ধানের ফলন ভালো হলেও কেন বাড়ছে চালের দাম

খুলনার একটি চালের আড়ত। ছবি: হাবিবুর রহমান/স্টার

সদ্য সমাপ্ত অর্থবছরে ধানের ফলন ভালো হয়েছে। কিন্তু তা সত্ত্বেও চালের দাম বাড়ছে। এতে ভোগান্তিতে পড়েছেন নিম্ন ও নির্দিষ্ট আয়ের মানুষ। দেশব্যাপী চলমান উচ্চ মূল্যস্ফীতির কারণে ইতোমধ্যে তারা জীবনযাত্রার ব্যয় নির্বাহে লড়াই করছেন।

অথচ সরবরাহ ব্যবস্থার সঙ্গে জড়িত ব্যবসায়ীরা কোনো দায় নিচ্ছেন না।

খুচরা বিক্রেতারা পাইকারদের দোষারোপ করছেন। পাইকাররা দোষারোপ করছেন মিল মালিকদের। মিল মালিকরা বলছেন, দেশের পূর্বাঞ্চলে বন্যার মধ্যে কৃষকরা উচ্চমূল্যের আশায় ধানের দাম বাড়িয়েছেন। এটা দাম বাড়ার পেছনে একটি কারণ।

এ কথা সত্যি যে, প্রাকৃতিক দুর্যোগ চলমান আমন চাষ প্রভাব ফেলবে। এমনকি আসছে শীতে আউশ ধানেও প্রভাব ফেলতে পারে। তবে এজন্য বর্তমান চালের বাজারে প্রভাব পড়ার কথা নয়।

অন্যদিকে সরকারি সংস্থার তথ্য বলছে, চলতি বছরের জুনে কৃষকরা বোরোতে ভালো ফলন পেয়েছেন।

সুতরাং এ সময় চালের দাম সহনীয় পর্যায়ে থাকার কথা। কিন্তু তা সত্ত্বেও দাম বাড়ছে।

বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো (বিবিএস) ও কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের (ডিএই) আনুমানিক হিসাব অনুযায়ী, ২০২৩-২৪ অর্থবছরে ৪ কোটি টনের বেশি চাল উৎপাদিত হয়েছে, যা আগের বছর ছিল ৩ কোটি ৯০ লাখ টন।

পরিসংখ্যান ব্যুরোর অনুমান অনুযায়ী, গত বর্ষায় আমনের ফলন ৮ শতাংশ বেড়ে রেকর্ড পর্যায়ে পৌঁছেছে, যা মোট বার্ষিক ধান উৎপাদনের প্রায় ৪০ শতাংশ।

তবে পরিসংখ্যান ব্যুরো দেশের প্রধান ফসল উৎপাদন মৌসুম বোরোর তথ্য প্রকাশ না করলেও কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর বলছে, গত মৌসুমে ২ কোটি ২৪ লাখ টন চাল বস্তায় ভরা হয়েছে।

তারপরও চালের দাম বাড়ছেই। অথচ দরিদ্র ও নিম্নআয়ের মানুষ তাদের মোট আয়ের বড় একটি অংশ এই খাদ্যপণ্য কিনতে ব্যয় করে।

গতকাল দ্য ডেইলি স্টারের সংবাদদাতা কথা বলেছিলেন ঢাকার অন্যতম বৃহৎ কাঁচাবাজার কারওয়ান বাজারের খুচরা বিক্রেতা আব্দুল লতিফ বিশ্বাসের সঙ্গে। তিনি বলেন, গতকাল ঢাকায় খুচরা পর্যায়ে মোটা চাল ৫৩ টাকা কেজি দরে বিক্রি হয়েছে, অথচ এক সপ্তাহ আগে তা ছিল ৫০ টাকা।

তিনি আরও জানান, মাঝারি মানের চালের দাম ৫৮ টাকা থেকে বেড়ে ৬২ টাকা এবং চিকন জাতের চাল ৭২ টাকা থেকে বেড়ে ৭৫ টাকা হয়েছে।

