কেন দেখবেন তামিল থ্রিলার ‘রাতসাসান’

ছবি: সংগৃহীত

সারসংক্ষেপ: একজন সিরিয়াল কিলার স্কুলশিক্ষার্থীদের হত্যা করছে। পরে নবাগত পুলিশ কর্মকর্তা সিরিয়াল কিলারের শিকার সংখ্যা বৃদ্ধির আগে তাকে খুঁজে বের করবেন।

মুভি রিভিউ: রাতসাসানের শুরুতে একটি হত্যা দেখতে পাবেন দর্শক। একজন রহস্যময় আততায়ী ওই নারীর দিকে দিকে এগিয়ে যাবেন এবং কুড়াল দিয়ে তাকে আঘাত করতে শুরু করবেন। এ দৃশ্য দেখে দর্শক কষ্ট পাবেন কিন্তু পরক্ষণে দেখা যাবে এটি আসলে একটি চলচ্চিত্রের শুটিং। পরের মুহূর্তে দর্শক এটাও জানতে পারবেন যে, অরুণ কুমারের (বিষ্ণু বিশাল) উচ্চাকাঙ্ক্ষী স্বপ্ন একজন চলচ্চিত্র নির্মাতা হওয়ার। অরুণ একটি সিরিয়াল কিলারের ওপর সিনেমা তৈরি করতে চান। কিন্তু, যেসব প্রযোজকের কাছে গেছেন সবাই তাকে প্রত্যাখ্যান করেন। এই দৃশ্যগুলো পরিচালক রাম কুমার একটি রেফারেন্স হিসেবে ব্যবহার করেছেন বলে মনে হচ্ছে। কারণ, এরপরই অরুণকে এই স্ক্রিপ্টের মুখোমুখি হতে হবে। কিন্তু, পরিবারের চাপ অরুণকে পুলিশ হতে বাধ্য করে। তার প্রয়াত বাবা একজন পুলিশ ছিলেন এবং পুলিশ বিভাগে ভগ্নীপতি (রামাদোস) থাকায় পুলিশের চাকরিতে প্রবেশ করা জন্য খুব কঠিন ছিল না।

এবং তারপর গল্পের প্লট হঠাৎ করেই মোড় নেয়। একটি মেয়েকে জঘন্যভাবে হত্যা করা হয় এবং অরুণ জানতে পারে পূর্ববর্তী কোনো ঘটনার সঙ্গে এর যোগ সূত্র থাকতে পারে। এজন্য তিনি তার চলচ্চিত্রের স্ক্রিপ্ট নিয়ে গবেষণা করেন। যা তাকে বুঝতে সাহায্য করে- এগুলো সিরিয়াল কিলারের কাজ হতে পারে এবং মৃত্যুর পেছনে খুব কম ক্লু ছিল। শিগগির আরও কয়েকটি খুনের ঘটনা ঘটে। প্রত্যেকটি খুনই একই স্টাইলে করা হয়। যার মধ্যে তার ভাগ্নিকেও খুন করা হয়। এ ঘটনায় তিনি ভেঙে পড়েন এবং হত্যাকারীকে ধরতে তার সংকল্পকে আরও বাড়িয়ে তোলে। ভাগ্নির খুনের ঘটনায় পুরো পরিবার ভেঙে পড়ে। একসময় হত্যাকারী তার ভাগ্নির মরদেহও গাড়িতে করে তাদের পিছনে রেখে যায়। তার সঙ্গে ছিল ওই কিলারের চিহ্ন সেই পুতুল। এই দৃশ্য দেখে যে কারো কান্না চলে আসতে পারে। কারণ এখানে সবার অভিনয় খুবই দুর্দান্ত ছিল।

