'আমার মনে হয়, বাফুফে ইচ্ছাকৃতভাবে মেয়েদের দলটি পাঠায়নি'
অলিম্পিক বাছাইপর্বে অংশ নেওয়ার জন্য বাংলাদেশ নারী ফুটবল দলকে মায়ানমারে না পাঠানোয় তীব্র অসন্তোষ প্রকাশ করেছেন যুব ও ক্রীড়া প্রতিমন্ত্রী জাহিদ আহসান রাসেল। তার মতে, বাংলাদেশ ফুটবল ফেডারেশন (বাফুফে) ইচ্ছাকৃতভাবে এই ধরনের কাজ করে সরকারকে ভাবমূর্তি সংকটে ফেলেছে।
রোববার বিকালে পুরানা পল্টনে অবস্থিত জাতীয় ক্রীড়া পরিষদে নিজ কার্যালয়ে গণমাধ্যমের মুখোমুখি হন জাহিদ। ক্ষোভ প্রকাশ করে তিনি বলেন, 'আমার কাছে মনে হয়, তারা (বাফুফে) ইচ্ছাকৃতভাবে (মেয়েদের) এই দলটি পাঠায়নি। ইচ্ছাকৃতভাবে কেন পাঠায়নি, এটি আসলে খতিয়ে দেখা দরকার। আমরাও বিষয়টি দেখছি কেন তারা এটি করলেন। কেন ইচ্ছাকৃতভাবে এই ধরনের কাজ করে আমাদেরকে ভাবমূর্তি সংকটে ফেললেন, আমরা এই বিষয়টি অবশ্যই খতিয়ে দেখব।'
গত ৫ এপ্রিল মায়ানমারে গড়ায় আগামী ২০২৪ প্যারিস অলিম্পিকের এশিয়ান অঞ্চলের নারী ফুটবলের বাছাইপর্বের 'বি' গ্রুপের খেলা। সেখানে সাফ চ্যাম্পিয়নশিপের শিরোপাধারী বাংলাদেশের মেয়েদের অংশ নেওয়ার কথা ছিল। কিন্তু গত ২৯ মার্চ বাফুফে জানায়, টাকার অভাবে তাদের পক্ষে দল পাঠানো সম্ভব হচ্ছে না। এরপর গত ৩ এপ্রিল সংবাদ সম্মেলন করে নিজেদের অবস্থান ব্যাখ্যা করেন দেশের সর্বোচ্চ ফুটবল নিয়ন্ত্রক সংস্থার সভাপতি কাজী সালাউদ্দিন।
সাবিনা খাতুন-রুপনা চাকমাদের বাছাইয়ে খেলতে যেতে না পারার বিষয়টি জাহিদের জন্য কষ্টদায়ক অভিজ্ঞতা, 'কারো দোষ বা ভুল অন্য কারো কাঁধে চাপিয়ে দেয়ার ইচ্ছে থাকলে, অনেকভাবেই দেওয়া যায়। সেটা কিন্তু নারী ফুটবল দলের ক্ষেত্রে আমরা দেখতে পেলাম। যারা এত বড় সাফল্য এনে দিয়ে সারা দেশকে সম্মানিত করেছেন, তারা অলিম্পিক কোয়ালিফাইং প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণ করতে পারবে না— এর চেয়ে বড় কষ্টের আর কিছু হতে পারে না।'
মায়ানমারে যাওয়ার জন্য শেষ মুহূর্তে যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয়ে টাকা চেয়ে আবেদন করেছিল বাফুফে। কিন্তু অর্থ বরাদ্দ দিতে মন্ত্রণালয়ের যে সময় লাগত, তাতে বাছাইয়ে অংশ নেওয়া নারী ফুটবল দলের পক্ষে সম্ভব হতো না। এই প্রসঙ্গে যুব ও ক্রীড়া প্রতিমন্ত্রী বলেন, 'একটা বিষয়... সরকারের কিছু নিয়ম মেনে চলতে হয়। টাকা চাইলে সরকারকে কিছু সময় দিতে হয়। আমাদের কাছে কোনো ফেডারেশন টাকা চাইলে সেটা অর্থ মন্ত্রণালয়ের কাছে পাঠাতে হয়। আমাদের যে টাকা আছে, সেটা দিতে হলেও অর্থ মন্ত্রণালয়ের অনুমতি নিতে হয়। এক্ষেত্রে আমাদের সময়ই দেওয়া হয়নি। (গত মার্চের) ২৭ তারিখ আমরা চিঠি পেলাম। ২৯ তারিখ উনারা বললেন, যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয় থেকে টাকা পাওয়ার মতো অবস্থা দেখছেন না। চিঠি দেওয়ার দুদিন পরে কীভাবে উনারা এরকম বক্তব্য দেন?'
