ছোটন নয় স্মলি 'ইরিপ্লেসেবল', দাবি সালাউদ্দিনের

ছবি: সংগৃহীত

দেশের নারী ফুটবলে সাফল্য এসেছে মূলত টেকনিক্যাল ডিরেক্টর পল স্মলির প্রচেষ্টার কারণে। এমন দাবি করেছেন বাংলাদেশ ফুটবল ফেডারেশনের (বাফুফে) সভাপতি কাজী সালাউদ্দিন। পাশাপাশি তার মতে, গোলাম রব্বানী ছোটনের আকস্মিকভাবে সরে যাওয়া একটি ধাক্কা হলেও দীর্ঘদিন ধরে দায়িত্ব পালন করা এই প্রধান কোচের শূন্যস্থান অপূরণীয় নয়।

গতকাল রোববার দ্য ডেইলি স্টারে প্রকাশিত 'Wheels finally fall off' (অবশেষে ভাঙন দেখা দিল) শিরোনামে প্রকাশিত একটি প্রতিবেদনের প্রতিক্রিয়ায় বাফুফে সভাপতি উপরের কথাগুলো বলেছেন। পাল্টা জবাবে আরও জানিয়েছেন, আদৌ কোনো ভাঙন দেখা দেয়নি।

ছোটনকে কাঠগড়ায় তুলে দেশের সর্বোচ্চ ফুটবল নিয়ন্ত্রক সংস্থার প্রধান সালাউদ্দিন বলেছেন, 'আমি আজ (রোববার) ছোটনকে ফোন করেছি এবং সে বলেছে যে সে তার সিদ্ধান্ত পুনর্বিবেচনা করবে না। কোনো সমস্যা থাকলে ছোটন আমার সঙ্গে কথা বলতে পারত। আমার মনে হয়, বাফুফে যখন চাপের মধ্যে আছে, (দায়িত্ব ছাড়ার জন্য) সেই সময়টাকে সে বেছে নিয়েছে যাতে আমার ও আমার সংস্থার মানহানি হয়।'

ছোটনের শূন্যস্থান ভবিষ্যতে পূরণ করা গেলেও স্মলির ক্ষেত্রে তা সম্ভব হবে না বলে মন্তব্য করেছেন তিনি, 'ছোটন একজন সৎ ও পরিশ্রমী ব্যক্তি। কিন্তু সে ইরিপ্লেসেবল (অপূরণীয়) নয়। পল স্মলি ইজ ইরিপ্লেসেবল (অপূরণীয়)। স্মলি যদি আজ চলে যায়, মেয়েদের ফুটবল শেষ হয়ে যাবে।'

স্মলির অপরিহার্যতা বোঝাতে গিয়ে ৬৯ বছর বয়সী সাবেক এই ফুটবলার বলেছেন, 'আমি ছোটন ও অন্যদের কৃতিত্ব কেড়ে নিচ্ছি না। তবে নারী ফুটবলে সাফল্যের মূলে রয়েছে স্মলির প্রচেষ্টা। সে-ই নারী ফুটবলারদের সুযোগ-সুবিধা বাড়ানোর জন্য আমাকে চাপ দিয়ে যাচ্ছে। আমি যদি তার জায়গায় একজন স্থানীয় কোচ রাখি বা তাকে তার অবস্থান থেকে সরিয়ে দেই, আমি বাজি ধরে বলতে পারি যে মেয়েরা আগামী এক বছরে ফুটবলে কোনো ট্রফি জিততে পারবে না।'

২০১৬ সালে স্মলি টেকনিক্যাল ডিরেক্টর হিসেবে নিযুক্ত হন। তার সঙ্গে বাফুফের চুক্তি রয়েছে আগামী ২০২৪ সালের অগাস্ট পর্যন্ত। মাঝে ব্রুনাই ফুটবল দলের ম্যানেজার হিসেবে এক বছর দায়িত্ব পালন বাদ দিয়ে তখন থেকেই বাংলাদেশ ফুটবলের বিভিন্ন ক্ষেত্রে তিনি কাজ করে চলেছেন। বিশেষ করে, বয়সভিত্তিক ও সিনিয়র নারী ফুটবল দলগুলোতে রয়েছে তার ভূমিকা।

