টাকার জন্য অলিম্পিকের বাছাইপর্বে নারী ফুটবল দলকে বাফুফের না পাঠানো

এর চেয়ে লজ্জার বিষয় আর হয় না: পাপন

নাজমুল হাসান পাপন
বিসিবি সভাপতি নাজমুল হাসান পাপন। ফাইল ছবি: ফিরোজ আহমেদ

মায়ানমারে ২০২৪ প্যারিস অলিম্পিকের এশিয়ান অঞ্চলের বাছাইপর্বে অংশ নিতে পারেনি সাফ চ্যাম্পিয়নশিপজয়ী বাংলাদেশ নারী ফুটবল দল। আর্থিক সংকটের কারণ দেখিয়ে সেখানে দল পাঠায়নি বাংলাদেশ ফুটবল ফেডারেশন (বাফুফে)। এতে প্রবল সমালোচনার মুখে পড়ে কয়েক দিন আগে নিজেদের অবস্থান ব্যাখ্যা করতে সংবাদ সম্মেলন আয়োজন করেছিল তারা। সেখানে এক প্রশ্নের জবাবে বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডের (বিসিবি) সভাপতি নাজমুল হোসেন পাপনকে খোঁচা দিয়েছিলেন বাফুফে সভাপতি কাজী সালাউদ্দিন।

এবার অন্য এক সংবাদ সম্মেলনে বিসিবি প্রধান পাপনের কাছে জানতে চাওয়া হলো সালাউদ্দিনের মন্তব্য নিয়ে প্রতিক্রিয়া। তিনি বাফুফে কর্মকর্তাদের সমালোচনায় মুখর হলেন। পাশাপাশি দুঃখ করে জানালেন, টাকার জন্য নারী ফুটবল দলের অলিম্পিক বাছাইপর্বে খেলতে যেতে না পারা বাংলাদেশের জন্য লজ্জার বিষয়।

শুক্রবার মিরপুর শের বাংলা স্টেডিয়ামে সংবাদ সম্মেলনে পাপন বলেন, 'দেখুন, (এটা) সাধারণ জিনিস। প্রথম কথা হচ্ছে, মাননীয় প্রধানমন্ত্রী (শেখ হাসিনা) ফোন করলে আমি যেখানেই থাকি, যে অবস্থায় থাকি, ফোন ধরবই। আমি জানি না এটা নিয়ে কেন বলেছেন। এ নিয়ে আমি মন্তব্য করতে চাচ্ছি না।'

প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে ফোনে কথা বলার এই প্রসঙ্গ বুঝতে একটু পেছনে ফেরা যাক। বাফুফের ওই সংবাদ সম্মেলনে সালাউদ্দিনের কাছে একজন গণমাধ্যমকর্মীর প্রশ্ন ছিল এমন, বিসিবি সভাপতি ম্যাচ চলাকালে মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে ফোনে নিয়মিত যোগাযোগ করেন, সেখানে বাফুফে সভাপতি প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে যোগাযোগ করেননি শুনতে হয়, এই দূরত্ব কেন?

উত্তর এসেছিল, 'সবার ব্যক্তিত্ব তো এক না। আমি তো লোক দেখিয়ে বলব না, "এই প্রধানমন্ত্রী ফোন দিয়েছে।" আমি ওই রকম না। আপনাদের বুঝতে হবে। আমি ফুটবল ব্যাকগ্রাউন্ড (দেশের বিখ্যাত ফুটবলার ছিলেন) থেকে এসেছি, স্বাধীনতা থেকে আজ পর্যন্ত আছি। আমি ওই নাটক করতে পারব না। আমি প্রধানমন্ত্রীকে শ্রদ্ধা করি। আমি লোক দেখাতে পারব না। দুঃখিত, এটাই আমার চরিত্র।'

এদিন পাল্টা জবাবে বিসিবি প্রধান বলে চলেন, 'আমি এ কারণে বলছি যে মন্তব্য করতে চাচ্ছি না, (যেহেতু) এটার (দল না পাঠানো) সঙ্গে এটার (প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে ফোনে কথা) কী সম্পর্ক আমি জানি না। আমার মনে হয়, সমস্যাটা আপনাদের (গণমাধ্যমের), আপনারা এত বাজে প্রশ্ন করলেন কেন। আপনারা (সালাউদ্দিনের কাছে) হিসাব চাচ্ছেন, টাকা কী করছেন। এমন প্রশ্ন জিজ্ঞেস করতে যান কেন! এটা করলে তো উনার মাথা খারাপ হবে, এটা সবাই জানেন। এমন প্রশ্ন করেন কেন। করলে মাথা ঠিক থাকবে?'