রাতসাসান একটি দক্ষ থ্রিলার। গল্প বলার জন্য এতে যথেষ্ট উত্তেজনা আছে। বিশেষ করে বিরতির আগ পর্যন্ত এটি দর্শককে পুরো মুহূর্তের জন্য পর্দায় আটকে রাখবে। এতে রোমান্স ফুটিয়ে তোলা হয়েছে। অমলা পল এমন একজন শিক্ষকের চরিত্রে অভিনয় করেছেন এবং অরুণ তারা দ্বারা প্রভাবিত হয়। দ্রুত কয়েকটি দৃশ্যে তাদের সেই রোমান্স পর্দায় দেখা যাবে। তবে তা এতোটাই সংক্ষিপ্ত যে, রোমান্টিক গানের ব্যাকগ্রাউন্ডেও অরুণের তদন্ত চলতে থাকবে।

তদন্ত করতে করতে অরুণ একসময় জানতে পারবে একজন জাদুকর এই সিরিয়াল কিলার। তিনি মূলত স্কুলের বার্ষিক অনুষ্ঠানে জাদু দেখিয়ে তার শিকার টার্গেট করেন এবং তার সঙ্গে সুসম্পর্ক গড়ে তোলেন। এর কিছুদিন পরপরই বিভিন্ন আবর্জনার মধ্যে ওই শিক্ষার্থীর মরদেহ পাওয়া যায়। প্রত্যেকটি মরদেহের সঙ্গে একটু করে ক্ষতবিক্ষত পুতুল পাওয়া যায়। যা তরুণকে তার তদন্তে সাহায্য করে।

আখ্যানটি পুরো গল্পটির দ্বিতীয়ার্ধে উত্তেজনা কিছুটা হ্রাস পাই। কিন্তু, অরুণের ভাগ্নির মৃত্যু বা ব্যক্তিগত ক্ষতি চলচ্চিত্রটিকে মেলোড্রামার দিকে চালিত করে। যা হয়তো উপাখ্যানের সঙ্গে হয়তো কিছুটা বেমানান। কিন্তু, রাম কুমার সেই ক্ষতি এড়াতে সক্ষম হন। তিনি শেষের দিকে চলচ্চিত্রটি দর্শকের জন্য আনন্দদায়ক করে তোলেন। কারণ, হত্যার সঙ্গে জড়িত ব্যক্তির চেহারা প্রকাশিত হওয়ার পর দ্রুত বিষয়টি গুটিয়ে নেওয়ার পরিবর্তে চূড়ান্ত কাজটি বের করে আনেন। ব্যাকস্টোরি উভয় পরিচিত এবং অনন্য। যদিও একজন অহংকারী নারী অফিসার অরুণকে তার কাজে বাধা দিতে থাকে। তবে, শেষ পর্যন্ত সে সিরিয়াল কিলারকে ধরতে সক্ষম হয়।

পুরো সিনেমাটিতে ভয়ানক ভিজ্যুয়ালের পরিবর্তে সম্পাদনা এবং সংগীত ব্যবহার করে দর্শকদের হিংস্রতা বা সহিংসতাকে অনুভব করিয়েছেন পরিচালক। গিবরানের ভয়ঙ্কর প্রাচীর এবং সান লোকেশের আঁটসাঁট সম্পাদনা পুরো সিনেমার উত্তেজনা বাড়িয়ে তোলে। সিরিয়াল কিলারের চেহারায় হিংস্রতার ভাবকে যথাযথভাবে ফুটিয়ে তুলেছেন। আর এই চেহারার জন্য স্কুলে ও বান্ধবীর কাছে একদিন তাকে অপমানিত হতে হয়েছিল। সেই বান্ধবীকেও কুপিয়ে হত্যা করেছিল তিনি ও তার মা। সেখান থেকেই তিনি সিরিয়াল কিলার হয়ে ওঠেন।

Comments

The Daily Star  | English
July uprising and the rise of collective power

July uprising and the rise of collective power

Through this movement, the people of Bangladesh expressed their protest using a language shaped by long-standing discontent.

11h ago