শিক্ষার্থীকে যৌন হয়রানি: শিক্ষকের বিরুদ্ধে ১০ বছরের শাস্তির সুপারিশ, সিন্ডিকেটে কমিয়ে ৪

দুই শিক্ষার্থীকে যৌন হয়রানির দায়ে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের (রাবি) শিক্ষা ও গবেষণা ইন্সটিটিউটের শিক্ষক বিষ্ণু কুমার অধিকারীর ৪ বছরের ইনক্রিমেন্ট ও পদোন্নতি স্থগিত করেছে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ।

দুই শিক্ষার্থীকে যৌন হয়রানির দায়ে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের (রাবি) শিক্ষা ও গবেষণা ইন্সটিটিউটের শিক্ষক বিষ্ণু কুমার অধিকারীর ৪ বছরের ইনক্রিমেন্ট ও পদোন্নতি স্থগিত করেছে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ।

তবে অপরাধের দায়ে অভিযুক্ত শিক্ষকের বিরুদ্ধে ১০ বছরের শাস্তির সুপারিশ করা হয়েছিল বলে দ্য ডেইলি স্টারকে জানিয়েছেন তদন্তকারী বিশ্ববিদ্যালয়ের যৌন নিপীড়ন ও নিরোধ সেলের প্রধান।

গত রোববার রাতে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক গোলাম সাব্বির সাত্তারের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত ওই সভায়, অভিযুক্ত শিক্ষক বিষ্ণু কুমার অধিকারীর চার বছরের জন্য ইনক্রিমেন্ট ও পদোন্নতি স্থগিতের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। তদন্ত কমিটির প্রতিবেদনে দেওয়া সুপারিশক্রমে এই শাস্তি দেওয়া হয় বলে সভা শেষে জানান, একাধিক সিন্ডিকেট সদস্য।

শাস্তির ব্যাপারে হয়রানির শিকার এক শিক্ষার্থীর সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি হতাশা জানিয়ে বলেন, 'আমি এই দিন দেখার জন্য তিন বছর আগে অভিযোগ জানাইনি। আমরা ভেবেছিলাম প্রশাসন অভিযুক্ত শিক্ষকের বিরুদ্ধে উপযুক্ত শাস্তির ব্যবস্থা গ্রহণ করবে। কিন্তু তা না করে, তাকে অতি সহজেই নামমাত্র শাস্তি দিয়ে তাকে সুযোগ দেয়া হয়েছে।'

তিনি বলেন, আমাদের আরও বছরখানেক এই ইন্সটিটিউটে আসতে হবে, কারণ এখনো মাস্টার্সের ক্লাস পরীক্ষা বাকি। অথচ তাকে যে শাস্তি দেওয়া হয়েছে তাতে তিনি আবারও ক্লাস পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করতে পারবেন, আগের মতোই। এখন আমি কী করে ওই শিক্ষকের সামনে যাবো?

বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ কী করে ভাবলো যে, শিক্ষার্থীরা সুস্থ মস্তিষ্কে যৌন হয়রানির দায়ে অভিযুক্ত এক শিক্ষকের ক্লাসে আবারো অংশগ্রহণ করবে, বলে প্রশ্ন করেন তিনি।

আমরা বরং অভিযোগ না করে বিশ্ববিদ্যালয় ছেড়েই চলে যেতাম, বলে আক্ষেপও প্রকাশ করেন এই শিক্ষার্থী।

শিক্ষার্থী বলেন, 'পরিবারের পরে বিশ্ববিদ্যালয়, বিভাগ। বিভাগের শিক্ষকেরাই আমাদের দ্বিতীয় আশ্রয়স্থল। এখন সেখানেই যদি শিক্ষার্থীরা নিরাপত্তাহীনতায় ভোগে, তাহলে তারা কোথায় যাবে? তারাও কি আমার মতো পড়াশোনা বাদ দিয়ে বিশ্ববিদ্যালয় ছেড়ে চলে যাবার চিন্তা করবে?'

বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন নিরপেক্ষ বিচার করতে ব্যর্থ হয়েছে বলেও তিনি মন্তব্য করেন।

শুধু ভুক্তভোগীরাই নয়, এ ব্যাপারে হতাশা প্রকাশ করেছেন এই ঘটনায় তদন্ত কমিটির প্রধান এবং বিশ্ববিদ্যালয়ের যৌন নিপীড়ন ও নিরোধ সেলের প্রধান অধ্যাপক রেজিনা লাজ।

ডেইলি স্টারকে তিনি বলেন, 'তদন্তে আমরা ওই শিক্ষকের বিরুদ্ধে আনীত সব অভিযোগের প্রমাণ পেয়েছি৷ সে অনুযায়ী আমরা ১০ বছরের জন্য তার ইনক্রিমেন্ট এবং পদন্নোতি স্থগিতের জন্য সুপারিশ করেছিলাম। অথচ আমরা জানতে পেরেছি, এই শাস্তির পরিমাণ কমিয়ে অর্ধেকেরও কম করা হয়েছে। যা অনাকাঙ্ক্ষিত ও অপ্রত্যাশিত।'

তিনি বলেন, একজন শিক্ষক যখন তার শিক্ষার্থীর সঙ্গে এমন আচরণ করেন তখন সমাজে নৈতিকতা বলে আর কিছু অবশিষ্ট থাকে না। তাই আমরা অভিযোগের মাত্রা অনুযায়ী উপযুক্ত শাস্তির সুপারিশ করেছিলাম। অথচ কর্তৃপক্ষ তা কমিয়ে, অপরাধীকে এক ধরনের সুযোগ করে দিল বলেই প্রতীয়মান হয়।'

এই ঘটনার মাধ্যমে শিক্ষার্থীদের মধ্যে এধরনের ঘটনায় অভিযোগ দাখিল করার ক্ষেত্রে নেতিবাচক ধারণার সৃষ্টি করবে বলেও তিনি মন্তব্য করেন।

এ বিষয়ে জানতে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক গোলাম সাব্বির সাত্তারের সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, 'এ ধরনের সিদ্ধান্ত গ্রহণের ক্ষেত্রে উপাচার্যের কিছু করার থাকে না। সিন্ডিকেট সভায় উপস্থিত সদস্যরাই সম্মিলিতভাবে এই সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেছেন। কারো একার কিছু করার নেই এখানে।'

ভুক্তভোগী শিক্ষার্থী এবং তদন্ত কমিটির হতাশার ব্যাপারে অবহিত করা হলে তিনি বলেন, 'আইন কিংবা নিয়ম-কানুন সবসময় সবাইকে খুশি করতে পারে না। এখানে সিন্ডিকেট সদস্যরা যা সিদ্ধান্ত নিয়েছে, এর বাইরে যাওয়ার সুযোগ নেই।'

এ ব্যাপারে জানতে তিন জন সিন্ডিকেট সদস্যের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে, তারা কেউই মন্তব্য করতে রাজি হননি।

উল্লেখ্য, ২০১৯ সালের ২৫ ও ২৭ জুন ইনস্টিটিউট কর্তৃপক্ষের কাছে সহকারী অধ্যাপক বিষ্ণু কুমার অধিকারীর বিরুদ্ধে যৌন হয়রানি ও মানসিকভাবে উত্ত্যক্ত করার অভিযোগ করেন ২ শিক্ষার্থী।

অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে ইনস্টিটিউটের পরিচালককে আহ্বায়ক করে ৩ সদস্যের অনুসন্ধান কমিটি গঠন করে ইনস্টিটিউট কর্তৃপক্ষ। এরপরে ২৮ জুন, অভিযোগ তুলে নিতে হুমকি দেয়া হচ্ছে, এমন দাবিতে ওই ২ ছাত্রী নিরাপত্তা চেয়ে মতিহার থানায় জিডিও করেন।

পরবর্তীতে ওই বছরের ২ জুলাই ইনস্টিটিউটের সব অ্যাকাডেমিক কার্যক্রম থেকে অভিযুক্ত শিক্ষককে সাময়িক অব্যাহতি দিয়েছিল কর্তৃপক্ষ। পরে অভিযোগটি বিশ্ববিদ্যালয়ের যৌন নিপীড়ন সেলে তদন্তের জন্য পাঠানো হয়।

Comments

The Daily Star  | English

Abu sayed’s death in police firing: Cops’ FIR runs counter to known facts

Video footage shows police shooting at Begum Rokeya University student Abu Sayed, who posed no physical threat to the law enforcers, during the quota reform protest near the campus on July 16. He died soon afterwards.

7h ago