চীনে লড়াইরত ডাইনোসর ও স্তন্যপায়ী প্রাণির জীবাশ্ম উদ্ধার

শিল্পীর চোখে স্তন্যপায়ী প্রাণী ও ডাইনোসরের লড়াই। ছবি: সংগৃহীত
শিল্পীর চোখে স্তন্যপায়ী প্রাণী ও ডাইনোসরের লড়াই। ছবি: সংগৃহীত

নিজের চেয়ে ৩ গুণ বড় আকারের ডাইনোসরের পাঁজরে দাঁত বসিয়েছে কিছুটা বেজীর মতো দেখতে ১টি স্তন্যপায়ী প্রাণি। ২ জনের মধ্যে চলছিল জোরদার লড়াই। সে সময় জেগে ওঠে আগ্নেয়গিরি। অগ্নুৎপাতে ১২৫ মিলিয়ন বছর আগে সমাধি লাভ করে তারা৷ কালের আবর্তে পরিণত হয় জীবাশ্মে।

চীনে খুঁজে পাওয়া এই জীবাশ্ম দেখে মনে হয়, স্তন্যপায়ীটি শিকারে পরিণত করতে চেয়েছে ডাইনোসরটিকে।

কানাডিয়ান মিউজিয়াম অব নেচারের জীবাশ্মবিদ জর্ডান ম্যালনের চক্ষু চড়কগাছ হওয়ার দশা হয়েছিলো জীবাশ্মকৃত এই দৃশ্য দেখে।

গবেষক দলের দাবি, এটাই কোনো স্তন্যপায়ী প্রাণির সঙ্গে ডাইনোসরের লড়াইয়ের প্রথম প্রমাণ। আকারে স্তন্যপায়ীর তুলনায় অন্তত ৩ গুণ বড় ছিলো ডাইনোসরটি৷

স্তন্যপায়ী প্রাণী ও ডাইনোসরের লড়াইয়ের জীবাশ্ম । ছবি: সংগৃহীত
স্তন্যপায়ী প্রাণী ও ডাইনোসরের লড়াইয়ের জীবাশ্ম । ছবি: সংগৃহীত

কয়েক মিলিয়ন বছর ধরে পৃথিবীতে রাজত্ব করা ডাইনোসরকে শিকার করবে স্তন্যপায়ী- এটা বিশ্বাস করা কঠিন।  তবে জীবাশ্মটিতে দেখা যায় র‍্যাপেনোম্যামাস রোবাস্টাস বৈজ্ঞানিক নামের স্তন্যপায়ীটি চড়ে বসেছে সিটাকোসরাস লুজিয়াটিউনেনসিস বৈজ্ঞানিক নামের ডাইনোসরের ওপর। ডাইনোসরটি ১২০ সেন্টিমিটার লম্বা এবং এর আছে টিয়া পাখির মতো ঠোঁট।

ম্যালোনের মতে, স্তন্যপায়ীটি হায়েনার মতো প্রাণি নয়। অর্থাৎ এটি ডাইনোসরের মরদেহ ভক্ষণ করতে আসেনি। জীবিত ডাইনোসরের সঙ্গেই যুঝছিলো সে৷ ডাইনোসরটি পরাস্ত হয়ে পড়ছিলো, হাঁটুর ভাঁজে ফেলে তাকে কাবু করেছিলো স্তন্যপায়ীটি। এমন ঘটনা নেকড়ে জাতীয় প্রাণির ক্ষেত্রে দেখা যায়। আকারে  ছোট নেকড়ে বড় আকারের বলগা হরিণকে ধরে ফেলে।

এক্ষেত্রে র‍্যাপেনোম্যামাসটি একা নাকি দলবদ্ধ ছিলো তা বলার উপায় নেই। তবে এই প্রাণী যে ডাইনোসর শিকার করতে পারে, তা ২০০৫ সালেই প্রথম দেখা যায়৷ চীনে আবিষ্কৃত র‍্যাপেনোম্যামাসের অপর এক জীবাশ্মের পেটে বাচ্চা এক ডাইনোসরকে খুঁজে পাওয়া যায়। অর্থাৎ, ব্যাজারের মতো দেখতে এই স্তন্যপায়ী প্রাণি স্বভাবে দুর্ধর্ষ শিকারি।

সদ্যপ্রাপ্ত জীবাশ্মটিতে ২টি প্রাণির কঙ্কাল স্পষ্ট। ২০১২ সালে চীনের লিয়াওনিং প্রদেশ থেকে উদ্ধার করা হলেও এতোদিন পর এ সংক্রান্ত গবেষণা প্রতিবেদন প্রকাশ পেলো।

স্তন্যপায়ী প্রাণী ও ডাইনোসরের লড়াইয়ের জীবাশ্ম । ছবি: সংগৃহীত
স্তন্যপায়ী প্রাণী ও ডাইনোসরের লড়াইয়ের জীবাশ্ম । ছবি: সংগৃহীত

পুরনো দিনের রোমের পম্পেই নগরীর অনুসরণে জায়গাটির নাম 'চাইনিজ পম্পেই।' এখানে আগ্নেয়গিরির ছাইয়ে চাপা পড়েছিলো এমন বহু প্রাণি। জীবাশ্ম হিসেবে সেখান থেকে ডাইনোসরসহ বিভিন্ন প্রাণিকে উদ্ধার করা হয়েছে৷

'তবে এই জীবাশ্মটির চমক এখানেই- ডাইনোসরদের রাজত্বের সেই ক্রিটাশিয়াস যুগেও তাদের শিকারের সামর্থ্য রাখতো র‍্যাপেনোম্যামাসের মতো একটি মাংসাশী স্তন্যপায়ী।'- বলছিলেন ম্যালন।

এমন চমকপ্রদ জীবাশ্ম হয়তো জীবনে একবারই দেখা যায়। চীনের ওয়েইহাই শহরের এক প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সঙ্গে  সংযুক্ত জাদুঘরে প্রদর্শনের জন্য এটি রাখা আছে।

তথ্যসূত্র: গার্ডিয়ান, ফিস ডট ওআরজি

গ্রন্থনা: মাহমুদ নেওয়াজ জয়

 

Comments

The Daily Star  | English

Govt warns of tough action against protesting NBR officials

The strike crippled activities at customs and ports, affecting exports, imports, and businesses.

24m ago