যে ৫ বৈশিষ্ট্যে বুঝবেন আপনার সম্পর্কটি ফ্লিং

ফ্লিং
ছবি: সংগৃহীত

'ও তো ফ্লিং নিয়েই থাকে, সিরিয়াস সম্পর্কের কোনো ইচ্ছে নেই।'

হতে পারে চেনা-পরিচিত মহলে কাউকে নিয়ে এমন কথা শুনেছেন, কিন্তু বুঝতে পারছেন না বিষয়টি। আদতে ইংরেজি 'ফ্লিং' শব্দটি দ্বারা মূলত ক্ষণস্থায়ী আনন্দের সময়কে বোঝায়। কোনো আবেগীয় সম্পর্ক না থাকার পরও রোমান্টিকভাবে একে অন্যের সঙ্গে সময় কাটানো এবং খুব কম সময়ের মধ্যে ছাড়াছাড়ি হয়ে গেলে শহুরে অভিধানে একে 'ফ্লিং'য়ের তকমা দেওয়া হয়।

ফ্লিং প্রেম নয়

মন দেওয়া-নেওয়ায় মানুষ প্রায়ই ভুল করে। কখনো ভুল মানুষ, তো কখনো ভুল সময়। তবে সবচেয়ে বেশি ভুলটা হয় সম্পর্কের ব্যাকরণ বুঝতে। এমনই একটি বিশাল রকমের ঝামেলা হলো ফ্লিংকে প্রেম ভেবে বসা। কোনটি ফ্লিং এবং কোনটি নয় এবং আপনি কারো ফ্লিং কি না সেটা জানার জন্য চলুন ফ্লিংয়ের ৫টি বৈশিষ্ট্য জেনে নেওয়া যাক।

ভবিষ্যতের কোনো আলাপ নেই

অধিকাংশ ক্ষেত্রে আমরা তার সঙ্গেই ভবিষ্যতের কথা আলোচনা করি, যার সঙ্গে আমাদের ভবিষ্যতের কোনো পরিকল্পনার ইচ্ছা থাকে। ফ্লিংয়ে অন্তত একজন খুব ভালো করেই আগে থেকে জানেন যে তার এই সম্পর্ক নিয়ে বেশিদূর এগোনোর ইচ্ছা নেই। সেক্ষেত্রে ভবিষ্যতের আলাপ এড়িয়ে চলাই তার কাছে বুদ্ধিমানের কাজ। তবে অন্যজনের জন্য সেটি ভোগান্তির হতে পারে, যদি দুজন একই উদ্দেশ্যে না সামনে আগায়।

আবেগ নয়, চাহিদাই মূল কথা

প্রেম, ভালোবাসা– মানব মনের এই অনুভূতিগুলোর শেকড়েই আছে শুধু আবেগ এবং আবেগ। চাহিদা, প্রয়োজন, এমনকি সমাজের বিধিনিষেধের বিষয়গুলোও এক্ষেত্রে পরে আসে। কিন্তু ফ্লিংয়ের ক্ষেত্রে মাঝে মাঝে আবেগকেও বোঝা বলে ভাবা হয়। একদম নিরাবেগ, একে অপরের চাহিদা ও নির্দিষ্ট কিছু সঙ্গের বাইরে ফ্লিংয়ে এর বেশি কিছু থাকে না। এখানে নির্ভরতা, যত্নশীল হওয়া, একে অন্যের ভালো-খারাপে পাশে থাকা কিংবা একসঙ্গে এগিয়ে যাওয়ার মনোভাব এ ধরনের সম্পর্কে দেখা যায় না। শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত, 'চলছে চলুক' গোছের আবহ লক্ষ করা যায়।

পরিচিতজনদের সঙ্গে পরিচয় না করানো

ব্যক্তির আত্মবিশ্বাস যদি চূড়ান্ত মাত্রার না হয়, তবে অধিকাংশ ক্ষেত্রেই ফ্লিংয়ের ক্ষেত্রে এমনটি ঘটে থাকে। উভয় পক্ষের বন্ধুবান্ধব, পরিবারের লোকজনের সঙ্গে কোনো পরিচয়ের প্রসঙ্গই আসতে দেওয়া হয় না। এমনকি এক পক্ষ, যিনি কিনা বিষয়টিকে হয়তো ফ্লিং হিসেবে নিচ্ছেন না– তিনি যদি বা পরিচয়ের ইচ্ছা প্রকাশও করেন, অপরপক্ষ কোনো না কোনো অজুহাতে সেটিকে দূরে সরিয়ে দেন। ফ্লিংয়ের মধ্যে অনেক বেশি লুকিয়ে রাখার মনোভাব দেখা যায়। কারণ এর ক্ষণস্থায়িত্ব সম্পর্কে ব্যক্তি আগে থেকেই জানেন। তাই বেশি মানুষকে জানিয়ে এই সম্পর্কের নাম দেওয়ার কোনো ইচ্ছা তার থাকে না।

