গরু-ছাগল বিক্রি করে মিলছে না প্রত্যাশিত দাম
কুড়িগ্রাম ও লালমনিরহাটে বন্যা কবলিত এলাকায় তৃণভূমিগুলো এখনো পানিতে নিমজ্জিত। ফলে দেখা গিয়েছে পশু খাদ্যের সংকট। আর্থিক অনটনের পাশাপাশি পশু খাদ্যের সংকটে পড়ায় পোষা প্রাণী বিক্রি করছেন কৃষক। নিকটবর্তী হাট-বাজারে সরবরাহ বেড়ে যাওয়ায় পাওয়া যাচ্ছে না প্রত্যাশিত দাম।
কুড়িগ্রাম সদর উপজেলা, রৌমারী ও লালমনিরহাট সদর উপজেলার বিভিন্ন এলাকা ঘুরে এ পরিস্থিতি দেখা গেছে। ভুক্তভোগীদের অভিযোগ, বন্যার ক্ষতির সুযোগ নিচ্ছেন স্থানীয় ব্যবসায়ীরা। ঈদুল আজহার কাছাকাছি সময়ে এসেও প্রত্যাশিত দামে গরু-ছাগল বিক্রি করা সম্ভব হচ্ছে না।
কুড়িগ্রাম সদর উপজেলায় ব্রহ্মপুত্র নদের চর আইরমারীর বাসিন্দা নবীর হোসেন। বন্যার পুরোটা সময় ডুবে ছিল চর আইরমারী। পানি কমে যাওয়ার পরে নবীর হোসেন সপরিবারে ঘরে ফিরেছেন। পশু খাদ্যের সংকট দেখা দেওয়ায় তিনি পোষা গরু-ছাগল বিক্রি করে দিচ্ছেন।
নবীর হোসেন দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, আমার ৬টি গরু ও ৮টি ছাগল ছিল। দুদিন আগে দুটি গরু ও ৩টি ছাগল বিক্রি করেছি। বন্যা শুরুর আগে ক্রেতারা দুটি গরু ১ লাখ ৪০ হাজার টাকায় কিনতে রাজি ছিলেন। বন্যার পরে ১ লাখ ২০ হাজার টাকায় বিক্রি করতে হয়েছে। ৩টি ছাগল বিক্রি করেছি ১৭ হাজার টাকায়। সে সময় ক্রেতারা ২১ হাজার টাকা পর্যন্ত দাম বলেছিলেন।
তিনি আরও বলেন, পশু খাদ্যের সংকট দেখা দিয়েছে। আমাদের চলার জন্যও টাকার প্রয়োজন। তাই এই দামে গরু বিক্রি করতে হলো।
কুড়িগ্রাম সদর উপজেলার যাত্রাপুর এলাকার হাটে ৩টি গরু বিক্রির উদ্দেশ্যে এনেছিলেন নজরুল ইসলাম। তিনি ডেইলি স্টারকে বলেন, যেমন দাম পাওয়ার কথা তেমন পেলাম না। সংসারে টাকার প্রয়োজন তাই ২টি গরু বিক্রি করেছি। আরেকটি নিয়ে যাচ্ছি।
তিনি অভিযোগ করেন, বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকরা ঈদকে সামনে রেখে গরু-ছাগল বিক্রি করতে শুরু করেছেন। সরবরাহ বেড়ে গেছে আর সেই সুযোগ কাজে লাগিয়ে কম দামে পশু কিনছেন ব্যবসায়ীরা। ঈদের আগে যদি গরুর দাম বাড়ে তাহলে আরেকটি গরু বিক্রি করবো।
কুড়িগ্রামের রৌমারী উপজেলার ধনারচর গ্রামের বাসিন্দা রাফি হোসেন জানান, ৫টি গরুর জন্য তিনি ৬০ হাজার টাকার খড় কিনেছিলেন। বন্যার পানিতে ডুবে থাকায় অধিকাংশ খড় নষ্ট হয়ে গেছে। এখন চড়া দামে বাজার থেকে পশু খাদ্য কিনতে হচ্ছে। ইতোমধ্যে তিনি ৫৩ হাজার টাকায় একটি একটি গরু বিক্রি করেছেন। বন্যার আগে এই গরু ৬০ হাজার টাকায় বিক্রি করা সম্ভব ছিল।
খাদ্য সংকটের কারণে আমাকে আরও একটি গরু বিক্রি করতে হবে কম দামে, বলেন তিনি।
লালমনিরহাট সদর উপজেলার তিস্তাপাড়ে চর চিনাতুলীর বাসিন্দা আব্দুল কাদের ডেইলি স্টারকে বলেন, বাড়ির ভেতরে বন্যার পানি উঠেছিল। গরু-ছাগল-হাঁস-মুরগি নিয়ে আশ্রয় নিয়েছিলাম স্কুলে। বন্যার পানিতে আশে পাশের ঘাস মরে গেছে। যে কারণে ৩টি গরুর মধ্যে একটি বিক্রি করে দিয়েছেন। তবে কাঙ্ক্ষিত দাম পাননি। ৮টি মুরগি ও ১০টি হাঁস বিক্রি করেছেন।
কাদের বলেন, আশা করেছিলাম এবার ঈদে বেশি দামে গরু বিক্রি করতে পারবো। বন্যা সেই আশা নষ্ট করে দিলো।
জেলা প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, কুড়িগ্রাম ও লালমনিরহাটে ১৭ লাখ গরু-মহিষ ও ১৫ লাখ ছাগল-ভেড়া রয়েছে। চরাঞ্চলের প্রত্যেকটি বাড়িতে একাধিক গরু-ছাগর পালন করা হয়। গবাদি পশু বিক্রি তাদের আয়ের প্রধান উৎস।
সূত্র জানিয়ে, পশু খাদ্য কেনার জন্য ত্রাণ ও পুনর্বাসন মন্ত্রণালয়ের বরাদ্দ দেওয়া ২১ লাখ ৭০ হাজার টাকা ক্ষতিগ্রস্তদের মধ্যে বিতরণ প্রক্রিয়াধীন।
কুড়িগ্রাম জেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা আব্দুল হাই সরকার ডেইলি স্টারকে বলেন, বন্যার পানিতে খড় নষ্ট হয়ে গেছে। তৃণভূমিগুলো এখনো নিমজ্জিত। তাই কৃষকরা গবাদি পশু পালন নিয়ে মহাসংকটে। অনেকে কম দামে গরু-ছাগল বিক্রি করে দিচ্ছেন। বন্যার পানি নেমে যাওয়ার পরও প্রায় ২ মাস সময় লাগে নতুন করে ঘাস জন্মাতে।
Comments