পাবনা

সরকার নির্ধারিত দাম কম হওয়ায় ধান-চাল সংগ্রহে সাড়া নেই

আমন সংগ্রহ
পাবনা সদর উপজেলার তেবুনিয়ায় ধান-চাল সংগ্রহ চলছে। ছবি: স্টার

আপদকালীন মজুত গড়ে তুলতে সারাদেশের মতো পাবনাতেও এ বছর আমন মৌসুমের ধান-চাল সংগ্রহ অভিযান শুরু হয়েছে। তবে কৃষক ও চালকল মালিকদের কাছ থেকে আশানুরূপ সাড়া পাওয়া যাচ্ছে না।

তিন মাসের বেশি সময় ধরে চলা অভিযানে লক্ষ্যমাত্রা অনুসারে ধান-চাল সংগ্রহ করা যায়নি।

চাল সংগ্রহে অগ্রগতি থাকলেও চলমান অভিযানে ধান কিনতে পারেনি খাদ্য বিভাগ। ফলে ব্যর্থতা নিয়েই আগামী ২৮ ফেব্রুয়ারি শেষ হতে যাচ্ছে এ বছরের আমন মৌসুমের ধান-চাল সংগ্রহ অভিযান।

পাবনা খাদ্য নিয়ন্ত্রণ কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে—এ বছর পাবনার নয় উপজেলায় চার হাজার ৮২৭ টন ধান ও আট হাজার ৪৮২ টন চাল কেনার লক্ষ্যমাত্রা ধরে ধান-চাল সংগ্রহ অভিযান শুরু হয় ১৭ নভেম্বর।

গত বছরের তুলনায় তিন টাকা বাড়িয়ে প্রতি কেজি ধানের সরকারি দাম ধরা হয়েছে ৩৩ টাকা ও প্রতি কেজি চালের দাম ৪৭ টাকা। চাল কিনতে জেলার ১৭৩ চালকল মালিকের সঙ্গে চুক্তি করে খাদ্য বিভাগ।

জেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রণ কর্মকর্তা মো. হাসান আলি নাইম দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, 'চুক্তিবদ্ধ কল মালিকদের কাছ থেকে ১৬ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত চার হাজার ৭০০ টন চাল কিনেছে খাদ্য বিভাগ। সংগ্রহের অগ্রগতি ৫৫ শতাংশের বেশি। সংগ্রহ অভিযান শেষ হতে এখনো কয়েক দিন বাকি।'

'লক্ষ্যমাত্রা অনুসারে চাল সংগ্রহের জন্য খাদ্য বিভাগ চুক্তিবদ্ধ কল মালিকদের সঙ্গে নিয়মিত যোগাযোগ করছে' উল্লেখ করে তিনি আশা করেন, 'নির্ধারিত সময়ের মধ্যে চাল সংগ্রহে আশানুরূপ অগ্রগতি হবে।'

খাদ্য বিভাগ আশা করলেও সরকার নির্ধারিত দামে চাল সরবরাহে আগ্রহ নেই চালকল মালিকদের।

ঈশ্বরদীর চালকল মালিক মো. ফজলুর রহমান ডেইলি স্টারকে বলেন, 'মৌসুমের শুরু থেকে বাজারে ধানের দাম বেশি থাকায় প্রতি কেজি চালের উৎপাদন খরচ ৫০ টাকার বেশি। প্রথম দিকে লোকসান দিয়ে সরকারি ক্রয়কেন্দ্রে চাল বিক্রি করলেও এখন সরকার নির্ধারিত দামে চাল বিক্রি সম্ভব না।'

এ বছর তিনি ১৫ টন চাল সরবরাহের চুক্তি করেছেন। সংগ্রহ অভিযানের শুরুতেই তিনি বেশিরভাগ চাল সরবরাহ করেছেন জানিয়ে আরও বলেন, 'প্রায় ২০ হাজার টাকা লোকসান দিয়ে চাল সরবরাহ করেছি।'

ঈশ্বরদীর ধান-চাল ব্যবসায়ী মিজান মহলদার ডেইলি স্টারকে বলেন, 'বর্তমানে মনপ্রতি ১৪ শ টাকার বেশিতে ধান বিক্রি হচ্ছে। তারপরও আশানুরূপ ধান মিলছে না পাইকারি বাজারগুলোয়।'

বর্তমানে বাজারে মোটা চাল বিক্রি হচ্ছে প্রায় ৬০ টাকা কেজি দরে। এ অবস্থায় সরকারি দামে চাল কিনতে পারছেন না চালকল মালিকরা।

মালিকদের অনাগ্রহের কারণে সরকারের চাল সংগ্রহ অভিযান ভেস্তে যেতে বসেছে বলে মনে করছেন অনেকে। এদিকে, চাল সংগ্রহে অগ্রগতি হলেও ধান সংগ্রহে পুরোপুরি ব্যর্থ খাদ্য বিভাগ।

জেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রণ কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, সংগ্রহ অভিযান শুরুর পর থেকে এখন পর্যন্ত এক কেজি ধানও সংগ্রহ করতে পারেনি খাদ্য বিভাগ।

এ বছর বাজারে ধানের দাম বেশি থাকায় সরকারি ক্রয়কেন্দ্রে ধান বিক্রিতে অনীহা দেখায় কৃষকরা।

চাটমোহর উপজেলার নতুন বাজার এলাকার কৃষক মো. আব্দুস সালাম ডেইলি স্টারকে বলেন, 'ধান উঠার পর বাজারে আশানুরূপ দাম পাওয়ায় সব ধান বিক্রি করে দিয়েছেন বেশিরভাগ কৃষক।'

সরকারি ক্রয়কেন্দ্রে ধান বিক্রি করতে হলে নির্দিষ্ট পরিমাণ শুষ্কতা প্রয়োজন। তা না হলে সরকারি কর্মকর্তারা কৃষকদের কাছ থেকে ধান কেনেন না।

সরকারি দামে ধান বিক্রি করলে মনপ্রতি এক হাজার ২০০ থেকে এক হাজার ২৫০ টাকার বেশি পাওয়া যায় না। এ বছর শুরু থেকেই ১৩ শ টাকার বেশি দাম পাওয়ায় অনেকে ধান বিক্রি করে দিয়েছেন।

হাসান আলি নাইম মনে করেন, ধান সংগ্রহের লক্ষ্যমাত্রা অর্জিত না হলেও এর প্রভাব পড়বে না।

তিনি জানান, কৃষকদের ধানের যথাযথ দাম দিতেই সরকার ক্রয়মূল্য নির্ধারণ করে।

তবে সরকারি ক্রয়কেন্দ্রে ধান সংগ্রহ করা না গেলেও ভালো দাম পাওয়ায় লাভবান হচ্ছেন কৃষকরা।

Comments

The Daily Star  | English

US retailers lean on suppliers to absorb tariffs

Rather than absorbing the cost or immediately passing it on to consumers, many US apparel retailers and brands have turned to their suppliers in Bangladesh, demanding they share the pain

2h ago