বঙ্গবাজারে আগুন

‘কারখানা মালিকদের ব্যাপারে সিদ্ধান্ত হয়নি এখনো’

বঙ্গবাজারের ক্ষতিগ্রস্ত ব্যবসায়ীরা খোলা আকাশের নিচে চৌকি পেতে পণ্য নিয়ে বসেছেন। ছবি: এমরান হোসেন

অগ্নিকাণ্ডের ৯ দিন পর রাজধানীর বঙ্গবাজার শপিং কমপ্লেক্সে চৌকি পেতে বেচাকেনা শুরু করেছেন ক্ষতিগ্রস্ত ব্যবসায়ীরা।

তবে বঙ্গ কমপ্লেক্সের তৃতীয় তলায় কাপড় সেলাইয়ের যেসব কারখানা ছিল সেখানকার মালিক-কর্মচারীদের বিষয়ে এখনো কোনো সিদ্ধান্ত হয়নি বলে জানিয়েছেন তারা।

আজ বুধবার সকাল ১০টায় বঙ্গবাজারে চৌকি পেতে বেচাকেনা শুরুর আগে মানববন্ধন করেন সেলাই কারখানার মালিক ও কর্মচারীরা।

জানা গেছে, পুড়ে যাওয়া বঙ্গ কমপ্লেক্সে (আদর্শ, মহানগর, গুলিস্তান ও বঙ্গ) প্রায় তিনশ কারখানা ছিল। এসব কারখানায় কাজ করতেন প্রায় ১২০০ থেকে ১৫০০ কর্মচারী। তারা মূলত বিভিন্ন গার্মেন্টস থেকে কাপড় এনে এগুলো কেটে মাপমতো সেলাই করে বিভিন্ন দোকানে সরবরাহ করতেন।

মহানগর মার্কেটে ২৫ বছর ধরে কারখানা চালিয়েছেন সুরুজ মিয়া। তার কারখানায় ৫ জন কর্মচারী কাজ করতেন।

তিনি দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, 'রোজার মাসে একেকজন কর্মচারী ২৫ থেকে ৩০ হাজার টাকা বেতন পান। বিভিন্ন দোকানে প্রায় ৫ লাখ টাকার কাপড় বাকিতে দিয়েছি। কারখানায় প্রায় ৪ লাখ টাকার মাল ছিল। সব পুড়ে ছাই হয়ে গেছে। কর্মচারীদের নিয়ে এখন পথে বসার অবস্থা!'

'দোকানদারদের জন্য আর্থিক সহায়তাসহ বিভিন্ন উদ্যোগের কথা শোনা গেলেও কারখানার ব্যাপারে এখনো কোনো সিদ্ধান্ত হয়নি। আমরা সহায়তা চেয়ে বিভিন্ন সমিতি, নেতার কাছে যাচ্ছি। কিন্তু কোনো আশ্বাস পাচ্ছি না,' বলেন তিনি।

একই কথা জানান কারখানা মালিক ইকবাল হোসেন। মহানগর মার্কেটের তৃতীয় তলায় কারখানা ছিল তার। সেখানে ৪ জন কর্মচারী কাজ করতেন। মূলত বিভিন্ন গার্মেন্টস থেকে জিন্স এনে সেগুলো বিভিন্ন মাপে কেটে দোকানে সরবরাহ করতেন তারা।

তিনি ডেইলি স্টারকে বলেন, 'সংসার, ছেলেমেয়ের পড়াশোনা, বাসাভাড়া সবমিলিয়ে মাসে প্রায় ৫০ হাজার টাকা খরচ। আগুনে সব শেষ হয়ে গেছে। ঈদের আগে বিভিন্ন দোকানে বাকিতে ২ লাখ টাকার কাপড় দিয়েছি। সেই টাকা ফেরত পাব কি না জানি না।'

'বাচ্চাদের ভবিষ্যত নষ্ট হয়ে গেছে। আগুনে ক্ষতিগ্রস্ত ব্যবসায়ীদের জন্য সবকিছু করা হচ্ছে। আমাদের জন্য কিছু করা হচ্ছে না,' অভিযোগ করে বলেন তিনি।

আরেক ব্যবসায়ী আল দ্বীন বলেন, '১৯৯৫ সাল থেকে এখানে আমার কারখানা রয়েছে। কারখানায় ৫ জন কর্মচারী কাজ করত। যেদিন আগুন লাগে সেদিন কারখানায় নগদ ৮০ হাজার টাকা ছিল। সব পুড়ে গেছে।'

এ বিষয়ে জানতে চাইলে দোকান মালিক সমিতির সভাপতি হেলাল উদ্দিন বলেন, 'আমি ক্ষতিগ্রস্ত ব্যবসায়ীদের জন্য সমন্বয়কের ভূমিকায় কাজ করছি। এখন পর্যন্ত ২৯৬১ জনের একটি তালিকা করা হয়েছে। চৌকি বসিয়ে আজ থেকে ব্যবসা শুরু করেছেন নিচ তলার ব্যবসায়ীরা। জায়গা সীমিত হওয়ায় সবাই সুযোগ পাচ্ছেন না। আমরা আপাতত এটা শুরু করেছি। যারা বাদ পড়েছেন তাদের জন্য কী করা যায় সেটা আলোচনা করে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।'

গত ৪ এপ্রিল ভোরে বঙ্গবাজারে আগুন লাগে। এতে বঙ্গবাজার কমপ্লেক্স, গুলিস্তান ইউনিট, মহানগর ইউনিট ও আদর্শ ইউনিট পুরোপুরি পুড়ে যায়।

বঙ্গবাজারের উত্তর-পশ্চিম কোণে ৭ তলা এনেক্সকো টাওয়ার, তার পূর্ব পাশে মহানগর কমপ্লেক্স মার্কেটও পুড়ে যায়। ক্ষতিগ্রস্ত হয় বঙ্গবাজারের পশ্চিম পাশের সড়কের অপর প্রান্তের ২টি মার্কেটও।

সব মিলিয়ে ৩ হাজার ৮৪৫ দোকান পুড়ে ৩০৩ কোটি টাকার ক্ষতি হয়েছে বলে জানিয়েছে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের তদন্ত কমিটি।

Comments

The Daily Star  | English

Pakistan minister denies nuclear body meeting after offensive launched on India

Pakistan's military said earlier that the prime minister had called on the authority to meet. The information minister did not respond immediately to a request for comment.

1h ago