জিম্মি মুক্তির ‘অপমানজনক’ অনুষ্ঠান বন্ধ না করলে ফিলিস্তিনিদের মুক্তি দেব না: নেতানিয়াহু

ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু। ছবি: এএফপি
ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু। ছবি: এএফপি

গাজার যুদ্ধবিরতির প্রথম পর্যায়ের চুক্তি অনুযায়ী শনিবার ছয় ইসরায়েলি জিম্মিকে মুক্তি দিয়েছে হামাস। তা সত্ত্বেও, ইসরায়েল ফিলিস্তিনি বন্দিদের মুক্তি দিতে অস্বীকার করেছে। ইসরায়েলের দাবি, যুদ্ধবিরতির শর্ত লঙ্ঘন করেছে হামাস।

আজ রোববার এই তথ্য জানিয়েছে এএফপি।

ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুর দাবি, প্রতিবার জিম্মিদের মুক্তির সময় হামাস একটি অনুষ্ঠানের আয়োজন করে, যা 'অপমানজনক'। এটা বন্ধ করতে হবে।

'অপমানজনক অনুষ্ঠান'

১৯ জানুয়ারি থেকে শুরু হওয়া যুদ্ধবিরতির অংশ হিসেবে হামাস ২৫ জন জিম্মিকে মুক্তি দিয়েছে। প্রতি দফায় মুক্তি দেওয়ার সময় জিম্মিদের পদযাত্রার মাধ্যমে মঞ্চে নিয়ে আসেন হামাসের যোদ্ধারা। ইসরায়েলের দাবি, হামাস সদস্যরা জিম্মিদেরকে উপস্থিত গাজাবাসীর উদ্দেশ্যে হাত নেড়ে অভিবাদন জানাতে বাধ্য করেন।

হামাসের জিম্মি মুক্তির অনুষ্ঠানকে অপমানজনক বলে অভিহিত করেছেন নেতানিয়াহু। ছবি: এএফপি
হামাসের জিম্মি মুক্তির অনুষ্ঠানকে অপমানজনক বলে অভিহিত করেছেন নেতানিয়াহু। ছবি: এএফপি

সপ্তম দফার জিম্মি-বন্দি বিনিময়ের অংশ হিসেবে শনিবার ছয় জিম্মিকে মুক্তি দেয় হামাস। কিন্তু ইসরায়েলের এই দফায় ৬০০ জনেরও বেশি বন্দিকে মুক্তি দেওয়ার কথা থাকলেও তারা তা করেনি।

এ বিষয়টিকে হামাস যুদ্ধবিরতি চুক্তির বড় আকারের লঙ্ঘন বলে অভিহিত করেছে।

নেতানিয়াহুর কার্যালয় থেকে দেওয়া বিবৃতিতে বলা হয়েছে, 'হামাস বারবার (চুক্তির শর্ত) লঙ্ঘন করেছে, যার মধ্যে আছে অপমানজনক অনুষ্ঠানের মাধ্যমে আমাদের জিম্মিদের অসম্মানের করা এবং প্রোপাগান্ডার কাজে তাদেরকে ব্যবহার করা, যা খুবই নিন্দনীয়। এ সব কারণে আমরা জঙ্গিদের (ফিলিস্তিনি) মুক্তি দেওয়ার বিষয়টি স্থগিত রাখছি।'

এই বিরতি ততক্ষণ পর্যন্ত চলবে, যতক্ষণ না 'এ ধরনের অপমানজনক অনুষ্ঠান ছাড়া পরবর্তী জিম্মিদের মুক্তি দেওয়ার বিষয়টি নিশ্চিত হয়।'

নেতানিয়াহুর ঘোষণার আগে হামাসের মুখপাত্র আবদেল লতিফ আল-কানৌউ বলেন, 'পূর্বনির্ধারিত সময়সীমার মধ্যে বন্দিদের মুক্তি নিশ্চিতে ইসরায়েলের ব্যর্থতা চুক্তির বড় আকারের লঙ্ঘন।'

কানৌ চুক্তির মধ্যস্থতাকারীদের আহ্বান জানান ইসরায়েলের ওপর চাপ সৃষ্টি করতে, যাতে তারা 'আর কোন ধরনের বাধা বা বিলম্ব ছাড়াই চুক্তির শর্ত পালন করে।'

