নাসায় ট্রাম্পের কাটছাঁট: মহাকাশ গবেষণার নেতৃত্ব যাবে চীনের হাতে?

রয়টার্স ফাইল ছবি

প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের করা বাজেট কাটছাঁটের অংশ হিসেবে বাদ দেওয়া হয়েছে নাসার মঙ্গল অভিযান। এর সঙ্গে প্রধান বিজ্ঞানীর পদত্যাগ মিলিয়ে বেশ অনিশ্চয়তায় আছে মহাকাশ গবেষণা সংস্থাটি।

শনিবার চীনা সংবাদমাধ্যম সাউথ চায়না মর্নিং পোস্ট জানায়, এ মুহূর্তে মঙ্গল গ্রহ থেকে নমুনা সংগ্রহের মিশনে আছে কেবল চীন। দেশটির জাতীয় মহাকাশ প্রশাসনের (সিএনএসএ) টিয়ানওয়েন-৩ মিশনের মাধ্যমে ২০৩১ সালের মধ্যে মঙ্গল থেকে ৬০০ গ্রাম শিলা ও মাটি পৃথিবীতে আনা হবে।

গত মার্চে এই মিশনে অংশ নেওয়ার জন্য অন্যান্য দেশের মহাকাশ সংস্থাগুলোকে আনুষ্ঠানিকভাবে আমন্ত্রণ জানিয়েছে সিএনএসএ।

২০২৬ সালের বাজেট প্রস্তাবে ইতোমধ্যে নাসার মঙ্গল অভিযানের অর্থায়ন বন্ধের সুপারিশ করেছে হোয়াইট হাউজ। যৌথ আলোচনার মাধ্যমে কংগ্রেস ও হোয়াইট হাউসের আগামী কয়েক মাসের মধ্যে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেওয়ার কথা রয়েছে।

হংকং বিশ্ববিদ্যালয়ের বিজ্ঞানী চিয়েন ইউকি বলেন, 'চীনের সঙ্গে বৈশ্বিক অর্থনীতির নেতৃত্ব নিয়ে প্রতিযোগিতা শুরু করে যুক্তরাষ্ট্র মহাকাশে তাদের নেতৃত্ব হারাচ্ছে। সেটি চলে যাচ্ছে চীনের হাতে।'

চিয়েন আরও বলেন, হোয়াইট হাউসের এমন সিদ্ধান্ত যুক্তরাষ্ট্র ও তাদের মিত্রদের জন্য বড় ধরনের অনিশ্চয়তা তৈরি করেছে।

'নাসা ও ইউরোপিয়ান স্পেস এজেন্সির যৌথ উদ্যোগে নেওয়া মঙ্গল থেকে নমুনা আনার কর্মসূচি বাতিল করাটা সবচেয়ে বড় উদাহরণ। অথচ তাদের পারসিভিয়ারেন্স রোভার ২০২১ সাল থেকে উল্লেখযোগ্য পরিমাণ নমুনা সংগ্রহ করেছে (মঙ্গল থেকে),' যোগ করেন চিয়েন।

মহাকাশ মিশনে যুক্তরাষ্ট্রের আন্তর্জাতিক অংশীদাররা এখন নতুন করে চিন্তা করতে বাধ্য হতে পারে বলে মনে করছেন চিয়েন।

'চীন মঙ্গল থেকে নমুনা সংগ্রহ ও চাঁদে মানুষ পাঠানোর জন্য সুপরিকল্পিত, উচ্চাভিলাষী কর্মসূচি নিয়ে এগিয়ে যাচ্ছে। এমন সময়ে যুক্তরাষ্ট্রের পিছু হটার সিদ্ধান্ত অবশ্যই তাদের নেতৃত্বকে দুর্বল করবে,' যোগ করেন চিয়েন।

নাসার মিশন পরিচালনা বিভাগের বাজেট প্রায় ২০ শতাংশ কমানোর প্রস্তাব রেখেছে ট্রাম্প প্রশাসন। এ নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন স্পেসএক্সের প্রতিষ্ঠাতা ও ট্রাম্পের সহযোগী ইলন মাস্কও।

'আমি বিজ্ঞানের পক্ষে। কিন্তু দুঃখজনকভাবে নাসার বাজেট আলোচনায় অংশ নিতে পারি না। কারণ নাসার প্রধান ঠিকাদারদের একটি স্পেসএক্স,' বলেন মাস্ক।

অ্যারিজোনা স্টেট বিশ্ববিদ্যালয়ের মহাকাশনীতি বিশ্লেষক নম্রতা গোস্বামী বলেন, টিয়ানওয়েন-৩ মিশনের পর চীন কীভাবে তাদের মঙ্গল অনুসন্ধান কর্মসূচি চালিয়ে যাবে, সেটিরও বিস্তারিত রোডম্যাপ প্রকাশ করেছে সিএনএসএ।

এই রোডম্যাপ অনুযায়ী, ২০৩৭ সালের মধ্যে রোবটিক সার্ভে করে মঙ্গলে একটি ঘাঁটি তৈরির সম্ভাব্য স্থান চিহ্নিত করবে চীন। এরপর ২০৪১ সালের মধ্যে সেই গ্রহে একটি গবেষণা কেন্দ্র নির্মাণের পরিকল্পনা রয়েছে। এছাড়া, ২০৪৩ সালের মধ্যে মঙ্গল-পৃথিবী কার্গো পরিবহন ব্যবস্থা চালু করার লক্ষ্য নির্ধারণ করেছে চীন।

'চীন যেমন চাঁদ থেকে সম্পদ আহরণ ও সেখানে অর্থনৈতিক উন্নয়নের পরিকল্পনা হাতে নিয়েছে, এই (মঙ্গলের) পরিকল্পনাও তার সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ,' বলেন গোস্বামী।

তিনি আরও জানান, মঙ্গল অভিযানকে বেগবান করতে পারমাণবিক প্রপালশন প্রযুক্তি নিয়েও কাজ করছে চীন।

এদিকে মিশন পরিচালনা বিভাগ ছাড়াও নাসার অন্যান্য বৈজ্ঞানিক কর্মসূচির বাজেটেও কাটছাঁটের পরিকল্পনা করছে ট্রাম্প প্রশাসন। নাসার পরিকল্পিত ন্যান্সি গ্রেস রোমান স্পেস টেলিস্কোপ ও একটি ভেনাস মিশন বাতিল হয়ে যেতে পারে।

মার্কিন গণমাধ্যমের সূত্র অনুযায়ী, নাসার প্রায় ১০ হাজার বিজ্ঞানী, কর্মকর্তা, ঠিকাদারের কার্যালয় গদার্দ স্পেস ফ্লাইট সেন্টারও বন্ধ হয়ে যাওয়ার সম্ভাবনার মুখে আছে।

Comments

The Daily Star  | English
Anti-Terrorism Act

Banning party activities: Govt amends anti-terror law

The interim government is set to bring the curtain down on the Awami League as a functioning political party.

7h ago