৯ মাসে ৬ বেসরকারি ব্যাংকের খেলাপি বেড়েছে ৫৫ শতাংশ

ব্যাংক খাতের তারল্য সংকট

গত নয় মাসে দেশের ছয় বেসরকারি ব্যাংকের খেলাপি ঋণ বেড়েছে প্রায় ৫৫ শতাংশ। এটি ব্যাংকিং খাতের বর্তমান পরিস্থিতিকে আরও জটিল করে তুলেছে।

বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, গত সেপ্টেম্বর শেষে ন্যাশনাল ব্যাংক, ওয়ান ব্যাংক, এবি ব্যাংক, বাংলাদেশ কমার্স ব্যাংক (বিসিবি), পদ্মা ব্যাংক ও আইসিবি ইসলামী ব্যাংকের খেলাপি ঋণের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ২৭ হাজার ৯৩১ কোটি টাকা।

চলতি বছরের তৃতীয় প্রান্তিক শেষে ৪৩ বেসরকারি ব্যাংকের মোট খেলাপি ঋণের ৩৪ দশমিক ২৫ শতাংশ ছিল এই ছয় প্রতিষ্ঠানের।

গত জানুয়ারি থেকে সেপ্টেম্বর পর্যন্ত এই ছয় ব্যাংকের মধ্যে ন্যাশনাল ব্যাংকের খেলাপি সবচেয়ে বেশি। এটি ছয় হাজার ৬৫৮ কোটি ৫০ লাখ টাকা থেকে বেড়ে হয়েছে ১৩ হাজার ৫১৪ কোটি ৬০ লাখ টাকা।

ন্যাশনাল ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মোহাম্মদ মেহমুদ হোসেন দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, 'মাত্র নয় মাসে খেলাপি দ্বিগুণ হওয়ার জন্য ঋণ শ্রেণিবিন্যাসের ম্যানুয়াল পদ্ধতি থেকে স্বয়ংক্রিয় পদ্ধতিতে চলে আসাকে দায়ী করা হয়েছে।'

তিনি আরও বলেন, 'সম্প্রতি আমরা খেলাপি ঋণের একটি বড় অংশ আদায় করেছি। তাই বছরের শেষ প্রান্তিকে আমাদের খেলাপির পরিমাণ কম হবে।'

প্রায় ৪০ বছরের পুরোনো এই ব্যাংকটির বিতরণ করা মোট ঋণের ৩২ শতাংশ খেলাপি। এর পাশাপাশি ১৩ হাজার ৭৯৭ কোটি ৫০ লাখ টাকার প্রভিশনিং ঘাটতি ও তারল্য সংকটেও ভুগছে ব্যাংকটি।

তারল্য ঘাটতির জন্য সরকারি আমানত কমে যাওয়াকে দায়ী করে মোহাম্মদ মেহমুদ হোসেন বলেন, 'আমাদের সমস্যা সমাধানের জন্য আরও সময় দরকার।'

প্রথম প্রজন্মের বেসরকারি ব্যাংক এবি ব্যাংকের গত নয় মাসে খেলাপি ঋণের পরিমাণ ৪৮ দশমিক ছয় শতাংশ বেড়ে পাঁচ হাজার ৯৪১ কোটি টাকায় দাঁড়িয়েছে।

এ বিষয়ে কথা বলতে এবি ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক তারিক আফজালের সঙ্গে যোগাযোগ করা সম্ভব হয়নি।

চট্টগ্রামভিত্তিক এস আলম গ্রুপের মালিকানাধীন বাংলাদেশ কমার্স ব্যাংকের (বিসিবি) খেলাপি ঋণ ৩৮ দশমিক আট শতাংশ বেড়ে দাঁড়িয়েছে এক হাজার ৩৭৪ কোটি টাকা।

বিসিবির ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও প্রধান নির্বাহী তাজুল ইসলাম ডেইলি স্টারকে বলেন, 'বিসিবির বিতরণ করা মোট ঋণের ৬০ শতাংশ খেলাপি।'

সম্প্রতি বিসিবির ঋণ পুনরুদ্ধারের কথা উল্লেখ করে তিনি আরও বলেন, 'কাগজে-কলমে আমাদের খেলাপি ঋণ অনেক বেড়েছে। তবে বাস্তবে তা খুব বেশি নয়।'

