‘আমার অধিনায়ক, আমাদের অধিনায়ক’

Zakaria Pintoo

গত অগাস্টে পৃথিবী ছেড়ে চলে যান সাইদুর রহমান প্যাটেল। এর আগে একে একে না ফেরার দেশে পাড়ি দেন আব্দুল হালিম, বিমল কর, নওশেরুজ্জামান। স্বাধীন বাংলা ফুটবল দলের দেউটি নিভে যাওয়ার পালায় এবার চলে গেলেন নেতা, অধিনায়ক জাকারিয়া পিন্টু। প্রকৃতির অমোঘ সত্য হলেও সতীর্থের বিদায়ে প্রতাপ শঙ্কর হাজরা, কাজী সালউদ্দিনদের হৃদয় বেদনার্ত, স্মৃতিকাতর।

সোমবার ৮১ বছর বয়েসে মারা যান পিন্টু।যার নাম বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ ও ফুটবলের ইতিহাসে উজ্জ্বল হয়ে থাকবে। মুক্তিযুদ্ধকালীন স্বাধীন বাংলা ফুটবল দলের অধিনায়ক তো বটেই, স্বাধীন বাংলাদেশের প্রথম জাতীয় দলেরও নেতৃত্বে ছিলেন তিনি।

পিন্টুর সঙ্গে খেলা কিংবা তার বিপরীতে খেলা প্রত্যেকেই এই ডিফেন্ডারকে নিজেদের অধিনায়ক মানেন। স্বাধীন বাংলা ফুটবল দলে পিন্টুর ডেপুটি ছিলেন প্রতাপ শঙ্কর হাজরা। ফুটবলের পাশাপাশি হকিও খেলেছেন তিনি। ৮০ পার করেছেন প্রতাপও।

যার সঙ্গে বিশ্ববিদ্যালয় জীবন থেকে শুরু করে মৃত্যু অবধি বন্ধুত্ব সেই পিন্টুর চলে যাওয়া বড় বেদনার প্রতাপের কাছে। শুধু জাতীয় দল নয়, মোহামেডানেও একসঙ্গে খেলেছেন তারা। দ্য ডেইলি স্টারকে প্রতাপ বলেন, 'সে ছিলো আমার অধিনায়ক, আমাদের অধিনায়ক।'

'আমার কাছে সে হিলো বাংলাদেশের সেরা ডিফেন্ডার। কেউ তাকে পরাস্ত করে বল নিয়ে এগুতে পারত না। আর অধিনায়ক হিসেবে সে ছিলো অতুলনীয়। তার সিদ্ধান্ত নেওয়ার ক্ষমতা, নেতৃত্ব, সামর্থ্য অন্যদের কাছ থেকে সমীহ আদায় করে নিত।'

সেন্টার ব্যাক হিসেবে বাংলাদেশের ফুটবলে দেয়াল হিসেবে পরিচিত ছিলেন পিন্টু।  খেলছেন তখনকার বিখ্যাত ইস্ট এন্ড, ওয়ান্ডারার্স, মোহামেডান স্পোর্টীং ক্লাবে পার করেছেন দুই দশক।

খুব অল্প কয়েকজন ফুটবলারের মধ্যে তিনি একজন ছিলেন তিনি পাকিস্তান ও বাংলাদেশ দুই দলেই খেলেছেন। নেতৃত্বগুণেই ১৯৭১ সালে স্বাধীন বাংলা ফুটবল দলের অধিনায়ক হন তিনি।

তর্ক-সাপেক্ষে বাংলাদেশের সব সময়ের সেরা ফুটবলার কাজী সালাউদ্দিন বিশ্বাস করেন পিন্টু বাংলাদেশের ফুটবলের আসর নায়ক,  'অনেক নায়ক আছেন বাংলাদেশ ফুটবলে, কিন্তু পিন্টু ভাই ছিলেন আসল নায়ক কারণ তিনি স্বাধীন বাংলা ফুটবল দলের অধিনায়ক ছিলেন। তিনি ছিলেন দারুণ ফুটবলার, দারুণ ডিফেন্ডার।'

বেশ জোর দিয়ে, আবেগী হয়ে দ্য ডেইলি স্টারকে পিন্টুকে নিয়ে স্মৃতিচারণ করেন সম্প্রতি বাংলাদেশ ফুটবল ফেডারেশন (বাফুফে)'র সভাপতিত্ব শেষ করা এই তারকা, 'আমি মোহামেডানে তার সঙ্গে খেলেছি, আবাহনীর হয়ে তার বিপক্ষেও খেলেছি। ৯০ মিনিটে মাঠে আমাদের সম্পর্ক ছিলো কড়া, কিন্তু খেলার পর খুবই বন্ধুত্বপূর্ণ।'

শুধু টেকনিক্যাল বা নেতৃত্বের দিক থেকেই নয় জুনিয়র খেলোয়াড়দের সঙ্গে সম্পর্কের কারণেই অনেকের পছন্দের পাত্র ছিলেন পিন্টু।

গোলাম সরওয়ার টিপু কাছে পিন্টু সবার কাছেই অধিনায়ক, 'আমরা সবাই তাকে অধিনায়ক হিসেবে সম্মান করি। অধিনায়ক হিসেবে তার এক রকম ভাবমূর্তি ছিলো এবং তিনি তা ধরেও রেখেছিলেন।'

'যদিও মাঠে তিনি ছিলেন খুবই মজার। খাবারের টেবিলেও অনেক মজা করতেন। তিনি সিনেমা ও বই নিয়ে অনেক কথা বলতেন। ফুটবল নিয়ে বেশি বলতেন না।' 

Comments

The Daily Star  | English

JnU students vow to stay on streets until demands met

Jagannath University (JnU) students tonight declared that they would not leave the streets until their three-point demand is fulfilled

7h ago