আপনার সঙ্গী ‘গ্রিন ফ্ল্যাগ’ কি না বুঝবেন যেভাবে

সম্পর্কে গ্রিন ফ্ল্যাগ
ছবি: সংগৃহীত

জীবনের যানজটে, পথেঘাটে এত এত রেড ফ্ল্যাগের ভিড়ে নিজের জীবনে প্রেমের সম্পর্ক এগিয়ে নিতে একজন তরতাজা গ্রিন ফ্ল্যাগ কে না চায়? এই চাওয়াটা খুবই স্বাভাবিক। কিন্তু গানে গানে তো আগেই জেনে গেছি– বাড়লেও বয়স মানুষ চেনা সবসময়ই দায়। কিন্তু সম্পর্কে থাকাকালীন বা পছন্দের সঙ্গী বেছে নেওয়ার সময়টাতে কিছু নির্দিষ্ট বৈশিষ্ট্য চোখ খুলে দেখলে এবং খেয়াল করলেই জানতে ও চিনতে পারবেন, সেই মানুষটি আদতে আপনার জন্য গ্রিন ফ্ল্যাগ কি না।

সম্মান

প্রেমিক-প্রেমিকা হোক বা স্বামী-স্ত্রী, সম্পর্কের মানচিত্রে যখন সম্মান নামের জায়গাটি নড়বড়ে হয়ে যায়, তখন যতই ভালোবাসা থাকুক না কেন, তা ঠিক মাপমতো ঘর বাঁধার জন্য বা একইসঙ্গে বসবাসের জন্য ঠিকঠাক হয় না। তাই একে অপরের প্রতি সম্মানটা থাকা খুব জরুরি। নিজেদের মতাদর্শ, জীবনকে দেখার দৃষ্টিভঙ্গি, চলন-বলন, আদতে পুরো জীবনযাত্রার প্রতিই যদি পারস্পরিক সম্মান বজায় থাকে, তবে সম্পর্কের সবুজ-জ্যান্ত ভাবটা খুব সহজে মিইয়ে যাবে না- এ কথা অকপটে বলে দেওয়া যায়।

আবেগের মূল্য দেওয়া

আবেগের পরিচর্যা, এমনকি তার চর্চাও একেক জনের কাছে একেক রকম। আর সেই বহু রকমের মধ্যে দুটি মানুষের মধ্যে যখন আবেগকে নেড়েচেড়ে বেশ ভারসাম্যময় একটা অবস্থায় পৌঁছানো যায়, তবে তারা একে অপরের জন্য উপযুক্ত সঙ্গী হবার দৌড়ে অনেকটাই এগিয়ে আছেন। কেউ যদি আপনার মতো করেই আপনার আবেগগুলোকে ধরে রাখতে চান, তার মূল্য দিতে জানেন– তবে সেই ব্যক্তিটি সঙ্গী হিসেবে আপনাকে ভালো রাখার জন্য অনেকটাই সম্ভাবনাময়। এমন মানুষ খুঁজে পেতে কারো কারো সারাটা জীবন চলে যায়। কেউ কেউ আবার পরশপাথর না চিনে ছুড়ে ফেলে দিতেও দ্বিধা করেন না। তাই আবেগের মূল্যটা দুদিক থেকেই যাতে সমানভাবে দেওয়া হয়, সম্পর্ক সুস্থ রাখতে সেকথাও মাথায় রাখতে হবে।

দায়িত্ব নিতে জানে

দায় এড়ানোর মনমানসিকতা আসে যখন কেউ সম্পর্কের ক্ষেত্রে অন্য সম্ভাবনার কথা ভাবছেন বা এই জায়গায় তিনি নিশ্চিত নন, তখন। তাই কেউ যদি নিজে থেকে দায়িত্ব নিতে জানেন এবং আপনার জন্য দায়িত্ব নিতে ভালোবাসেন এবং তার প্রতিও আপনি নিজের মধ্যেও একই ধরনের অনুভূতি খুঁজে পান তবে প্রেমের গ্রিন সিগন্যালে মনের দুচাকার গাড়ি ছেড়ে দিতে দেরি কীসের?

