পান্তা ভাতের যত পুষ্টিগুণ

পান্তা ভাতের উপকারিতা
ছবি: সংগৃহীত

পান্তা ভাত খাওয়ার প্রচলন আমাদের দেশে বহুকাল ধরেই। রাতের খাবারের পর রয়ে যাওয়া অতিরিক্ত ভাত পানি দিয়ে ভিজিয়ে রাখলে সেটি হয় পান্তা ভাত। গ্রামে সকালের খাবার হিসেবে পান্তা ভাত খাওয়া হয়, বিশেষ করে গরমকালে। শহুরে জীবনে পান্তা ভাতের স্থান নেই বললেই চলে। তবে শখের বশে নববর্ষ বা বিভিন্ন উৎসবে খাওয়া হয় পান্তা ভাত। কিন্তু আপনি যদি পান্তা ভাতের উপকারিতা সম্পর্কে জানেন তখন পান্তা ভাত গ্রহণে উৎসাহিত হবেন।

পান্তার উপকারিতা সম্পর্কে আমাদের জানিয়েছেন হলিক্রস মেডিকেল অ্যান্ড ডায়াগনস্টিক সেন্টারের পুষ্টিবিদ মাহিনুর ফেরদৌস।

তিনি বলেন, গবেষণায় দেখা গেছে সাধারণত আমরা যে ভাত খাই তার থেকে পান্তা ভাতের পুষ্টিগুণ অনেক বেশি। পান্তা ভাতে আছে বিভিন্ন মাইক্রোনিউট্রিয়েন্ট। এগুলো হলো আয়রন, ক্যালসিয়াম, ম্যাগনেসিয়াম, পটাশিয়াম, জিঙ্ক, ফসফরাস, ভিটামিন বি -৬, ভিটামিন বি-১২ ইত্যাদি। পান্তা ভাতে সাধারণ চালের চেয়ে অনেক বেশি পুষ্টি উপাদান রয়েছে। যেমন ১০০ মিলিগ্রাম সাধারণ চালে ৩.৫ মিলিগ্রাম আয়রন থাকে কিন্তু একই পরিমাণ পান্তা  ভাতে ৭৩.৯ মিলিগ্রাম আয়রন থাকে। একইভাবে ক্যালসিয়ামের পরিমাণও অনেক বেড়ে যায়। যেখানে ১০০ মিলিগ্রাম সাধারণ চালে ২১ মিলিগ্রাম ক্যালসিয়াম থাকে, সেখানে পান্তা ভাতে ৮৫ মিলিগ্রাম থাকে। এ ছাড়া পান্তা ভাতে পটাশিয়াম, ম্যাগনেসিয়াম ও জিঙ্কের পরিমাণও বেশি পাওয়া যায়।

পান্তা ভাত যদি লাল চাল দিয়ে তৈরি করা হয় তাহলে এর পুষ্টিগুণ সাদা চালের পান্তার চেয়ে বেশি হবে। কারণ সাদা চালের তুলনায় লাল চাল তুলনামূলকভাবে বেশি পুষ্টিকর।

পান্তা ভাত স্বাস্থ্যকর কেন

  • পান্তা ভাত একটি অন্ত্র-বান্ধব খাবার। এটি প্রোবায়োটিক সমৃদ্ধ তাই অন্ত্রের সংক্রমণ রোধ করে এবং শরীরে শক্তিশালী রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা তৈরি করতে পারে।
  • পান্তা ভাতে ল্যাকটিক এসিড ব্যাকটেরিয়া রয়েছে যা স্বাস্থ্যের জন্য উপকারী। সাধারণত দইয়ের মধ্যে এই ব্যাকটেরিয়া পাওয়া যায়।
  • পান্তা ভাত হজমশক্তি বাড়ায়। খাবার দ্রুত হজমে সহায়তা করে।
  • অন্ত্রের পাশাপাশি গ্যাস্ট্রোইনটেস্টাইনাল সমস্যা নিরাময় বা প্রতিরোধ করতে সাহায্য করে এবং শরীরকে ঠান্ডা রাখে।
  • ত্বকের উজ্জ্বলতা বাড়ায়, চুলকে করে সুন্দর।
  • পান্তা ভাতে পানির পরিমাণ বেশি থাকে। তাই পানিশূন্যতা দূর করতে সাহায্য করে এটি।
  • পান্তা ভাতে ভিটামিন বি ১২ এর উপস্থিতির কারণে ক্লান্তি কমাতে কাজ করে, শরীরকে সতেজ রাখে, দুর্বলতা নিরাময় করে।
  • যারা অনিদ্রায় ভুগছেন তাদের জন্য এটি অত্যন্ত উপকারী খাবার।

কীভাবে পান্তা ভাতের পুষ্টি বাড়ানো যায়?

পান্তা ভাত নিজেই একটি পুষ্টিকর খাবার। এটির সঙ্গে অন্যান্য খাবার যোগ করে খাওয়া হয়। আমাদের দেশে পান্তা ভাত ইলিশ মাছ, শুঁটকি, নানা পদের ভর্তা, ভাজির সঙ্গে পরিবেশন করা হয়। ফলে তা আরও বেশি পুষ্টিকর হয়।

সতর্কতা

  • পান্তা ভাত তৈরিতে অবশ্যই বিশুদ্ধ খাবার পানি ব্যবহার করতে হবে।
  • যে পাত্রে পান্তা করা হবে, সেই পাত্রটি অবশ্যই ঢেকে রাখতে হবে। ধুলাবালিমুক্ত জায়গায় রাখতে হবে।
  • পান্তা যেহেতু দীর্ঘ সময় ফার্মেন্টেড থাকে, তাই এটি গ্রহণে ঘুম ঘুম ভাব হয়।
  • দীর্ঘ সময় ফার্মেন্টেড থাকলে,সেই পান্তা গ্রহণে পেটের পীড়া বা ডায়রিয়া হতে পারে।
  • ডায়াবেটিস রোগী ও যাদের ওজন আধিক্য আছে, তাদের পান্তা গ্রহণ না করাই ভালো।

     

Comments

The Daily Star  | English

Teknaf customs in limbo as 19 mt of rice, authorised by AA, reaches port

The consignment of rice weighing 19 metric tonnes arrived at Teknaf land port on Tuesday evening with the documents sealed and signed by the Arakan Army

5h ago