অন্য কারো প্রতি রোমান্টিকভাবে আগ্রহী হওয়া

ফ্লিংয়ে যেহেতু কোনো দায়িত্ব বা একগামিতার বিষয় নেই, তাই অন্য নারী-পুরুষ সম্পর্কে রোমান্টিক আগ্রহ দেখানো, তাদের প্রতি নিজের অনুভূতির কথা খুব খোলামেলাভাবে প্রকাশ করাও এর একটি বৈশিষ্ট্য হতে পারে। অবশ্য কেউ কেউ হয়তো সেটিকে বন্ধুত্বসুলভ আচরণ হিসেবেও দেখতে পারেন। কিন্তু সাধারণ প্রেক্ষাপটে এমনটাই হয়ে থাকে।

একে অন্যকে জানার ইচ্ছে নেই

একটি সম্পর্ক তখনই পাকাপোক্ত বুনিয়াদে গড়ে ওঠে, যখন একে অন্যকে ভালোভাবে জানে, বোঝে। কিন্তু ফ্লিং যেহেতু খুবই ক্ষণস্থায়ী একটি বিষয়, সেক্ষেত্রে অন্যকে জানবার বা বুঝবার, বিশেষ করে অনুভব করার কোনো চেষ্টা থাকে না। নিজেদের মন খারাপ, কোনো অতীতের দুঃখ, এমনকি সাফল্য নিয়েও ফ্লিংয়ে খুব একটা কথা হয় না, এমনকি কথা বলার প্রবণতাও দেখা যায় না। চাহিদামাফিক সঙ্গযাপনই এর মূল উদ্দেশ্য এবং সম্পর্কে থাকার কারণ।

যদি দুজনের মধ্যে একজনের কাছ থেকে উপরোক্ত এই আচরণগুলো পাওয়া যায় এবং অন্যজন দ্বিধায় থাকেন, তবে তাকে ধরে নিতে হবে যে এই সম্পর্কটি ফ্লিং হওয়ার সম্ভাবনা খুবই বেশি।

আদতে একটি প্রকৃত রোমান্টিক সম্পর্ক ও ফ্লিংয়ের মধ্যকার পার্থক্য মোটাদাগে দুটো জায়গায়। স্থায়িত্ব ও দায়বদ্ধতার ক্ষেত্রে। যদি দুজনের মধ্যে এই দুটো বিষয় খুবই কম, বিশেষ করে 'না'য়ের বরাবর থাকে, তবে সেটি বেশিরভাগ ক্ষেত্রে ফ্লিং। তবে ফ্লিং থেকেও যে মানুষ আরো কয়েক ধাপ এগিয়ে সত্যিকার প্রেমের সম্পর্কের ধাপে প্রবেশ করে না, তাও নয়।

ফ্লিং থেকে শুরু হলেও দুজনের মধ্যকার যোগাযোগ, বন্ধন যদি অনেক বেশি সফল হয়– তবে সম্ভাবনা রয়েছে যে তারা দুজন পরে দায়বদ্ধতার দিকে এগোবেন। অবশ্য কারো কারো চাহিদাই থাকে, কোনো ঝুটঝামেলাবিহীন ও কেবল চাহিদাসম্পন্ন সম্পর্কের। এ ধরনের সম্পর্কে ব্যক্তি কোনো পিছুটান চান না এবং নিজের জন্য অন্য সুযোগগুলোও রাখতে চায়। ফ্লিং কারো জন্য সুস্থ চর্চা কি না, সেটি তার ব্যক্তিত্ব, পছন্দ, প্রয়োজন ও পরিস্থিতি এসব বিষয়ের উপর নির্ভর করে। কিন্তু এমন সম্পর্কের উভয় পক্ষই যাতে বিষয়টির খুঁটিনাটি জানে এবং কেউ কষ্ট না পায়, সেদিকে সবারই খেয়াল রাখা দরকার।

 

Comments

The Daily Star  | English

Polythene ban: A litmus test for will and eco-innovation

Although Bangladesh became the first country in the world to announce a complete ban on the use of polythene bags in 2002, strict enforcement of the much-lauded initiative has only started taking shape recently.

14h ago