মানসিক নিরাপত্তা

আমাদের গোপনতম ইচ্ছের ঝাঁপি খোলা হোক বা নিজের সম্পর্কে নিজেরই ভয়ের বিষয়গুলো– তা যদি অপর ব্যক্তিকে বলার পরও নিজেকে অনিরাপদ না মনে হয়, বিশ্বস্ততার কোনো ঘাটতি না ঘটে, তবে এই ব্যক্তির সঙ্গে যাত্রাটা সুখের চাইতেও বেশি স্বস্তির হয়। মানুষ সাধারণত নিজের ঘরে নিরাপদ বোধ করে, নিজের পরিবারের মধ্যে নিরাপত্তা খুঁজে পায়। ঠিক একইভাবে বা আলাদা কোনো মাত্রায় যদি অন্য একটি মানুষকে 'ঘর' বলে মনে হয়, তবে তিনিই উপযুক্ত সঙ্গী হতে পারেন। সঙ্গী নির্বাচনের ক্ষেত্রে যদি এমন কাউকে পাওয়া যায়, যার সঙ্গে আপনি মানসিকভাবে নিরাপদ বোধ করছেন– তাহলে নিঃসন্দেহে তাকে গ্রিন ফ্ল্যাগ বলে ধরে নেওয়া যায়।

সক্রিয় যোগাযোগ

'যোগাযোগ'। চার অক্ষরের এই সন্ধিজন্মের শব্দটি কাউকে কাউকে তার গন্তব্যের কাছে পৌঁছে দেয়, আর কাউকে সারা জীবনভর গোলকধাঁধায় ঘুরিয়ে বেড়ায়। আমাদের বর্তমান এই যুগটায় যোগাযোগের মাধ্যমের কোনো শেষ নেই। কিন্তু অনেক ক্ষেত্রেই অভাব রয়েছে যোগাযোগের। এত এত মাধ্যম থেকে যদি মনের মানুষটার সঙ্গে মনের মতো করে যোগাযোগ না হয়– তবে সে সম্পর্ক কি আদৌ মনকে ভালো রাখতে পারে? তাই নিজেদের মধ্যে যোগাযোগটা পাকা করে রাখা, দালানকোঠা পাকা করার চেয়েও দরকারি।

আমরা কে কেমন আছি– কে কেমন থাকতে চাই, কতদূর পথ পেরিয়ে জীবনের কাছে কী আশা করি? এমন সব বহু বিমূর্ত কিন্তু খুব জরুরি প্রশ্নোত্তর পর্ব যদি মনের আকাশে মেঘ না এনে শীতের রোদের মতো মিষ্টি আলোতে ছুঁয়ে যায় দুজন সঙ্গীর দিনকাল, তবে সে সম্পর্কে ঝোড়ো হাওয়াও রোমাঞ্চকর অভিযান বৈ আর কিছু নয়।

বর্তমানে সবাই-ই এই গ্রিন ফ্ল্যাগ/রেড ফ্ল্যাগের বিভক্তিতে মশগুল। কিন্তু দিনশেষে সত্যি কথাটা এই যে, ভীষণ রকম রেড ফ্ল্যাগ দুটো মানুষের মধ্যেও যদি হৃদয়ের আদান-প্রদানের সুরটা সবচেয়ে মধুর তানে বাজে, তবে তারাও একে অপরের জন্য গ্রিন ফ্ল্যাগ হয়ে যেতে অবিলম্বে রাজি হয়ে যান। সম্পর্কের গ্রিন ফ্ল্যাগটা ব্যক্তির চারিত্রিক বৈশিষ্ট্যের চেয়েও অনেক মাত্রায় বেশি এই দুজন মানুষের সবরকম তালমিলের ওপর নির্ভর করে। কারণ অনেক সময় দুটো ভীষণ ভালো মানুষও একসঙ্গে ভালো থাকতে পারেন না, অন্যদিকে বহু স্বার্থপর মানুষ যে যার মতো করে সঙ্গী খুঁজে নিয়ে সুখে জীবন পার করে দেন। তাই আদতে কে কার জন্য গ্রিন ফ্ল্যাগ, তা তাদের মনের চাহিদা আর দিনের যাপনই খুঁজে এনে দেবে।

 

Comments

The Daily Star  | English
International Crimes Tribunal 2 formed

Govt issues gazette notification allowing ICT to try political parties

The new provisions, published in the Bangladesh Gazette, introduce key definitions and enforcement measures that could reshape judicial proceedings under the tribunals

5h ago