যুদ্ধবিরতি চুক্তির প্রথম পর্যায়ে যেসব জীবিত ইসরায়েলি জিম্মির মুক্তি পাওয়ার কথা ছিল, তারা সবাই ইতোমধ্যে মুক্তি পেয়েছেন।

যুদ্ধবিরতির দ্বিতীয় পর্যায় নিয়ে ধোঁয়াশা

মার্চের শুরুতে প্রথম পর্যায়ের মেয়াদ শেষ হবে।

তবে এখনো দ্বিতীয় পর্যায়ের চুক্তি বা যুদ্ধবিরতি নিয়ে কোনো ধরনের আলোচনা শুরু হয়নি। দ্বিতীয় পর্যায়ের লক্ষ্য এ অঞ্চলে স্থায়ীভাবে যুদ্ধের অবসান ঘটানো।

হামাসের রাজনৈতিক শাখার জ্যেষ্ঠ সদস্য বাসেম নাঈম। ফাইল ছবি: রয়টার্স
হামাসের রাজনৈতিক শাখার জ্যেষ্ঠ সদস্য বাসেম নাঈম। ফাইল ছবি: রয়টার্স

তবে এখনো আলোচনা শুরুর বিষয়ে কোনো উদ্যোগে সাড়া দেয়নি ইসরায়েল। যার ফলে ইসরায়েলের উদ্দেশ্য নিয়ে জল্পনা-কল্পনা চলছে।

হামাসের অভিযোগ, ইসরায়েল সরকার চলমান যুদ্ধবিরতি চুক্তির দ্বিতীয় ধাপ নিয়ে আলোচনায় যুক্ত হচ্ছে না। প্রথম ধাপের মেয়াদ শেষের আগেই আলোচনার মাধ্যমে পরবর্তী পর্যায় নিয়ে ঐকমত্যে পৌঁছানোর কথা।

গতকাল শনিবার আল-জাজিরাকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে হামাসের রাজনৈতিক শাখার জ্যেষ্ঠ সদস্য বাসেম নাঈম অভিযোগ করেন, 'গাজায় চলমান যুদ্ধবিরতি চুক্তি নস্যাৎ করতে ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু 'নোংরা খেলা' খেলছেন।

বাসেম নাঈম বলেন, 'আমরা বিশ্বাস করি, আবারও এই চুক্তিকে ভণ্ডুল ও গুরুত্বহীন করার নোংরা খেলা চলছে। আর এই খেলার মাধ্যমে আবার নতুন করে যুদ্ধে ফিরে যাওয়ার বার্তা দেওয়া হচ্ছে।'

হামাসের এই নেতার অভিযোগ, ইসরায়েল চুক্তির শর্ত ভঙ্গ করছে। চুক্তির প্রথম পর্যায় কার্যকর থাকার মেয়াদকালে শতাধিক ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন। প্রতিশ্রুতি মেনে পর্যাপ্ত মানবিক সহায়তা গাজায় ঢুকতে দেওয়া হয়নি। নেতজারিম করিডর (গাজার উত্তর ও দক্ষিণের মধ্যে সংযোগকারী সংকীর্ণ পথ) থেকে সেনা প্রত্যাহার স্থগিত রাখা হয়েছিল।

২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর ইসরায়েলে হামলা চালিয়ে ২৫১ ব্যক্তিকে জিম্মি করে হামাস। তাদের মধ্যে এখনো ৬২ জন গাজায় আছেন। ইসরায়েলি সামরিক বাহিনীর মতে, তাদের মধ্যে ৩৫ জন ইতোমধ্যে নিহত হয়েছেন।

১৫ মাসে ইসরায়েলের প্রতিশোধমূলক হামলায় অন্তত ৪৮ হাজার ৩১৩ ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন, যাদের বেশিরভাগই বেসামরিক নারী ও শিশু।

Comments

The Daily Star  | English

Israel says it targeted nuclear sites in Iran's Natanz and Arak overnight

Iran and Israel traded further air attacks on Thursday as Trump kept the world guessing about whether the US would join Israel's bombardment of Iranian nuclear facilities.

13h ago