তথ্য সুরক্ষা, নির্বাচনে অবৈধ হস্তক্ষেপ বন্ধে ইইউতে কঠোর আইন
বিশ্বের শীর্ষস্থানীয় প্রযুক্তি প্রতিষ্ঠান ও সার্চ ইঞ্জিনগুলোকে এখন থেকে ইউরোপীয় ইউনিয়নের (ইইউ) নতুন একটি কঠোর আইন মেনে চলতে হবে।
সম্প্রতি গ্রাহকদের তথ্যের সুরক্ষা, নিরাপত্তা ও নির্বাচনে অবৈধ হস্তক্ষেপ বন্ধে এই আইন পাশ করেছে ইইউ।
আইনের বৃত্তান্ত
ইইউ ডিজিটাল সার্ভিসেস অ্যাক্ট (ডিএসএ) নামের এই আইন ভঙ্গকারীকে বড় অঙ্কের জরিমানা গুণতে হবে।
বলা হচ্ছে, সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম চালু হওয়ার পর আর কোথাও এত কঠোর আইনের প্রচলন হয়নি। এই আইনের সঙ্গে তাল মিলিয়ে চলতে ইন্টারনেটভিত্তিক প্রযুক্তি প্রতিষ্ঠানগুলোকে এখন বড় আকারের নীতিগত পরিবর্তন আনতে হবে, যা নজিরবিহীন।
যার ফলে ইউরোপীউ ইউনিয়নের আওতাধীন দেশগুলোতে ব্যবহারকারীরা ইন্টারনেটের ক্ষেত্রে অনেক নতুন নিয়ম ও ফিচার দেখতে পাবেন।
ফেসবুক, টিকটকের মতো বড় ১৯টি প্ল্যাটফর্মকে শিশু সুরক্ষা ও নির্বাচনে হস্তক্ষেপ বন্ধে আরও কঠোর ভূমিকা পালন করতে হবে। ইতোমধ্যে অনেকগুলো প্রতিষ্ঠান তাদের নীতিতে পরিবর্তন এনেছে।
এই আইন ২০২২ সালের ১৬ নভেম্বর পাস হলেও প্রযুক্তই প্রতিষ্ঠানগুলোকে এত দিন তাদের নীতিতে পরিবর্তন আনার জন্য সময় দেওয়া হয়েছিল।
কাদেরকে এই আইন মেনে চলতে হবে
গত ২৫ এপ্রিল ইউরোপীয় কমিশন জানায়, যেসব প্ল্যাটফর্মে সাড়ে ৪ কোটির বেশি মাসিক ইইউ গ্রাহক আছে, তাদের সবাইকেই এই আইন মেনে চলতে হবে। ফলে আলীবাবা, আলীএক্সপ্রেস, অ্যামাজন স্টোর, বুকিং ডট কম, ফেসবুক, গুগল প্লে, গুগল ম্যাপস, গুগল শপিং, ইনস্টাগ্রাম, লিংকডইন, পিনটারেস্ট, স্ন্যাপচ্যাট, টিকটক, এক্স (সাবেক টুইটার), উইকিপিডিয়া, ইউটিউব ও জালান্ডোকে এই আইনটি মেনে চলতে হবে।
তখনই আইনটি মেনে চলার জন্য ৪ মাসের সময় দেয় ইউরোপীয় কমিশন, যে সময়সীমা শেষ হয়েছে গত ২৫ আগস্ট। তবে ছোট প্রতিষ্ঠানগুলো আগামী বছর পর্যন্ত সময় পাবে।
আইন ভঙ্গকারীকে আন্তর্জাতিক বাজার থেকে আয় করা রাজস্বের ৬ শতাংশ পর্যন্ত জরিমানা করা হতে পারে অথবা তাদের সেবা বন্ধও করে দেওয়া হতে পারে।
প্রযুক্তি প্ল্যাটফর্মের বাড়তি কাজ
এই আইনের আওতায় বড় বড় প্ল্যাটফর্মগুলোকে বাড়তি কিছু কাজও করতে হবে। তাদের দ্বারা সম্ভাব্য ঝুঁকির বিষয়গুলো চিহ্নিত করে সেগুলো মোকাবেলায় কি কি পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে, তাও নিয়মিত কর্তৃপক্ষকে জানাতে হবে। যেসব সম্ভাব্য ঝুঁকি সম্পর্কে সতর্ক থাকতে হবে, সেগুলো হচ্ছে:
