টাকা সংকটে ৯ শতাংশেরও বেশি সুদে ঋণ নিচ্ছে ব্যাংক

প্রতীকী ছবি | সংগৃহীত

তারল্য সংকটের কারণে নগদ ঘাটতিতে থাকা ব্যাংকগুলো ৯ শতাংশের বেশি সুদের হারে অন্য ব্যাংক থেকে ঋণ নিচ্ছে, যা বাংলাদেশ ব্যাংক নির্ধারিত সুদহার সীমা থেকেও বেশি।

এর মধ্যে কিছু ঋণদাতারা সম্প্রতি ক্যাশ রিজার্ভ রেশিও (সিআরআর) ঘাটতির মুখোমুখি হয়েছে, যা তাদের অন্যদের কাছ থেকে উচ্চ সুদের হারে তহবিল সুরক্ষিত করতে বাধ্য করেছে।

যেমন: গতকাল একটি ব্যাংক ১০ শতাংশ সুদের হারে ১৪ দিন মেয়াদে ১৫ কোটি টাকা ঋণ নিয়েছে। অথচ ১ বছর আগে একই ধরনের ঋণের সুদের হার ছিল ৪ শতাংশ।

সোমবার আরেক ঋণদাতা ৯ দশমিক ২৫ শতাংশ সুদে ১২০ কোটি টাকা ঋণ পেয়েছে, যার মেয়াদ ৯০ দিন। আগের বছর এ ঋণের হার ছিল ৪ দশমিক ২৫ শতাংশ।

ব্যাংকগুলো তাদের দৈনিক আর্থিক চাহিদা পূরণে স্বল্পমেয়াদি তহবিলের জন্য আন্তব্যাংক মুদ্রা বাজারের দিকে ঝুঁকে পড়ছে।

পলিসি রিসার্চ ইনস্টিটিউট অব বাংলাদেশের নির্বাহী পরিচালক আহসান এইচ মনসুর দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, 'ব্যাংকিং খাতে বিদ্যমান তারল্য সংকট নজিরহীন।'

বাংলাদেশে আন্তব্যাংক মুদ্রা বাজারে সুদের হার সাধারণত ২ ঈদের সময় বেড়ে যায়। কারণ তখন ঈদকে কেন্দ্র করে মানুষ ব্যাংক থেকে অর্থ উত্তোলন করে থাকে।

আহসান এইচ মনসুর বলেন, 'ব্যাংকগুলো এখন যে তারল্য সংকটের মুখোমুখি হচ্ছে, শিগগির তা থেকে উত্তরণের কোনো সম্ভাবনা নেই। আমাদের ব্যাংকিং সেক্টরে এ ধরনের প্রবণতা খুবই কম। এ ধরনের সংকট ইতোপূর্বে ঘটেনি।'

কিছু ব্যাংক এখন তারল্য ঘাটতির সমস্যায় পড়েছে। ফলে তাদের সিআরআরেও ঘাটতি তৈরি হয়েছে।

বাংলাদেশে সিআরআরের হার ৪ শতাংশ।

বর্তমান পরিস্থিতিতে ব্যাংকগুলো এখন তাদের প্রয়োজনীয় সিআরআর বজায় রাখার জন্য মরিয়া হয়ে তহবিল সংগ্রহ করার চেষ্টা করছে। অন্যথায় তাদের জরিমানার মুখে পড়তে হবে।

নগদ সংকটে থাকা ব্যাংকগুলো যাতে সিআরআর বজায় রাখতে পারে, সেজন্য সম্প্রতি তাদের অর্থ সহায়তা দিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক।

এ ছাড়াও, ব্যাংকিংখাতে সাড়ে ৭ বিলিয়ন ডলার বিনিয়োগ করেছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক, যাতে চলমান ডলার ঘাটতির মধ্যে ব্যাংকগুলো আমদানি বিল পরিশোধ করতে পারে।

কেন্দ্রীয় ব্যাংক ২০২০ সাল থেকেই ঋণ পরিশোধের জন্য ব্যাংকগুলোকে বিভিন্ন ধরনের সহায়তা দিয়ে আসছে, যা ঋণগ্রহিতাদের করোনাভাইরাস মহামারি থেকে উদ্ভূত ব্যবসায়িক মন্দা মোকাবিলায় সহায়তা করছে। কিন্তু ব্যাংকগুলো সময়মতো ঋণগ্রহিতাদের কাছ থেকে তাদের বেশিরভাগ তহবিল ফেরত পায়নি, যা তারল্য সংকটকে আরও বাড়িয়েছে।

আন্তব্যাংক মুদ্রা বাজারে উচ্চ সুদের হার ব্যাংকগুলোর লাভের ভিত্তিকে অনেকাংশে হ্রাস করবে বলে মনে করেন আহসান এইচ মনসুর।

বাংলাদেশে ব্যাংকগুলো ক্রেডিট কার্ড ছাড়া ঋণের ওপর ৯ শতাংশের বেশি সুদ নিতে পারবে না। ২০২০ সালের এপ্রিলে এ সীমা নির্ধারণ করে দেয় বাংলাদেশ ব্যাংক।

সম্প্রতি কেন্দ্রীয় ব্যাংক মৌখিকভাবে ব্যাংকগুলোকে বলেছে, তারা খুচরা ঋণের ওপর সর্বোচ্চ ১২ শতাংশ সুদ নির্ধারণ করতে পারবে। কিন্তু, তাদের বেশিরভাগই এখনো এই নির্দেশটি বাস্তবায়ন করতে পারেনি। কারণ কেন্দ্রীয় ব্যাংক এই বিষয়ে কোনো সরকারি আদেশ দেয়নি।

কেন্দ্রীয় ব্যাংককে অবিলম্বে সুদের হারের ঊর্ধ্বসীমা তুলে নেওয়ার পরামর্শ দিয়েছিলেন অর্থনীতিবিদ আহসান এইচ মনসুর। কারণ এই ধরনের উদ্যোগ ব্যাংকগুলোকে ঋণ ও আমানতের সুদের হার বাড়াতে সহায়তা করবে।

সংক্ষেপিত: ইংরেজিতে পুরো প্রতিবেদন পড়তে ক্লিক করুন Interbank lending rate goes past 9% cap for liquidity crunch

Comments

The Daily Star  | English

Students suffer as NCTB fails to deliver books

Even two weeks into the new academic year, primary and secondary students across the country have not been able to fully start academic activities, with 25.15 crore or 63 percent of the required textbooks remaining undelivered.

11h ago