কলকাতায় পতাকা পোড়ানোর ঘটনার পুনরাবৃত্তি যেন না হয়, তা নিশ্চিত করতে হবে
কলকাতায় বাংলাদেশ ডেপুটি হাইকমিশনের বাইরে বাংলাদেশের জাতীয় পতাকা ও অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. ইউনূসের কুশপুত্তলিকা পোড়ানোর ঘটনাটি একটি কাণ্ডজ্ঞানহীন ও উসকানিমূলক আচরণ।
এই ঘটনায় সাম্প্রতিক সময়ে নিরন্তর চাপের মুখে থাকা ভারত-বাংলাদেশের সম্পর্কের আরও অবনতি হওয়ার সম্ভাবনা তৈরি হয়েছে। এ ধরনের বৈরি আচরণ দুই দেশের বিভাজনে ইন্ধন জোগানো ছাড়া আর কোনো ভূমিকা রাখে না।
বাংলাদেশের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, পশ্চিমবঙ্গের কলকাতায় উপহাইকমিশনের বাইরে সহিংস বিক্ষোভ শুরু হয় এবং বিক্ষোভকারীরা পুলিশের বাধা উপেক্ষা করে উপহাইকমিশনের সীমানা পর্যন্ত চলে যায়। এতে উপকমিশনের কর্মীদের মধ্যে নিরাপত্তাহীনতার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। এ ধরনের আগ্রাসী আচরণ শুধু দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কই নয়, দুই দেশের স্বার্থসংশ্লিষ্ট আরও অনেক কিছুর ওপর নেতিবাচক প্রভাব ফেলতে পারে। এতে সমাজে অস্থিরতা দেখা দিতে পারে এবং সামগ্রিকভাবে এ অঞ্চলে অস্থিতিশীলতা বাড়তে পারে।
এই ঘটনায় সবচেয়ে উদ্বেগজনক যে বিষয়টি লক্ষণীয়, তা হলো, ভারতের কয়েকজন স্থানীয় রাজনৈতিক ব্যক্তিত্বের বাংলাদেশ-বিদ্বেষী অনুভূতির সুযোগ নিয়ে অভ্যন্তরীণ রাজনীতিতে ফায়দা লোটার প্রচেষ্টা। কতিপয় ভারতীয় রাজনীতিবিদের সাম্প্রতিক উসকানিমূলক প্রচারণা ও উদ্যোগে নয়াদিল্লির নিজস্ব পররাষ্ট্রনীতিকেই অবমাননা করার ঝুঁকি তৈরি হয়েছে এবং এর প্রভাব আরও সুদূর প্রসারী হতে পারে। দীর্ঘদিন ধরেই নয়াদিল্লি বাংলাদেশের সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের অধিকার নিশ্চিতে সরব থেকেছে এবং অন্তর্বর্তী সরকারও বারবার এ বিষয়ে তাদের অঙ্গীকারের কথা জানিয়ে এসেছে।
ভারতের একটি স্বার্থান্বেষী মহল খুবই আশঙ্কাজনক একটি বয়ান প্রচার করছে, যা হলো, সাবেক ইসকন সদস্য চিন্ময় কৃষ্ণ দাস ব্রক্ষচারীকে গ্রেপ্তারের ঘটনাটি বাংলাদেশের হিন্দু সম্প্রদায়ের বিরুদ্ধে হামলার সমতুল্য। এই বয়ান পুরোপুরি ভিত্তিহীন এবং যারা তা প্রচার করছেন, তারা দায়িত্বজ্ঞানহীন আচরণ করছেন। ভারতের গণমাধ্যমের একটি অংশ চিন্ময়ের গ্রেপ্তারের ভুল ব্যাখ্যা দিয়েছে। এতে আতঙ্ক ও বিভাজনের আগুনে ঘি ঢালা হয়েছে। চট্টগ্রামে বিক্ষোভের সময় এক আইনজীবীর মর্মান্তিক মৃত্যুর ঘটনাটিকেও বিকৃত করে এই বয়ানের সঙ্গে যুক্ত করা হয়েছে। প্রাথমিকভাবে, ভারতের কয়েকটি সংবাদমাধ্যম ভুল করে দাবি করে যে মুসলিম আইনজীবী হয়েও চিন্ময় দাসের পক্ষে ওকালতি করার জন্যই তার ওপর হামলা চালানো হয়েছে। কিন্তু পরবর্তীতে এই দাবি মিথ্যে প্রমাণিত হয়। তা সত্ত্বেও, একের পর এক মিথ্যা বয়ান ছড়াতে থাকে এবং বাড়তে থাকে অস্থিরতা।
ভারত ও বাংলাদেশের পূর্ব-ইতিহাস বেশ জটিল এবং কালের প্রবাহে প্রতিবেশী এই দুই দেশ অনেক ঘটনার মধ্য দিয়ে গেছে। কিন্তু একইসঙ্গে, দুই দেশের সম্পর্কে উল্লেখযোগ্য পরিমাণে অর্থনৈতিক ও কৌশলগত স্বার্থও জড়িত রয়েছে। কতিপয় ব্যক্তির দায়িত্বজ্ঞানহীন আচরণে এই বৃহত্তর সম্পর্কের অবমাননা হতে দেওয়া চলবে না। এখন সময় এসেছে উভয় সরকারের, বিশেষত, ভারতীয় গণমাধ্যমের এ ধরনের উসকানিমূলক বয়ান প্রকাশের লোভ সম্বরণ করার এবং দুই দেশকে একাত্ম করেছে এমন সব সম্পর্কগুলোকে আরও শক্তিশালী করার দিকে নজর দেওয়ার। এ ধরনের উসকানিমূলক ঘটনা সার্বিক পরিস্থিতিকে আরও খারাপ কিছুর দিকে নিয়ে যেতে পারে, যা উভয় দেশের মানুষের জন্যই চরম ক্ষতির কারণ হবে। কোনো অবস্থাতেই তা হতে দেওয়া চলবে না।
আমরা বিশেষ করে ভারতীয় গণমাধ্যমকে আহ্বান জানাচ্ছি এ ধরনের ঘটনা নিয়ে সংবাদ প্রকাশ করার সময় সাংবাদিকতার মূলনীতিগুলোকে সতর্কতার সঙ্গে অনুসরণ করতে এবং কোনো ঘটনা বা তথ্য অপ্রাসঙ্গিকভাবে উপস্থাপন না করতে। বস্তুত, আমাদের আহ্বান, তারা যেন অতিরঞ্জিত ও বিভ্রান্তিকর প্রতিবেদন প্রকাশে বিরত থাকেন।
Comments