নিয়ন্ত্রণের বাইরে ছাত্রলীগ, ক্ষতিগ্রস্ত পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়

চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের দুই গ্রুপের সংঘর্ষ শুরু হলে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টরিয়াল বডি পুলিশ এনে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে। ছবি: সংগৃহীত

গত ১৪ বছর বা তারও বেশি সময় ধরে পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে বাংলাদেশ ছাত্রলীগের আপত্তিকর আচরণ নিয়মিত খবরে পরিণত হয়েছে। সাধারণ শিক্ষার্থী ও রাজনৈতিক প্রতিদ্বন্দ্বীদের হয়রানি ও নির্যাতন করা থেকে শুরু করে চাঁদাবাজি ও ছিনতাইয়ের মতো অপরাধমূলক কর্মকাণ্ডে লিপ্ত হওয়া, কিংবা শিক্ষক ও সাংবাদিকদের ভয় দেখানো—তাদের অপরাধের যেন শেষ নেই।

সময় যত যাচ্ছে তারা যেন আরও দুঃসাহসী হয়ে উঠেছে। কারণ, বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন থেকে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার নজির খুবই কম। আর শাসক দলও এ নিয়ে মাথা ঘামায় না, কেননা ছাত্রলীগ তাদের হয়ে ক্যাম্পাসের ওপর নিয়ন্ত্রণ রাখছে।

পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা কীভাবে লাগামহীন স্বাধীনতা উপভোগ করছেন, তার বিবরণ তুলে ধরে দৈনিক প্রথম আলো গতকাল কয়েকটি প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে। উদাহরণস্বরূপ, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে (চবি) ছাত্রলীগের একাধিক গ্রুপের নেতাকর্মীরা প্রায়শই ধারালো অস্ত্র নিয়ে সংঘর্ষে লিপ্ত হয়। তারা প্রকাশ্যে বিশ্ববিদ্যালয়ের উন্নয়ন প্রকল্প বাস্তবায়নকারী ঠিকাদারদের কাছ থেকে চাঁদা আদায় করে, অবৈধভাবে হলের রুম দখল করে, প্রশাসনিক কর্মকর্তাদের মারধর করে, ছাত্রীদের যৌন হয়রানি করে, বিশ্ববিদ্যালয়ের সম্পত্তি ভাঙচুর করে, এমনকি শিক্ষকদের হুমকি দেয়।

এমনকি সাংবাদিকরাও রেহাই পাচ্ছেন না। খবরে বলা হয়, আওয়ামী লীগপন্থী এই ছাত্র সংগঠনের দুটি গ্রুপের মধ্যে সংঘর্ষের খবর প্রকাশ করায় গত রোববার ছাত্রলীগের কয়েকজন কর্মী প্রথম আলোর চবি প্রতিনিধি মোশাররফ শাহকে বেধড়ক মারধর করেছেন।

জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় (জাবি) ও রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের (রাবি) পরিস্থিতিও একই রকমের উদ্বেগজনক। জাবিতে ছাত্রলীগের এক নেতাকে শিক্ষক হিসেবে নিয়োগ না দেওয়ায় ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা সম্প্রতি উপাচার্যকে তার কার্যালয়ে প্রায় দুই ঘণ্টা আটকে রাখেন। এ ছাড়া, সম্প্রতি রাবি ছাত্রলীগের এক নেতা ফেসবুকে লাইভে বলেছেন, ওই বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি, প্রো-ভিসি এবং অন্যদের নিয়োগ দেওয়াটা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ভুল সিদ্ধান্ত, কারণ তারা ছাত্রলীগের পাশে দাঁড়ায়নি।

দেশের প্রায় প্রতিটি পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্রলীগের এমন দুঃসাহসী মন্তব্য ও কর্মকাণ্ড সম্পূর্ণ অগ্রহণযোগ্য। এসব কর্মকাণ্ড সাধারণ শিক্ষার্থীদের মধ্যে ভীতি সৃষ্টি করে এবং শিক্ষার পরিবেশ ব্যাহত করে। দেশের বৃহত্তর স্বার্থে ছাত্রলীগের উচ্ছৃঙ্খল সদস্যদের নিয়ন্ত্রণে কঠোর ব্যবস্থা নিতে পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসন ও ক্ষমতাসীনদের প্রতি আহ্বান জানাচ্ছি।

Comments

The Daily Star  | English
US airstrike on Iran

Strikes on Iran mark Trump's biggest, and riskiest, foreign policy gamble

The dramatic US strike, including the targeting of Iran’s most heavily fortified nuclear installation deep underground, marks the biggest foreign policy gamble of Trump’s two presidencies and one fraught with risks and unknowns.

1h ago