ও কাজ করতে পারে। এমনও হতে পারে যে নিজেদের ব্যক্তিগত জীবনকে তারা একটু বেশিই নিজের করে রাখতে চান। কারণ যেকোনো কিছুই হতে পারে। তাই সম্পর্ক এগিয়ে নিয়ে যাবেন কি না– সেক্ষেত্রে একে অন্যের চাওয়া-পাওয়ার মধ্যে কতটা মিল রয়েছে এবং পারস্পরিক সম্মানবোধ কতটা প্রবল সেটি বুঝতে হবে।

সেইসঙ্গে এ কথাও মাথায় রাখা জরুরি যে, সব মানুষ আলাদা। সব সম্পর্কের ব্যাকরণ এক রকম নয়। আজকাল হয়তো আমরা খুব বেশিই সাধারণীকরণ করে ফেলছি অনুভূতি ও মানবিক বন্ধনগুলোকে। কিছু শর্তের আদলে শর্ত এনে ভেবে নিচ্ছি, এই তো সত্য! আমাদের ভাবনা ও বাস্তবের মধ্যে সম্পর্কটাও 'ফিফটি-ফিফটি চান্সে'র ওপর নির্ভর করে।

অধুনা অভিধানের সব টার্মই যে সব সম্পর্কের ক্ষেত্রে এক ধরনের ফলাফল নিয়ে আসবে, তা হয়তো নয়। তবে চোখকান খোলা রাখুন, শোষণের শিকার হওয়া বা শোষণ করা উভয় থেকেই বিরত থেকে সম্পর্কগুলো হোক সুস্থ চর্চার। নীরবে-নিভৃতে বা সমগ্র দুনিয়াকে জানান দিয়ে, যেভাবেই হোক না কেন, সম্পর্ক বাঁচুক মানুষের ভালোবাসা ও ভালোলাগায়।

 

Comments

The Daily Star  | English
compensation for uprising martyrs families

Each martyr family to get Tk 30 lakh: Prof Yunus

Vows to rehabilitate them; govt to bear all expenses of uprising injured

5h ago