'যদিও তাদের সভাপতি, সহ-সভাপতি বা নির্বাচিত কেউ কোনো কথা বলেননি প্রথম দিন। তাদের হয়ে একজন বেতনভুক্ত কর্মী, যিনি সাধারণ সম্পাদক (আবু নাঈম সোহাগ), (তিনি) সরকারকে দোষারোপ করে বক্তব্য দিয়েছেন— সরকার এই অর্থ না দেওয়ায় তারা দল পাঠাতে পারেনি।'
সরকারকে দোষারোপ করাকে ধৃষ্টতাপূর্ণ আচরণ মনে করেন তিনি, 'আমরা ২৭ তারিখ চিঠি পেয়েই তাৎক্ষনিকভাবে অর্থ মন্ত্রণালয়ে চিঠি লিখেছি যে তাদেরকে আর্থিক বরাদ্দ দেওয়ার জন্য। এই কাজে আমোদের কিছু করার সুযোগই দেওয়া হলো না। যারা এত বড় অর্জন এনে দিয়েছেন, সেই মেয়েদের অলিম্পিক বাছাইপর্বে খেলতে পাঠানোর জন্য, তাদের পাশে দাঁড়ানোর সুযোগই দেওয়া হলো না। তারপরও তারা সরকারকে দোষারোপ করলেন। এটা ধৃষ্টতাপূর্ণ বিষয়। একটি ফেডারেশনের একজন কর্মকর্তার এ ধরণের ধৃষ্টতাপূর্ণ কথা বলা কোনোভাবে বরদাশত করা যায় না।'
বাফুফের কাছে দল না পাঠানোর সিদ্ধান্তের কারণ জানতে চাইবেন জাহিদ, 'আমি চিকিৎসার জন্য কিছুদিন দেশের বাইরে ছিলাম। তাই এটা নিয়ে কথা বলতে পারিনি। আমি অবশ্যই তাদের (বাফুফে) কাছে জানতে চাইব কেন তারা এরকম কথা বললেন। দেশবাসী সবারই একটাই প্রশ্ন, অল্প কিছু টাকার জন্য কেন মেয়েরা দেশের বাইরে খেলতে যেতে পারবে না। আমরা সরকারের পক্ষ থেকে অবশ্যই তাদের পাশে থাকতাম, অনেক স্পন্সর প্রতিষ্ঠানও সহায়তা দেওয়ার জন্য প্রস্তুত ছিল। অথচ কারও সঙ্গে কথা না বলে, কাউকে কিছু না জানিয়ে তারা এই সিদ্ধান্ত নিয়েছে। কেন তারা এই কাজটি করলেন, সেটা আমার বোধগম্য নয়। আমি সংবাদমাধ্যমকে অনুরোধ করব বিষয়টি খতিয়ে দেখার (জন্য)... কেন (তারা) এরকম অন্যায় একটা সিদ্ধান্ত নিয়ে মেয়েদের এত বড় একটা সুযোগ হাতছাড়া হতে দিলেন। এটা করে মেয়েদের তারা বঞ্চিত করলেন।'
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে বিষয়টি অবহিত করবেন যুব ও ক্রীড়া প্রতিমন্ত্রী, 'আজকে ভারত কিন্তু কোয়ালিফাই (বাছাইয়ের দ্বিতীয় পর্বে) করেছে। আমরা তো ভারতের চেয়ে ভালো দল ছিলাম। আমাদেরও একটা সম্ভাবনা ছিল।... মাননীয় প্রধানমন্ত্রী নারীদের খেলায় অনেক পৃষ্ঠপোষকতা করেন, সেটা ফুটবল হোক কিংবা ক্রিকেট। সেই নারীরা যখন অল্প কিছু টাকার জন্য খেলতে যেতে পারেনি, এটার পেছনে নিশ্চয় অন্য কিছু আছে। আমি অবশ্যই বিষয়টা মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর কাছে অবহিত করব।'
Comments