আইএমএফের শর্ত পূরণে কঠোর হলো ঋণ শ্রেণিকরণের নিয়ম

বাংলাদেশ ব্যাংক
বাংলাদেশ ব্যাংক। ছবি: সংগৃহীত

তিন মাস বা ৯০ দিনের মধ্যে ঋণ পরিশোধে ব্যর্থ হলে এখন থেকে যেকোনো ঋণ খেলাপি করতে পারবে ব্যাংক। আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল (আইএমএফ) শর্ত অনুযায়ী আন্তর্জাতিক নিয়মের সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে ঋণ শ্রেণিকরণের নতুন এই নিয়ম তৈরি করেছে বাংলাদেশ ব্যাংক। 

আগামী বছরের এপ্রিল থেকে তা কার্যকর হবে।

এতে ব্যাংকিং খাতে খেলাপি বেড়ে যাওয়ার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। গত সেপ্টেম্বর শেষে খেলাপি রেকর্ড দুই লাখ ৮৪ হাজার ৯৭৭ কোটি টাকায় দাঁড়িয়েছে।

গত বছরের জানুয়ারিতে বাংলাদেশের জন্য ৪ দশমিক ৭ বিলিয়ন ডলারের ঋণ অনুমোদনের সময় আইএমএফ ঋণ শ্রেণিকরণ বিধিমালা ঢেলে সাজানোসহ বেশকিছু লক্ষ্যমাত্রা দিয়েছিল।

গতকাল বুধবার বাংলাদেশ ব্যাংক ঋণ শ্রেণিকরণ নিয়ে প্রজ্ঞাপন জারি করে।

নতুন নিয়ম অনুসারে, ঋণ পরিশোধের তারিখের পর তিন থেকে ছয় মাস কেটে গেলে তা নিম্নমানের হিসেবে শ্রেণিবদ্ধ করা হবে। মেয়াদের পর ছয় থেকে ১২ মাস কেটে গেলে তা হবে সন্দেহজনক ঋণ।

ঋণ পরিশোধের মেয়াদ ১২ মাস বা তার বেশি হলে তা খারাপ ও ক্ষতিজনক হিসেবে শ্রেণিবদ্ধ করা হবে।

বর্তমানে একটি ঋণকে নিম্নমানের হিসেবে শ্রেণিবদ্ধ করা হয় যখন পরিশোধের তারিখের পর তিন থেকে নয় মাস কেটে যায়। ঋণ পরিশোধের তারিখের পর নয় থেকে ১২ মাস কেটে গেলে তা সন্দেহজনক হয়ে ওঠে।

নতুন নিয়ম অনুসারে, মন্দ ও লোকসান বিভাগের ঋণ পরিশোধের মেয়াদ বর্তমানের মতোই বা ১২ মাস বা এর বেশি থাকবে।

নতুন বিধিমালায় কুটির, মাইক্রো, ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্প (সিএমএসএমই) বর্তমানে অন্যান্য ঋণ শ্রেণিকরণের যে সুবিধা পাচ্ছে তা বাতিল করা হয়েছে।

বর্তমান নিয়মে এসএমই ঋণকে নিম্নমানের হিসেবে শ্রেণিবদ্ধ করা হয় যখন ঋণ পরিশোধের মেয়াদ ছয় থেকে ১৮ মাস পেরিয়ে যায়। তা ১৮ থেকে ৩০ মাস হলে সন্দেহজনক হয়ে ওঠে। যখন তা ৩০ মাস বা তার বেশি হয়, তখন সেই ঋণ খারাপ ও লোকসান হিসাবে চিহ্নিত হয়।

নতুন নিয়মে ঋণের বিপরীতে প্রভিশন রাখার ক্ষেত্রে পরিবর্তন আনা হয়নি।

ব্যাংকগুলোকে এখন সাধারণ বিভাগের ঋণের বিপরীতে প্রভিশন হিসেবে এক থেকে পাঁচ শতাংশ রাখতে হয়। নিম্নমানের ঋণের বিপরীতে ২০ শতাংশ, সন্দেহজনক ঋণের বিপরীতে ৫০ শতাংশ ও মন্দ ঋণের বিপরীতে ১০০ শতাংশ প্রভিশন রাখছে।

