ওয়াশিংটন-কিয়েভ খনিজ চুক্তি: ইউক্রেন কী চীনের বিকল্প হয়ে উঠবে

অবশেষে খনিজ চুক্তি সই করেছে যুক্তরাষ্ট্র-ইউক্রেন। ছবি: এএফপি
অবশেষে খনিজ চুক্তি সই করেছে যুক্তরাষ্ট্র-ইউক্রেন। ছবি: এএফপি

যুক্তরাষ্ট্র ও ইউক্রেন বিরল খনিজ খাতে সহযোগিতার লক্ষ্যে একটি বহুল প্রতীক্ষিত চুক্তি স্বাক্ষর করেছে। চুক্তির আওতায় উভয় দেশ ইউক্রেনের ভূগর্ভস্থ গুরুত্বপূর্ণ খনিজ সম্পদকে কাজে লাগাতে যৌথভাবে বিনিয়োগ তহবিল গঠনে সম্মত হয়েছে।

বিশ্লেষকদের মতে, এই উদ্যোগ শুধু ইউক্রেনের যুদ্ধোত্তর পুনর্গঠন নয়, বরং চীনের আধিপত্যকে চ্যালেঞ্জ জানাতে পশ্চিমা বিশ্বের কৌশলও বটে।

চুক্তি অনুযায়ী, 'রিকনস্ট্রাকশন ফান্ড ফর মিনারেল ডেভেলপমেন্ট' নামের ওই তহবিলে প্রথম ধাপে কয়েকশ মিলিয়ন ডলার সমপরিমাণ অর্থ বরাদ্দ করা হবে। তহবিল থেকে অর্জিত মুনাফার অর্ধেক ইউক্রেনের অবকাঠামো ও শিল্প পুনর্গঠনে ব্যয় হবে, বাকি অর্ধেক যুক্তরাষ্ট্রের বিনিয়োগ ফেরত পাঠানোর জন্য সংরক্ষিত থাকবে।

যুক্তরাষ্ট্রের একজন শীর্ষ কর্মকর্তার ভাষ্য, 'চুক্তিটি আমাদের শুধু কাঁচামালের সরবরাহ শৃঙ্খলকেই বৈচিত্র্যপূর্ণ করবে না, বরং একইসঙ্গে ইউক্রেনের অর্থনীতির স্থিতিশীলতাকেও শক্ত ভিত্তি দেবে।'

ইউক্রেনের ঝিতোমির অঞ্চলে টাইটানিয়ামের খনিতে খনন চলছে। ছবি: এএফপি
ইউক্রেনের ঝিতোমির অঞ্চলে টাইটানিয়ামের খনিতে খনন চলছে। ছবি: এএফপি

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ইউক্রেনের ভূগর্ভে রয়েছে ইউরোপীয় ইউনিয়নের তালিকাভুক্ত ৩৪টি গুরুত্বপূর্ণ খনিজের মধ্যে অন্তত ২২টির সম্ভাব্য মজুত। এর মধ্যে রয়েছে লিথিয়াম, টাইটানিয়াম, গ্রাফাইট, নিকেল, কপার, জিরকোনিয়াম ও বিরল মৃত্তিকা উপাদান (খনিজ)।

পূর্ব ইউক্রেন ও দনবাস অঞ্চল ঘিরে থাকা কিছু খনি এলাকা রাশিয়ার নিয়ন্ত্রণে থাকায় উত্তোলন কার্যক্রম বাধাগ্রস্ত হতে পারে। তবে পশ্চিম ও মধ্যাঞ্চলে এখনও বিপুল পরিমাণ সম্পদ অনাবিষ্কৃত অবস্থায় রয়েছে।

চীনের একচেটিয়া বিরল খনিজ বাজার দখলের বাস্তবতায় পশ্চিমা দেশগুলো কয়েক বছর ধরেই বিকল্প উৎস সন্ধানে ছিল। ইউক্রেন সেই ঘাটতি পূরণের একটি সম্ভাব্য উৎস হিসেবে উঠে এসেছে। কারণ, ইউক্রেনের মাটিতে রয়েছে প্রায় ৫ লাখ টন অনুমিত লিথিয়াম মজুত, যা বৈদ্যুতিক গাড়ি ও ব্যাটারি শিল্পের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।

তবে ইউক্রেনের খনিজ শিল্পকে ঘিরে কিছু চ্যালেঞ্জও রয়েছে। দেশটির বেশিরভাগ ভূতাত্ত্বিক জরিপই সোভিয়েত আমলে করা, ফলে প্রকৃত মজুত ও উত্তোলনযোগ্যতার নির্ভরযোগ্য মূল্যায়ন এখনও অনুপস্থিত। এছাড়া যুদ্ধোত্তর নিরাপত্তা ও অবকাঠামোগত দুর্বলতাও বড় বাধা।

তবে এই চুক্তিকে কেন্দ্র করে ইউক্রেনের অর্থনৈতিক ভবিষ্যৎ নিয়ে আশাবাদী কিয়েভ। ইউক্রেনের অর্থনৈতিক উন্নয়ন ও বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের এক বিবৃতিতে বলা হয়, 'এই বিনিয়োগ কেবল খনিজ নয়, আমাদের প্রযুক্তি, গবেষণা ও রপ্তানি অবকাঠামোকেও নতুন করে সাজাতে সহায়তা করবে।'

ভ্যাটিকানে বৈঠক করেন ট্রাম্প ও জেলেনস্কি। ফাইল ছবি: এএফপি
ভ্যাটিকানে বৈঠক করেন ট্রাম্প ও জেলেনস্কি। ফাইল ছবি: এএফপি

অন্যদিকে, চুক্তিটি চীনের বিরল খনিজ বাজারে কতটা চাপ সৃষ্টি করবে—তা সময়ই বলে দেবে। তবে যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপের জন্য এটি একটি 'সাপ্লাই চেইন শিফট' করার বাস্তব কৌশল হিসেবেই বিবেচিত হচ্ছে।

বর্তমানে চীন বিশ্বের ৭০ শতাংশের বেশি বিরল খনিজ প্রক্রিয়াজাত করে। পশ্চিমা প্রযুক্তি ও প্রতিরক্ষা শিল্প এই কাঁচামালের ওপর ব্যাপকভাবে নির্ভরশীল।

ইউক্রেন যদি সফলভাবে উত্তোলন ও রপ্তানির কাঠামো গড়ে তুলতে পারে, তবে তা বৈশ্বিক খনিজ সরবরাহে বড় ধরনের সমীকরণ বদলাতে পারে বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা।

Comments

The Daily Star  | English
bad loans rise in Bangladesh 2025

Bad loans hit record Tk 420,335 crore

It rose 131% year-on-year as of March of 2025

1h ago