ইসরায়েলের গণহত্যা: ৬০০ দিনে ৫৪ হাজার ফিলিস্তিনি নিহত

নিহত শিশুর মরদেহ কোলে এক ফিলিস্তিনি। ছবি: এএফপি
নিহত শিশুর মরদেহ কোলে এক ফিলিস্তিনি। ছবি: এএফপি

ফিলিস্তিনি সশস্ত্র সংগঠন হামাসের অতর্কিত হামলার প্রতিশোধ নিতে গাজায় ইসরায়েলের নজিরবিহীন সামরিক অভিযানের ৬০০ দিন পার হয়েছে।

এ সময়ে একে একে প্রাণ হারিয়েছেন ৫৪ হাজারেরও বেশি ফিলিস্তিনি, যাদের বেশিরভাগই নারী ও শিশু।

আজ মঙ্গলবার গাজার হামাস নিয়ন্ত্রিত স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের বরাত দিয়ে এই তথ্য জানিয়েছে কাতারভিত্তিক গণমাধ্যম আল জাজিরা ও তুরস্কের সরকারি গণমাধ্যম আনাদোলু এজেন্সি।

নিহত স্বজন-প্রতিবেশীদের মরদেহের সামনে বসে আছেন এক ফিলিস্তিনি। ছবি: এএফপি
নিহত স্বজন-প্রতিবেশীদের মরদেহের সামনে বসে আছেন এক ফিলিস্তিনি। ছবি: এএফপি

২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর ইসরায়েলি ভূখণ্ডে অতর্কিত হামলা চালায় হামাস। ওই হামলায় প্রায় এক হাজার ২০০ ইসরায়েলি নিহত হন এবং হামাসের হাতে জিম্মি হন আরও প্রায় ২৫০ জন।

সেদিনই শুরু হয় ইসরায়েলের প্রতিশোধমূলক হামলা। শুরুতে আকাশ হামলা, পরবর্তীতে স্থল ও নৌপথেও আসতে থাকে ইসরায়েলি হামলা। অত্যাধুনিক অস্ত্র ও প্রযুক্তির ব্যবহারে ফিলিস্তিনিদের জীবন বিপর্যস্ত হয়ে পড়ে। দ্রুত বাড়তে থাকে হতাহতের সংখ্যা।

মাঝে দুই দফায় প্রায় দুই মাস যুদ্ধ বন্ধ থাকলেও বাকি সময়টাজুড়ে অব্যাহত ছিল ইসরায়েলের গণহত্যামূলক যুদ্ধ। এই যুদ্ধে প্রাণ হারিয়েছেন ৫৪ হাজার ৫৬ জন ফিলিস্তিনি।

গাজার শতভাগ নিয়ন্ত্রণ নেবেন নেতানিয়াহু

গাজায় ইসরায়েলি সামরিক বাহিনীর হামলার মাত্রা বেড়েছে। ছবি: এএফপি
গাজায় ইসরায়েলি সামরিক বাহিনীর হামলার মাত্রা বেড়েছে। ছবি: এএফপি

সম্প্রতি গাজার শতভাগ নিয়ন্ত্রণ নেওয়ার পরিকল্পনার কথা জানিয়েছেন ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু।

গত সপ্তাহে এক ভিডিও বার্তায় নেতানিয়াহু বলেন, 'লড়াই চলছে, আমরা অগ্রসর হচ্ছি। গাজার প্রতিটি ইঞ্চি আমরা দখলে নেব। সফল হতে হলে আমাদের এমনভাবে লড়তে হবে, যাতে কেউ আমাদের থামাতে না পারে।'

পরবর্তীতে ইসরায়েল হাইয়োম সংবাদমাধ্যম জানায়, সেনাবাহিনী আগামী তিন মাসের মধ্যে বিস্তৃত সামরিক অভিযানের মাধ্যমে গাজার ৭০ থেকে ৭৫ শতাংশ ভূখণ্ডের পূর্ণ নিয়ন্ত্রণ হাতে নিতে চায় ইসরায়েল।

রোববার বিবিসি জানিয়েছে, গাজা উপত্যকার ৭৭ শতাংশ ভূখণ্ড এখন ইসরায়েলের নিয়ন্ত্রণে রয়েছে। এতে গাজার ক্ষুদ্র একটি অংশের মধ্যে আবদ্ধ হয়ে পড়েছেন ফিলিস্তিনিরা। অবিরাম হামলা ও অনাহার তাঁদের দুর্দশা আরও বাড়িয়েছে।