খেলাপি ঋণের উচ্চহারের কারণে ব্যাংকটির প্রভিশন ঘাটতি ৫৪২ কোটি টাকা।

গত বছর আর্থিক অবস্থার উন্নয়নে কেন্দ্রীয় ব্যাংক থেকে সমন্বয়ক নিয়োগ দেওয়া ওয়ান ব্যাংকের খেলাপি ঋণ গত সেপ্টেম্বর শেষে ২১ দশমিক আট শতাংশ বেড়ে দাঁড়িয়েছে দুই হাজার ৭৪১ কোটি টাকা।

ব্যাংকটির ব্যবস্থাপনা পরিচালক মনজুর মফিজ ডেইলি স্টারকে বলেন, 'আমরা এখন নতুন ঋণ বিতরণের চেয়ে ঋণ পুনরুদ্ধারের দিকে বেশি মনোযোগ দিচ্ছি।'

তিনি বলেন, 'বাজারে তারল্য পরিস্থিতি ভালো না থাকায় এখন নতুন করে ঋণ দিচ্ছি না।'

গত নয় মাসে পদ্মা ব্যাংকের খেলাপি ঋণ সাত দশমিক তিন শতাংশ বেড়ে তিন হাজার ৬৭২ কোটি ৭৪ লাখ টাকা হলেও সেপ্টেম্বর পর্যন্ত এটি ছিল ব্যাংকটির মোট খেলাপি ঋণের ৬৩ দশমিক সাত শতাংশ।

পদ্মা ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও প্রদান নির্বাহী তারেক রিয়াজ খান স্বীকার করেছেন যে ২০২২ সালের শেষ প্রান্তিকে পদ্মা ব্যাংক তাদের নথিতে ঋণের প্রকৃত পরিমাণ কমিয়ে দেয়।

'কেন্দ্রীয় ব্যাংকের অডিটের পর খেলাপি ঋণের পরিমাণ বেড়ে যায়,' উল্লেখ করে তিনি বলেন, 'রাতারাতি খেলাপি ঋণ কমানো সম্ভব হবে না। তবে এর পরিমাণ কমাতে আমরা নানান আইনি উদ্যোগ নিচ্ছি।'

তিনি জানান, ২০২৫ সালের মধ্যে খেলাপি ঋণ ২০ শতাংশ কমানোর জন্য কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সঙ্গে চুক্তি করেছে পদ্মা ব্যাংক।

বিলুপ্ত ওরিয়েন্টাল ব্যাংক থেকে জন্ম নেওয়া আইসিবি ইসলামী ব্যাংকের খেলাপি ঋণ গত সেপ্টেম্বর শেষে দাঁড়িয়েছে ৬৮৭ কোটি ৯৫ লাখ টাকা। এটি গত বছর শেষে ছিল ৬৮৬ কোটি ১০ লাখ টাকা।

ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মুহাম্মদ শফিক বিন আবদুল্লাহ ডেইলি স্টারকে বলেন, 'যে ঋণ ওরিয়েন্টাল ব্যাংক বিতরণ করেছে তা আমাদের নয়।'

ব্র্যাক ব্যাংকের সাবেক চেয়ারম্যান ও পলিসি রিসার্চ ইনস্টিটিউটের নির্বাহী পরিচালক আহসান এইচ মনসুর ডেইলি স্টারকে বলেন, 'ছয় ব্যাংকের খেলাপির পরিমাণ গড় হারের তুলনায় বেশি বেড়ে যাওয়া অস্বাভাবিক কিছু নয়।'

'সব ধরনের ব্যাংকে খেলাপি ঋণ বাড়ছে। ব্যাংকিং খাতের সামগ্রিক অবস্থা মোটেও ভালো নয়,' বলে মন্তব্য করেন তিনি।

গত নয় মাসে বেসরকারি ব্যাংকগুলোর মোট খেলাপি ঋণ ৪৪ দশমিক পাঁচ শতাংশ বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৮১ হাজার ৫৩৮ কোটি টাকা।

'বিদ্যমান শাসন কাঠামোয় ব্যাংকিং খাতের পরিস্থিতি উন্নতি হবে না' বলে মনে করেন তিনি।

Comments

The Daily Star  | English
The Indian media and Bangladesh-India relations

The Indian media and Bangladesh-India relations

The bilateral relationship must be based on a "win-win" policy, rooted in mutual respect, non-hegemony, and the pursuit of shared prosperity and deeper understanding.

9h ago