তিস্তা প্রকল্প: আমন সেচে প্রায় ৯৫ কোটি টাকা সাশ্রয়

তিস্তা প্রকল্প : আমনচাষিদের প্রায় ৯৫ কোটি টাকা সাশ্রয়
কম সার্ভিস চার্জের বিনিময়ে সেচনালা ব্যবহার করে তিস্তার পানি আমন খেতে দিয়ে কৃষকরা সেচ খরচের প্রায় ৯৫ কোটি টাকা সাশ্রয় করতে পেরেছেন। ছবি: আসাদুজ্জামান টিপু/স্টার

তিস্তা সেচ প্রকল্পের আওতায় উত্তরাঞ্চলের ৩ জেলার কৃষকেরা আমনের খেতে সেচ খরচের প্রায় ৯৫ কোটি টাকা সাশ্রয় করতে পেরেছেন। কম সার্ভিস চার্জের বিনিময়ে সেচনালা ব্যবহার করে তিস্তার পানি খেতে দেওয়ার মাধ্যমে তা সম্ভব হয়েছে।

এই পরিস্থিতি দেশের অন্যান্য এলাকা থেকে আলাদা। এখানে অপর্যাপ্ত বৃষ্টি ও জ্বালানির দাম বৃদ্ধির কারণে কৃষকদের অতিরিক্ত সেচ খরচের চাপে পড়তে হয়।

পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) তথ্য অনুসারে, এ বছর তিস্তা সেচ প্রকল্পের অধীনে উত্তরাঞ্চলের ৩ জেলার ১০ উপজেলায় ৬৩ হাজার হেক্টর জমি সেচ সুবিধার আওতায় আনা হয়েছে।

সুবিধাপ্রাপ্ত উপজেলাগুলো হলো--নীলফামারী জেলার ডিমলা, জলঢাকা, কিশোরগঞ্জ, সৈয়দপুর ও সদর; রংপুরের গঙ্গাচরা, তারাগঞ্জ ও বদরগঞ্জ এবং দিনাজপুর জেলার খানসামা ও চিরির বন্দর।

পাউবোর রংপুর বিভাগীয় মুখ্য সম্প্রসারণ কর্মকর্তা আব্দুল হাকিম দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, 'প্রজেক্ট এলাকায় এ বছর ১ হাজার ২০০ কোটি টাকা মূল্যের ৩ দশমিক ৮ লাখ মেট্রিক টন আমন ধান উৎপাদিত হয়েছে। যা বৈশ্বিক মন্দার মধ্যে দেশের খাদ্য নিরাপত্তায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে।'

'প্রকল্পের কৃষকেরা বৈরী আবহাওয়াতেও নিরবচ্ছিন্ন সেচ সুবিধা পাওয়ায় এটা সম্ভব হয়েছে,' যোগ করেন তিনি।

তিনি আরও বলেন, 'প্রকল্পটির ৭১২ কিলোমিটার দীর্ঘ সেচনালার মধ্যে ভালো অবস্থায় থাকা ৩৩০ কিলোমিটার অংশ, আমন খেতে সেচের জন্য তিস্তার পানি পৌঁছে দিতে উপযোগী ভূমিকা রেখেছে।'

পাউবোর নীলফামারী উপবিভাগীয় কর্মকর্তা আব্দুল হান্নান প্রধান ডেইলি স্টারকে বলেন, 'আমরা মৌসুমের সময় কৃষকদের হেক্টরপ্রতি সর্বনিম্ন ১ হাজার ২০০ টাকায় সেচ সুবিধা দিয়ে থাকি।'

কৃষক ও পাউবো সূত্রে জানা গেছে, তিস্তা সেচ প্রকল্পের বাইরে প্রতি হেক্টর আমনের জমিতে সেচের জন্য গভীর ও অগভীর নলকূপ মালিকরা কৃষকদের কাছ থেকে ১৫ হাজার টাকা আদায় করে থাকেন। এই খরচ বহন করা কৃষকদের জন্য খুবই কষ্টসাধ্য।

সেই অনুযায়ী প্রকল্পের ৬৩ হাজার হেক্টর জমিতে এ বছর সেচ খরচ বাবদ কৃষকেরা ৯৫ কোটি টাকা সাশ্রয় করতে সক্ষম হয়েছে।

গঙ্গাচরা উপজেলার গঞ্জিপুর গ্রামের তিস্তা প্রকল্পের আওতাধীন কৃষক আবেদ আলী (৫০) ডেইলি স্টারকে বলেন, 'আমি এক একর আমন ধানের জমিতে সেচ বাবদ পাউবোকে ৪৮০ টাকা সার্ভিস চার্জ দিয়েছি। প্রকল্পের বাইরের কৃষকদের এজন্য পাম্প মালিকদের দিতে হয় ৬ হাজার টাকা।'

নীলফামারী জেলার হরিশচন্দ্র পাট গ্রামের কৃষক হর্ষবর্ধন রায় ডেইলি স্টারকে বলেন, 'আমরা ডিজেল ও পেট্রোলসহ জ্বালানির অস্বাভাবিক দাম বাড়ার কারণে ভীত নই। প্রকল্পের কৃষকদের সেচের ব্যবস্থা করতে জ্বালানির প্রয়োজন হয় না। ভালো অবস্থায় থাকা সেচ নালার মাধ্যমে পানি সুন্দরভাবে প্রবাহিত হয়ে আমনের খেতে এসে পড়ে।'

রংপুর আঞ্চলিক কৃষিদপ্তর ও এলাকার কৃষকেরা ডেইলি স্টারকে জানান, এবার বর্ষায় আমন রোপণের সময় অর্থাৎ মধ্য জুন থেকে মধ্য আগস্ট স্বল্প বৃষ্টি হওয়ায় পানিনির্ভর আমন চাষ ব্যাপকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়।

সেই ক্ষতি কাটিয়ে উঠতে প্রকল্পের বাইরের কৃষকেরা ডিজেলচালিত গভীর ও অগভীর নলকূপ ব্যবহার করে খেতে অতিরিক্ত সেচ দেন। তাদের উৎপাদন খরচ অনেক বেশি পড়ে। ডিজেলের অস্বাভাবিক মূল্যবৃদ্ধি তাদের জন্য 'মরার উপর খাঁড়ার ঘা' হয়ে উঠে।

পাউবোর ডালিয়া ডিভিশনের নির্বাহী প্রকৌশলী আসফাউদ্দৌলা ডেইলি স্টারকে বলেন, 'বর্ষায় ভারত নিজেদের অংশে অতিরিক্ত পানির চাপ কমাতে তিস্তার উজানে গজালডোবা ব্যারেজের সব গেট খুলে রাখায় সেচের জন্য পানি পেতে সহজ হয়।'

পাউবোর নীলফামারী ডিভিশনের নির্বাহী প্রকৌশলী কৃষ্ণকমল চন্দ্র সরকার ডেইলি স্টারকে বলেন, 'প্রকল্পের সেচ নালাগুলোর দূরবর্তী অংশের উন্নয়ন কাজ চলমান আছে। কাজ শেষ হলে আমরা প্রকল্পের সর্বোচ্চ লক্ষ্যমাত্রা ১ দশমিক ৪ লাখ হেক্টর জমিতে সেচ সুবিধা দিতে পারব।'

Comments

The Daily Star  | English
explanations sought from banks for unusual USD rates

Explanations sought from 13 banks for higher dollar rate

BB issued letters on Dec 19 and the deadline for explanation ends today

2h ago