'সব জায়গাতেই সব রকমের জিনিস আছে। যেমন ধরেন ব্যাকগ্রাউন্ড। এখন সব ফুটবলার... ফুটবল ব্যাকগ্রাউন্ড মানেই কি নির্লজ্জ, বেহায়া ও অহংকারী? এটা বলা যাবে? তো? ব্যাকগ্রাউন্ডের সঙ্গে সম্পর্ক কী আমি জানি না। এটা ব্যক্তির ব্যাপার। তবে আপনাদের এসব প্রশ্ন না করাই ভালো।'

মায়ানমারে যাওয়ার জন্য শেষ মুহূর্তে যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয়ে টাকা চেয়ে আবেদন করেছিল বাফুফে। কিন্তু অর্থ বরাদ্দ দিতে মন্ত্রণালয়ের যে সময় লাগত, তাতে বাছাইয়ে অংশ নেওয়া নারী ফুটবল দলের পক্ষে সম্ভব হতো না। বাফুফে মন্ত্রণালয়ের কাছে চেয়েছিল ৯০ লাখ টাকার বেশি। পরবর্তীতে দেশের সর্বোচ্চ ফুটবল নিয়ন্ত্রক সংস্থা বলেছিল যে ৬০ বা ৭০ লাখ টাকা হলেও দল পাঠানো যেত।

বিসিবি প্রধান পাপন অবশ্য দাবি করেন, মাত্র ২০ লাখ টাকার জন্য সাবিনা খাতুন-রুপনা চাকমারা বাছাইয়ে যেতে পারেননি, 'যেটা গুরুত্বপূর্ণ, মেয়েরা যেতে পারল না। মাত্র ২০ লাখ টাকার জন্য। এর চেয়ে দুঃখ-কষ্ট (হতে পারে না)। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী কী কষ্টটাই না পেয়েছেন। আপনারা (গণমাধ্যমের উদ্দেশ্যে) চ্যানেলগুলো আছেন না, যেকোনো চ্যানেলের মালিকের কাছে গিয়ে বললেই দিয়ে দিত (টাকা)। একজনের কাছে বলতে তো হবে।'

'বিশ্বাস করুন, আমি কারো সঙ্গে কথা বলিনি, আমাদের খেলোয়াড়রা দিয়ে দিত। কেবল বলতো একবার। এ কী! এত গোপনে জিনিসটা রেখে যে প্রক্রিয়ায় করেছে, এটা খুব দুঃখজনক। আমাদের ক্রিকেট বোর্ডের চেয়ে ফুটবল বোর্ডে যে পরিচালকরা আছেন... অবিশ্বাস্য, ২০ লাখ টাকা দিতে পারেন না। প্রতিদিন এদের খরচই তো ২০ লাখ টাকা। আমার কাছে এটা খুব আশ্চর্য লাগে।'

বাফুফের দল না পাঠানোর পেছনে আর্থিক সংকটের বাইরে অন্য কোনো কারণ রয়েছে বলে তার ধারণা, 'আমার মনে হয়, অন্য কিছু আছে। আমি জানি না। এটা দুঃখজনক। দেশের জন্য এর চেয়ে বড় বদনাম হতে পারে না। আমরা বলছি যে দেশ এগিয়ে যাচ্ছে, অর্থনৈতিকভাবে এগিয়ে যাচ্ছে, সারা পৃথিবী মেনে নিচ্ছে। সেই জায়গায় আমরা বলছি, ২০ লাখ টাকার জন্য আমাদের দেশের মেয়েরা অলিম্পিকে (বাছাইপর্ব) খেলতে যেতে পারে না। এর চেয়ে লজ্জার বিষয় আর হয় না।'

Comments

The Daily Star  | English
explanations sought from banks for unusual USD rates

Explanations sought from 13 banks for higher dollar rate

BB issued letters on Dec 19 and the deadline for explanation ends today

2h ago