ইসরায়েল-হামাস যুদ্ধের ৬০০ দিন

আত্মীয় পরিজন হারিয়ে আহাজারি করছেন ফিলিস্তিনি নারীরা। ছবি: এএফপি
আত্মীয় পরিজন হারিয়ে আহাজারি করছেন ফিলিস্তিনি নারীরা। ছবি: এএফপি

আগামীকাল বুধবার এই যুদ্ধ ৬০০তম দিনে পদার্পণ করতে যাচ্ছে। বিশ্লেষকদের মতে, অন্য যেকোনো সময়ের তুলনায় ইসরায়েলি হামলার তীব্রতা এখন সবচেয়ে বেশি।

কাতারের মধ্যস্থতায় চালু হওয়া যুদ্ধবিরতি ও বন্দি বিনিময় চুক্তিকে অবজ্ঞা করে ১৮ মার্চ থেকে নবোদ্যমে হামলা শুরু করেছে নেতানিয়াহুর দেশ। এরপর থেকে প্রাণ হারিয়েছেন তিন হাজার ৯০১ ও আহত হয়েছেন আরও ১১ হাজার ফিলিস্তিনি। 

স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের বিবৃতিতে বলা হয়েছে, গত ২৪ ঘণ্টায় হাসপাতালে ৭৯ জনের মরদেহ নিয়ে আসা হয়েছে। আরও ১৬৩ জন আহত হয়েছে।

সব মিলিয়ে ইসরায়েলি হামলায় এক লাখ ২৩ হাজার ১২৯ জন ফিলিস্তিনি আহত হয়েছেন।

বিবৃতিতে বলা হয়, 'অসংখ্য মানুষ এখনো ধ্বংসস্তূপের নিচে ও সড়কে পড়ে আছেন। উদ্ধারকারীরা এখনো তাদের কাছে পৌঁছাতে পারেনি।'

গত নভেম্বরে আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালত ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রী নেতানিয়াহু ও সাবেক প্রতিরক্ষামন্ত্রী ইয়ভ গ্যালান্টের বিরুদ্ধে যুদ্ধাপরাধ ও মানবিকতার বিরুদ্ধে অপরাধের অভিযোগে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করেছিল।

পাশাপাশি, আন্তর্জাতিক বিচার আদালতেও ইসরায়েলের বিরুদ্ধে একটি গণহত্যার মামলা চলছে। ওই মামলার মূল অভিযোগ, গাজা উপত্যকার নিরীহ, নিরপরাধ মানুষের বিরুদ্ধে যুদ্ধাপরাধে জড়িত থাকা।

তবে এসবের কিছুই নেতানিয়াহুকে তার পরিকল্পনা থেকে টলাতে পারেনি। অবস্তাদৃষ্টে মনে হচ্ছে, গাজাকে ফিলিস্তিনিশূন্য করেই ক্ষান্ত দেবেন তিনি। 

হামাসের বিবৃতি

ধ্বংসযজ্ঞের মাঝে এক ফিলিস্তিনি নারী শূন্য দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছেন। ছবি: এএফপি
ধ্বংসযজ্ঞের মাঝে এক ফিলিস্তিনি নারী শূন্য দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছেন। ছবি: এএফপি

গাজার যুদ্ধের ৬০০তম দিনকে সামনে রেখে বিবৃতি দিয়েছে হামাস।

ওই বিবৃতিতে সশস্ত্র সংগঠনটি 'গাজা উপত্যকার সঙ্গে একাত্মতা প্রকাশ করে দখলদার ইসরায়েলিদের বিরুদ্ধে প্রতিবাদী কণ্ঠস্বর জোরালো করার' আহ্বান জানিয়েছে।

হামাস বিভিন্ন সংস্থা ও সংগঠনকে 'বিশ্বের প্রতিটি শহরে, প্রতিটি চত্বরে এই আগ্রাসন, নিধন ও আমাদের জনগোষ্ঠীকে অনাহারে রাখার পদক্ষেপের বিরুদ্ধে সব ধরণের প্রতিবাদী উদ্যোগ' নেওয়ার আহ্বান জানিয়েছে। 

'আগামী দিনগুলোতে সারা বিশ্বের মানুষ শহরে ও চত্বরে গণ-অবস্থান ধর্মঘট, বিক্ষোভ ও সমাবেশের মাধ্যমে তাদের ক্রোধের বহিঃপ্রকাশ ঘটাবেন, এমনটাই আমরা আশা করছি', যোগ করে হামাস।

 

Comments