রাষ্ট্রীয় বিপণন সংস্থা ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশের (টিসিবি) তথ্য অনুযায়ী, গত ৩০ দিনের ব্যবধানে চালের দাম বেড়েছে প্রায় ৩ থেকে ৪ শতাংশ।

কারওয়ান বাজারে মুদিপণ্য কিনছিলেন অবসরপ্রাপ্ত সরকারি চাকরিজীবী গোলাম রব্বানী। তিনি দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, গত এক মাসে চালের দাম বেড়েছে প্রায় ৬ শতাংশ।

তিনি বলেন, 'নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের দাম দিন দিন সাধারণ মানুষের নাগালের বাইরে চলে যাচ্ছে। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে সরকারের দ্রুত পদক্ষেপ নেওয়া উচিত।'

পরিসংখ্যান ব্যুরোর তথ্য অনুযায়ী, জুলাইয়ে মূল্যস্ফীতি ১১ দশমিক ৬৬ শতাংশে পৌঁছেছে, যা ২০১০-১১ অর্থবছরের পর সর্বোচ্চ।

পরিসংখ্যান ব্যুরোর তথ্য বলছে, জুলাইয়ে খাদ্য মূল্যস্ফীতি বেড়েছে ১৪ দশমিক ১ শতাংশ, যা অন্তত এক দশকের মধ্যে সর্বোচ্চ।

একই মার্কেটের পাইকারি বিক্রেতা নিজাম উদ্দিন বলেন, গত সাত দিনে কেজিতে চালের দাম বেড়েছে প্রায় ৪ টাকা। তিনি বলেন, চলমান বন্যায় ত্রাণ হিসেবে অনেককে মোটা চাল দেওয়া হচ্ছে, ফলে চাহিদা ও দাম বেড়েছে।

ঢাকার মোহাম্মদপুর কৃষি মার্কেটের পাইকারি বিক্রেতা মোহাম্মদ জসিম উদ্দিন বলেন, মোটা চাল পাওয়া যাচ্ছে না।

'মিলাররা বলছেন, বাজারে ধানের সংকট রয়েছে। এ কারণে মোটা ও মাঝারি গ্রেডের চালের দাম বেড়েছে,' বলেন তিনি।

বাংলাদেশ চালকল মালিক সমিতির উপদেষ্টা চিত্ত মজুমদার বলেন, বাজারে ধানের দাম বেড়ে যাওয়ায় এর প্রভাব পড়েছে খুচরা বাজারে।

তিনি আরও বলেন, দেশের অস্থিতিশীল পরিস্থিতির কারণে কৃষকরা বাজারে ধান বিক্রির পরিমাণ কমিয়ে দিয়েছেন। কারণ তারা ভাবছেন, পরবর্তীতে আরও বেশি দাম পাবেন।

তার ভাষ্য, 'বন্যাও একটি কারণ হতে পারে।'

বগুড়ার আদমদীঘি উপজেলার সান্তাহারের অটো রাইস মিলের মালিক রেজাউল করিম বলেন, গত ১৫ দিনে প্রতি ৫০ কেজি ধানের বস্তার দাম ২০০ থেকে ২৫০ টাকা বেড়েছে।

দেশের অন্যতম বৃহৎ চালের আড়ত কুষ্টিয়াতেও সব ধরনের চালের দাম বেড়েছে।

তবে দিনাজপুরে বিভিন্ন জাতের চালের দাম কমছে বলে জানিয়েছেন সেখানকার পাইকারি ও খুচরা চাল ব্যবসায়ীরা।

এদিকে খাদ্য মন্ত্রণালয়ের নথি অনুযায়ী, গত অর্থবছরে কোনো চাল আমদানি হয়নি।

(এই প্রতিবেদন তৈরিতে সহায়তা করেছেন বগুড়ার মোস্তফা সবুজ, দিনাজপুরের কংকন কর্মকার ও কুষ্টিয়ার আনিস মণ্ডল)

Comments

The Daily Star  | English

BDR carnage rooted in 'long-term plot', says investigation commission

It was abetted by intelligence failures, gross negligence, and the involvement of several political figures, according to the commission chief

29m ago