বঙ্গবাজার

ছাই সরিয়ে ফুটপাতে বিক্রি শুরু, ক্রেতাদের ভিড়

বঙ্গবাজারে অগ্নিকাণ্ডের পর রাস্তায় অস্থায়ী দোকান বসিয়ে কাপড় বিক্রি শুরু করেছেন ক্ষতিগ্রস্ত দোকান মালিকরা। ছবি: শাহীন মোল্লা/স্টার

বঙ্গবাজারে অগ্নিকাণ্ডের পর রাস্তায় অস্থায়ী দোকান বসিয়ে কাপড় বিক্রি শুরু করেছেন ক্ষতিগ্রস্ত দোকান মালিকরা। ফুটপাতের এই অস্থায়ী দোকানগুলোতে প্রথম দিনেই প্রচণ্ড ভিড় দেখা গেছে।

আজ শনিবার বিকেল ৪টায় সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, হানিফ ফ্লাইওভারের নিচে ও বঙ্গবাজারের সামনের রাস্তায় ফুটপাতে টুল পেতে কাপড় সাজিয়ে বসেছেন ব্যবসায়ীরা। রাস্তা সরু হয়ে যাওয়ার কারণে সেখানে প্রচণ্ড যানজট তৈরি হয়েছে।

প্রথম দিনে বেচাকেনা সন্তোষজনক বলে জানিয়েছেন ব্যবসায়ীরা।

ঈদের আগে দোকানে নতুন কাপড় তোলার উদ্দেশ্যে বঙ্গবাজারে এসেছেন ময়মনসিংহ গৌরিপুরের ব্যবসায়ী কুজন সরকার। চার-পাঁচটি দোকান ঘুরে এক লাখ টাকার গেঞ্জি কিনেছেন তিনি।

ফুটপাতের এই অস্থায়ী দোকানগুলোতে প্রথম দিনেই প্রচণ্ড ভিড় দেখা গেছে। ছবি: শাহীন মোল্লা/স্টার

জানতে চাইলে তিনি দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, 'আমি সাধারণত কেরাণীগঞ্জের জিঞ্জিরা থেকে মালপত্র কিনি। মাঝে মাঝে বঙ্গবাজার থেকে কিনতাম। মানবিক কারণেই আজকে এখানে আসলাম। ভেবেছিলাম, একই দামে যদি এখান থেকেই মালপত্র পাওয়া যায় তাহলে ক্ষতিগ্রস্ত ব্যবসায়ীদের কাছ থেকেই কিনব। আমি মোট ১ লাখ টাকার গেঞ্জি কিনেছি।'

জানতে চাইলে ব্যবসায়ী মো. সোহেল দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, 'আমি খুবই সীমিত দামে বিক্রি করলাম। এ সপ্তাহে দাম বাড়লেও পুরান দামেই বিক্রি করতে হলো।'

বঙ্গ ইসলামিয়া কমপ্লেক্সে নাহার গার্মেন্টস নামে একটি দোকানের মালিক মো. সোহেল। তিনি জানান, তার ৩টি গোডাউন ছিল। একটি বঙ্গবাজারের তৃতীয় তলায়, একটি সিদ্দিকবাজারে, আরেকটি বঙ্গ ইসলামিয়া কমপ্লেক্সে।

'আমার গোডাউনগুলোতে প্রায় ৫০ লাখ টাকার মালামাল ছিল। শুধু সিদ্দিকবাজারের গোডাউন বেঁচে গেছে, বাকি দুটো পুড়ে ছাই। সিদ্দিকবাজারের গোডাউনে বেঁচে যাওয়া মালামাল এনেই বিক্রি করছি।'

ফুটপাতে বাচ্চাদের শার্ট দেখছিলেন লালবাগ থেকে আসা দুই নারী। জানতে চাইলে তারা বলেন, 'আমরা শুনেছি পুড়ে যাওয়ার পর এখানে ফুটপাতে দোকান বসেছে। তাই ব্যবসায়ীদের পাশে দাঁড়াতে এখান থেকেই কিনতে এসেছি।'

একই কথা জানান ব্যাংক কর্মচারী রেজাউল কাজী। রামপুরায় একটি ভাড়াবাসায় থাকেন তিনি।

জানতে চাইলে বলেন, 'আমি সাধারণত ঈদে কেনাকাটা করি আমার বাসার কাছে খিলগাঁও, মৌচাক থেকে। আজ বঙ্গবাজারে এলাম। শার্ট, প্যান্ট, জুতা কিনব। ব্যবসায়ীদের পাশে দাঁড়ানো উচিত এ কারণেই এখানে এসেছি।'

দামের বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, 'দামের বিষয়ে তো তেমন জানিনা। আমার কাছে বেশি মনে হচ্ছে না।'

বঙ্গবাজারের ব্যবসায়ী নূর আলম দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, 'আত্মীয় স্বজনের হাতেপায়ে ধরে ২৫ হাজার টাকা নিলাম। জিঞ্জিরা থেকে ৫৫ হাজার টাকার ফতুয়া নিয়ে আসলাম। ৩০ হাজার টাকা বাকি রেখেই আসতে হলো।'

ফুটপাতে বেচাকেনা সম্পর্কে তিনি বলেন, 'এখানে দুই শ্রেণির ক্রেতা এসেছেন। অনেকেই এসেছেন মানবিক কারণে, অনেকেই এসেছেন সস্তায় জিনিস পাওয়ার আশায়। ফুটপাতে ক্রেতারা অনেক বেশি দামাদামি করছেন। বেশিরভাগ ক্রেতার ধারণা, পোড়া গোডাউন থেকে কাপড়গুলো টেনে নিয়ে আসছি। হয়তো কাপড়ের ইস্ত্রি নষ্ট হয়ে গেছে, ভাঁজ নষ্ট হয়ে গেছে তাই দাম কম দামে পাওয়া যাবে।'

উল্লেখ্য, গত মঙ্গলবার ভোরে বঙ্গবাজার মার্কেটে ভয়াবহ আগুন লাগে। যা পরে ছড়িয়ে পড়ে বঙ্গমার্কেটের সঙ্গে লাগোয়া মহানগর শপিং মার্কেট, আদর্শ মার্কেট, ইসলামিয়া ও এনেক্সকো টাওয়ারে। কাঠ-টিন-লোহার এই মার্কেটের ধ্বংসাবশেষ অপসারণে কাজ করেছে সিটি করপোরেশন। তবে এখনো জায়গাটি পুরোপুরি পরিষ্কার করা যায়নি।

ধুলাবালি, ধোঁয়ার কারণে অনেকে ক্রেতাই এখনো আসতে পারছেন না বলে জানিয়েছেন ব্যবসায়ীরা। আগামী ২-৩ দিনের মধ্যে এলাকাটি পরিষ্কার হয়ে গেলে বেচাকেনাও বাড়বে বলে আশা জানান তারা।

Comments

The Daily Star  | English

Eid meat: A day of sharing for some, a day of struggle for others

While the well-off fulfilled their religious duty by sacrificing cows and goats, crowds of people -- less fortunate and often overlooked -- stood patiently outside gates, waiting for a small share of meat they could take home to their families

1h ago