প্রজ্ঞাপনে বলা হয়েছে, দেশের ক্রমবর্ধমান অর্থনীতিকে সহায়তার জন্য শক্তিশালী আর্থিক খাত প্রয়োজন।

বাংলাদেশ ব্যাংক বলছে, আর্থিক স্থিতিশীলতার জন্য শ্রেণিকৃত ঋণের হার কমাতে সময়োপযোগী উদ্যোগ নেওয়া প্রয়োজন। সরকার ও বাংলাদেশ ব্যাংক ব্যাংকিং খাত সংস্কারে নানা উদ্যোগ নিয়েছে।

এসব উদ্যোগের অংশ হিসেবে আন্তর্জাতিক নিয়মনীতির আলোকে এ নির্দেশনা জারি করা হয়েছে বলে জানিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক।

দেশের আর্থিক খাত সংস্কার কর্মসূচির আওতায় ১৯৮৯ সালে প্রথম ঋণ শ্রেণিকরণ ও প্রভিশনিং নীতি চালু হয়।

নীতিমালাটিকে আন্তর্জাতিক নিয়মের সঙ্গে সামঞ্জস্য করতে ১৯৯৮ ও ২০০৬ সালেও পরিবর্তন আনা হয়।

কেন্দ্রীয় ব্যাংকের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, ঋণনীতিতে সর্বশেষ বড় সংশোধন হয় ২০১২ সালে।

গত ৫ আগস্ট শেখ হাসিনার সরকারের পতনের পর আওয়ামী লীগ ঘনিষ্ঠ প্রতিষ্ঠানগুলোয় অনিয়মের মাধ্যমে বিতরণ করা ঋণগুলো খেলাপি হয়ে পড়ে।

বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য বলছে, গত জুলাই থেকে সেপ্টেম্বরে খেলাপি ঋণ বেড়েছে ৩৪ দশমিক আট শতাংশ বা ৭৩ হাজার ৫৮৬ কোটি টাকা।

দক্ষিণ এশিয়ায় বাংলাদেশে খেলাপি ঋণের অনুপাত সবচেয়ে বেশি। বিতরণ করা ঋণের প্রায় ১৭ শতাংশই মন্দ।

ব্যাংক কর্মকর্তারা বলছেন, ঋণ শ্রেণিবদ্ধকরণের নিয়ম কঠোর করায় আগামীতে খেলাপি আরও বাড়বে।

ব্যাংকগুলোর ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও প্রধান নির্বাহীদের সংগঠন অ্যাসোসিয়েশন অব ব্যাংকার্স বাংলাদেশের (এবিবি) সাবেক চেয়ারম্যান মোহাম্মদ নুরুল আমিন ডেইলি স্টারকে বলেন, 'ডিসেম্বর নাগাদ খেলাপি ঋণ তিন লাখ কোটি টাকা ছাড়িয়ে যাবে।'

গ্লোবাল ইসলামী ব্যাংকের চেয়ারম্যান আমিন ডেইলি স্টারকে বলেন, 'ঋণ শ্রেণিকরণের নিয়ম কঠোর হলে খেলাপির পরিমাণ অনেক বেড়ে যাবে।'

বিশ্বব্যাংকের প্রতিনিধি দল এখন ব্যাংকিং খাতের সংস্কারে সহায়তার জন্য কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সঙ্গে আলোচনা করছে। তারা দ্রুত বিশ্বমানের ঋণ শ্রেণিকরণ বিধিমালা বাস্তবায়নে বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রতি আহ্বান জানান।

Comments

The Daily Star  | English

$14b a year lost to capital flight during AL years

Bangladesh has lost around $14 billion a year on average to capital flight during the Awami League’s 15-year tenure, according to the draft report of the committee preparing a white paper on the economy.

14h ago