- অবৈধ কনটেন্ট
- মত প্রকাশের স্বাধীনতা, গণমাধ্যমের স্বাধীনতা, বৈষম্য, গ্রাহকদের সুরক্ষা ও শিশুদের অধিকার
- জননিরাপত্তা ও নির্বাচনী ব্যবস্থার প্রতি হুমকি
- লিঙ্গভিত্তিক সহিংসতা, জনস্বাস্থ্য, সংখ্যালঘুদের সুরক্ষা এবং মানসিক ও শারীরিক সুস্থতা
এই আইনের কারণে এখন থেকে আর শিশুদেরকে নির্দিষ্ট বিজ্ঞাপন দেখানোর জন্য শ্রেণীবদ্ধ করা যাবে না।
একজন গ্রাহক কী ধরনের বিজ্ঞাপন দেখেন কিংবা তার ফিডে কোন ধরনের পোস্ট যায়, সেগুলো যে অ্যালগরিদমের মাধ্যমে নির্ধারিত হয়, তাও দেখাতে হবে ইইউর নিয়ন্ত্রক কর্তৃপক্ষকে। স্বাধীন গবেষকদের সঙ্গে তথ্য ভাগাভাগির ব্যবস্থাও করতে হবে প্রযুক্তি প্রতিষ্ঠানগুলোকে।
বাস্তবায়নের পথে কতদূর এগিয়েছে প্রতিষ্ঠানগুলো
বড় বড় প্রতিষ্ঠানগুলো ইতোমধ্যে এই আইনের আদলে তাদের নীতি পরিবর্তন করতে সর্বোচ্চ চেষ্টা করে যাচ্ছে। মেটা এবং টিকটক জানিয়েছে, আইনটির সঙ্গে নীতিগত সঙ্গতি বজায় রাখতে তাদের প্রতিষ্ঠানের ১ হাজারেরও বেশি কর্মী কাজ করে যাচ্ছে।
অনেকেই এরই মধ্যে নীতিগত পরিবর্তন এনেছে। ব্যক্তিগত বিজ্ঞাপন (পার্সোনালাইজড অ্যাড) ও ফিডের ক্ষেত্রে যেসব পরিবর্তন চালু হয়েছে-
গত জুলাই মাস থেকে ১৩-১৭ বছর বয়সী ইউরোপীয় গ্রাহকদের জন্য তাদের অনলাইন কার্যক্রমের উপর ভিত্তি করে পার্সোনালাইজড বিজ্ঞাপন দেখানো বন্ধ করেছে টিকটক।
ফেব্রুয়ারি থেকে ফেসবুক ও ইনস্টাগ্রামেও একই নীতি অনুসরণ করছে মেটা
যুক্তরাজ্য এবং ইউরোপে একই পথে হাঁটছে স্ন্যাপচ্যাটও।
ইউরোপের ফেসবুক এবং ইনস্টাগ্রাম ব্যবহারকারীদের কেবলমাত্র তারা যাদেরকে অনুসরণ করে, তাদের স্টোরি এবং রিলস দেখার অপশন দিয়েছে।
গবেষকদের সঙ্গে আরও বেশি তথ্য ভাগাভাগির ঘোষণাও এসেছে প্রযুক্তি প্রতিষ্ঠানগুলোর কাছ থেকে। গুগল অঙ্গীকার করেছে তাদের সার্চ ইঞ্জিন, ইউটিউব, ম্যাপস, গুগল প্লে এবং শপিং কী ভাবে কাজ করে, সে সম্পর্কে আরও বেশি তথ্য সরবরাহ করবে।
তবে অনেকেই এখনো প্রয়োজনীয় পরিবর্তন সম্পন্ন করেনি। এক্স, যেটি আগে টুইটার নামে পরিচিত ছিল, বলেছে তারা নির্ধারিত সময়সীমার মধ্যে কাজটি শেষ করার 'পথে রয়েছে'।
অ্যামাজনও তাদের প্ল্যাটফর্মের সন্দেহজনক অবৈধ পণ্য ও কনটেন্ট সম্পর্কে সতর্কবার্তা পাওয়ার নতুন চ্যানেল প্রতিষ্ঠা করেছে। আরেক অনলাইন প্রতিষ্ঠান জালান্ডো বলেছে, তারাও আইনটি মেনে চলবে।
সূত্র: বিবিসি
গ্রন্থনা: আহমেদ হিমেল
Comments