বাফুফের একজন মুখপাত্র জানিয়েছেন, স্মলি ট্যাক্স কাটার পর মাসিক বেতন হিসেবে ১৬ হাজার ডলার পান। সম্প্রতি পারিশ্রমিক আরও বড় আকারে বাড়ানোর বিষয়ে তিনি বাফুফের সঙ্গে সমঝোতায় পৌঁছেছেন। বাফুফের অন্যান্য কোচদের তুলনায় স্মলি আনুপাতিকভাবে বেশি বেতন পান কিনা জানতে চাইলে সালাউদ্দিন জবাব দিয়েছেন, 'স্মলি যা পায়, নিঃসন্দেহে যোগ্য হিসেবেই পায়।'

এমন এক সময়ে স্মলির বেতন বৃদ্ধির খবর জানা গেছে যা মোটেও আদর্শ নয়। নারী দলের সদস্যরা তাদের বেতন-ভাতা বৃদ্ধি ও সামগ্রিক সুযোগ-সুবিধার উন্নতির দাবিতে গত কয়েক মাসে দুবার ক্যাম্প বর্জন করেছে। কারণ, কেবল আশ্বাস ছাড়া সুনির্দিষ্ট কোনো বার্তা তারা পায়নি বাফুফের কাছ থেকে।

নারী জাতীয় দল গত বছরের সেপ্টেম্বরে সাফ চ্যাম্পিয়নশিপের শিরোপা জেতার পর আর কোনো প্রতিযোগিতামূলক ম্যাচ খেলেনি। অথচ কেটে গেছে আট মাসের বেশি সময়। অন্যদিকে, ভারত জাতীয় দল এই সময়ের মধ্যে পাঁচটি আন্তর্জাতিক প্রীতি ম্যাচ খেলেছে। তারা ২০২৪ প্যারিস অলিম্পিকের বাছাইপর্বেও অংশ নিয়েছে। কিন্তু আর্থিক দুরবস্থাকে কারণ হিসেবে দেখিয়ে সেই বাছাইয়ে নারী দলকে পাঠায়নি বাফুফে।

এছাড়া, প্রস্তাবিত নারী সুপার লিগের কারণে অধিনায়ক সাবিনা খাতুনসহ আরও কয়েকজন ফুটবলারকে ভারতীয় লিগে খেলার প্রস্তাব ফিরিয়ে দিতে হয়েছে। বাফুফে জানিয়েছিল, ১৫ মে থেকে শুরু হবে দেশের ফুটবলের প্রথম ফ্র্যাঞ্চাইজিভিত্তিক নারী লিগ। তবে সেটা আলোর মুখ দেখা থেকে এখনও অনেক দূরে অবস্থান করছে।

যদিও স্মলির বেতন বাড়ানোর বিষয়ে কোনো দ্বিধা নেই সালাউদ্দিনের, তবে নারী ফুটবলারদের বেতন বাড়ানোর ক্ষেত্রে অসহায়ত্ব প্রকাশ করেছেন তিনি। বাফুফে সভাপতি কারণ হিসেবে দেখিয়েছেন তহবিলের অভাব ও স্পনসরদের আগ্রহের অভাবকে।

গত কয়েকদিনে অবসরের ঘোষণা দিয়েছেন সিরাত জাহান স্বপ্না এবং চীনে পাড়ি জমানোর জন্য ক্যাম্প ছেড়ে গেছেন আঁখি খাতুন। সালাউদ্দিন আরও অনেক খেলোয়াড়ের বিদায় নেওয়ার সম্ভাবনা দেখছেন। তবে এর পেছনে আর্থিক কারণ নয়, ব্যক্তিগত ও সামাজিক কারণ দেখছেন তিনি।

টানা চতুর্থ মেয়াদে বাফুফে সভাপতির দায়িত্ব পালন করতে থাকা সালাউদ্দিন বলেছেন, 'আঁখি ব্যক্তিগত কারণে চীনে যাচ্ছে। আমি নিশ্চিত, স্বপ্নার চলে যাওয়ার পেছনেও একটি ব্যক্তিগত কারণ আছে। আমাদের মেয়েদের বয়স ২২-২৩ বছর। এই বয়সে বিয়ের চাপের কারণে তারা চলে যেতে পারে। অন্যরা দলে এসে তাদের শূন্যস্থান পূরণ করবে।'

Comments

The Daily Star  | English

What if the US election ends in a Trump-Harris tie?

While not highly likely, such an outcome remains possible, tormenting Americans already perched painfully on the edge of their seats ahead of the November 5 election

3h ago