শেখ হাসিনাকে হত্যাচেষ্টা: মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত পলাতক আসামি পিন্টু গ্রেপ্তার

জাকারিয়া পিন্টু। ছবি: সংগৃহীত

পাবনার ঈশ্বরদী রেলস্টেশনে ১৯৯৪ সালে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে বহনকারী ট্রেনে হামলা ও গুলিবর্ষণের মাধ্যমে হত্যাচেষ্টা মামলায় মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত এবং অস্ত্র মামলাসহ একাধিক মামলায় সাজাপ্রাপ্ত ও ওয়ারেন্টভুক্ত পলাতক আসামি জাকারিয়া পিন্টুকে গ্রেপ্তার করেছে র‌্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র‌্যাব)।

শনিবার দিবাগত রাতে কক্সবাজারের টেকনাফ এলাকায় অভিযান চালিয়ে তাকে আটক করে র‌্যাব-২ এর একটি দল।

আজ রোববার রাজধানীর কারওয়ান বাজারে র‌্যাবের মিডিয়া সেন্টারে ব্রিফিংয়ে এ তথ্য জানান র‍্যাবের লিগ্যাল অ্যান্ড মিডিয়া উইংয়ের পরিচালক কমান্ডার খন্দকার আল মঈন।

তিনি জানান, ১৯৯৪ সালের ২৩ সেপ্টেম্বর ট্রেনযোগে খুলনা থেকে সৈয়দপুর যাওয়ার পথে ঈশ্বরদী রেলস্টেশনে পৌঁছালে সন্ধ্যা আনুমানিক ৬টা ২০ মিনিটে প্রধানমন্ত্রীকে বহনকারী বগিকে লক্ষ করে গুলিবর্ষণ ও ককটেল বিস্ফোরণ ঘটানো হয়। ওই ঘটনায় ঈশ্বরদী জিআরপি থানায় বিস্ফোরক দ্রব্য আইনে ও বিশেষ ক্ষমতা আইনে একটি মামলা দায়ের হয়। আদালতের নির্দেশে মামলা তদন্তের দায়িত্ব সিআইডিকে প্রদান করা হলে সিআইডির তদন্ত কর্মকর্তা ৩ এপ্রিল ১৯৯৭ সালে সর্বমোট ৫২ জনের বিরুদ্ধে আদালতে চার্জশিট দাখিল করেন। এরমধ্যে ৫ আসামি মৃত্যুবরণ করায় তাদেরকে ওই মামলা থেকে অব্যাহতি প্রদান করে বাকি ৪৭ জনের বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন করা হয়। পরবর্তীতে দীর্ঘ বিচারিক প্রক্রিয়া শেষে ২০১৯ সালের ৩ জুলাই গ্রেপ্তারকৃত জাকারিয়া পিন্টুসহ ৯ জনকে মৃত্যুদণ্ড, ২৫ জনকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড এবং ১৩ জনকে ১০ বছর মেয়াদে কারাদণ্ড প্রদান করা হয়।

র‌্যাব জানায়, জাকারিয়ার নেতৃত্বে ঈশ্বরদীতে আধিপত্য বিস্তার, চাঁদাবাজি, মারামারিসহ বিভিন্ন অরাজকতা চলতো। প্রথমে ১৯৮৮ সালে ও পরবর্তীতে বিভিন্ন অপরাধে সম্পৃক্ততায় তার বিরুদ্ধে একাধিক মামলা দায়ের হয়। সেসব মামলায় গ্রেপ্তার এড়াতে তিনি এলাকা ত্যাগ করে ২০০৪ সাল থেকে ঢাকার মিরপুরে বসবাস শুরু করেন। তার পরিবার ঢাকায় থাকলেও তিনি নিয়মিত ঈশ্বরদীতে যাতায়াত করতেন। তিনি ২০১৫ সালে ঈশ্বরদীতে উপজেলা নির্বাচনে স্বতন্ত্রভাবে অংশগ্রহণ করেন এবং পরাজিত হন।

আটককৃত জানান যে, তিনি ১৯৯৪ সালে ঈশ্বরদীতে চম্পা হত্যা মামলার অভিযুক্ত আসামি এবং ২০০৯ সালে ঈশ্বরদীতে আজম হত্যা মামলায় অভিযুক্ত হয়ে কারাবরণ করেন। পরবর্তীতে ২০১১ সালে অস্ত্রসহ আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর হাতে গ্রেপ্তার হন এবং তার বিরুদ্ধে অস্ত্র আইনে কুষ্টিয়া ভেড়ামারা থানায় একটি মামলা দায়ের হয়। এই মামলায় তিনি ৩ মাস কারাভোগ করলেও পরবর্তীতে জামিনে মুক্তি নিয়ে ফেরারি হন। ওই মামলায় আদালত তাকে ১৭ বছরের সশ্রম কারাদণ্ড প্রদান করেন। এ ছাড়াও, ২০১২, ২০১৪ এবং ২০১৫ সালে আধিপত্য বিস্তার, বিভিন্ন সন্ত্রাসী ও ধ্বংসাত্মক কর্মকাণ্ডের জন্য তার বিরুদ্ধে বিভিন্ন থানায় ১০টি মামলা দায়ের হয়। এ পর্যন্ত তার নামে একটি মৃত্যুদণ্ড ও একটি ১৭ বছরের সশ্রম কারাদণ্ডের সাজা পরওয়ানা ছাড়াও বিভিন্ন অপরাধে ৬টি গ্রেপ্তারি পরোয়ানা রয়েছে। তার বিরুদ্ধে বিভিন্ন থানায় সর্বমোট ১৯টি মামলা রয়েছে।

আটককৃত আরও জানান, ২০১৯ সালে প্রধানমন্ত্রীকে হত্যাচেষ্টা মামলার রায় ঘোষণার পর থেকেই তিনি আত্মগোপনে ছিলেন। রায় ঘোষণার পরের দিনই আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর নজর এড়াতে তিনি দেশত্যাগ করে পার্শ্ববর্তী দেশে আত্মগোপন করেন। সেখানে কিছুদিন অবস্থানের পর পুনরায় দেশে ফিরে আসেন। পরবর্তীতে করোনা সংক্রমণ বৃদ্ধি পাওয়ায় সীমান্ত যোগাযোগ বন্ধ হয়ে যাওয়ায় তিনি দেশের মধ্যে ঢাকা, রাজশাহী ও কক্সবাজারসহ বিভিন্ন জায়গায় আত্মগোপনে থাকেন। সর্বশেষ কক্সবাজারের টেকনাফে তার বন্ধুর বাসায় আত্মগোপনে থাকা অবস্থায় র‌্যাব-২ কর্তৃক গ্রেপ্তার হন। 

জাকারিয়া পিন্টুর বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা প্রক্রিয়াধীন বলেও জানিয়েছে র‌্যাব।

Comments

The Daily Star  | English

Stocks fall on poor performance of large companies

Indexes of the stock market in Bangladesh declined yesterday on rising the day before, largely due to the poor performance of Islami Bank Bangladesh along with the large-cap and blue-chip shares amid sales pressures..Large-cap refers to shares which account for large amounts in market capi

4h ago