ডেঙ্গু পরিস্থিতি আরও ভয়াবহ রূপ নিচ্ছে
ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্ত হয়ে মৃতের সংখ্যা যেভাবে বাড়ছে, তাতে আমরা গভীরভাবে উদ্বিগ্ন। অথচ বছরের এ সময়টায় ডেঙ্গুর প্রকোপ সাধারণত কমে আসে।
নভেম্বরের প্রথম ২৪ দিনেই ডেঙ্গুতে প্রাণ হারিয়েছেন ১৪৪ জন, যা বছরের যেকোনো মাসের ক্ষেত্রে সর্বোচ্চ। স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের (ডিজিএইচএস) তথ্য অনুযায়ী, এ বছর ডেঙ্গুর কারণে এখন পর্যন্ত ৪৫৯ জনের মৃত্যুর খবর পাওয়া গেছে। গত ২৪ বছরে মাত্র দ্বিতীয়বারের মতো ডেঙ্গুতে মৃত্যুর সংখ্যা এ বছর ৪৫০ ছাড়িয়েছে। স্পষ্টতই, সময়মতো সঠিক পদক্ষেপ নিলে এই মর্মান্তিক পরিস্থিতি এড়ানো সম্ভব হতো।
এটা সত্য, জুলাই-আগস্টের গণঅভ্যুত্থানের কারণে এ বছরের ডেঙ্গু নিয়ন্ত্রণ কার্যক্রম বিঘ্নিত হয়েছে। আন্দোলনের এক পর্যায়ে মেয়র ও কাউন্সিলরবিহীন হয়ে যাওয়ায় সিটি করপোরেশন ও পৌরসভাগুলো তাদের নিয়মিত দায়িত্ব পালন করতে পারেনি। তবে অন্তর্বর্তী সরকার প্রশাসকদের দায়িত্ব দেওয়ার পর আমরা আশা করেছিলাম মশা নিয়ন্ত্রণ কার্যক্রম দ্রুত শুরু হবে। কিন্তু ঢাকার দুই সিটি করপোরেশনই যথাযথ পদক্ষেপ নিতে ব্যর্থ হয়েছে। রাজধানীর বাইরের অবস্থাও একই রকম। এ নিয়ে একাধিক সম্পাদকীয় প্রকাশ করেও আমরা কর্তৃপক্ষকে কার্যকর পদক্ষেপ নিতে উদ্বুদ্ধ করতে পারিনি। কর্তৃপক্ষের অদক্ষতার পাশাপাশি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হিসেবে জনস্বাস্থ্যকে উপেক্ষারও সামিল। এই ব্যর্থতার জন্য অবশ্যই তাদেরকে জবাবদিহির আওতায় আনতে হবে।
বিশেষজ্ঞ এবং কীটতত্ত্ববিদরা বারবার ডেঙ্গুর ধরন পরিবর্তন নিয়ে সতর্ক করেছেন। কিন্তু তাদের হুশিয়ারিকে আমলে নেওয়া হয়নি। আগে ডেঙ্গু মূলত ঢাকাকেন্দ্রিক একটি ব্যাধি ছিল। কিন্তু ডেইলি স্টারে অক্টোবরে প্রকাশিত এক প্রতিবেদন মতে, এই বছর রাজধানীর বাইরে ডেঙ্গু রোগীর সংখ্যা ঢাকার চেয়ে বেশি। আবার শীতকালে ডেঙ্গুর প্রকোপ সাধারণত কমে এলেও এবার এর কোনো লক্ষণ দেখা যাচ্ছে না। এভাবে চলতে থাকলে আগামী দিনগুলোতে পরিস্থিতি আরও খারাপের দিকে যেতে পারে। সুতরাং, পরিবর্তিত বাস্তবতাকে বিবেচনায় রেখে আমাদেরকে ডেঙ্গু রোগের মোকাবিলার নতুন কৌশল হাতে নিতে হবে। বলা হচ্ছে, দেরিতে ডেঙ্গু শনাক্ত হওয়ায় এ বছর অনেকে প্রাণ হারিয়েছে। যেহেতু কার্যকর চিকিৎসার জন্য দ্রুত ডেঙ্গু শনাক্ত হওয়াটা অপরিহার্য, তাই উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স থেকে শুরু করে সকল স্বাস্থ্যকেন্দ্রের ডেঙ্গু শনাক্ত করা এবং চিকিৎসা দেওয়ার সক্ষমতা থাকতে হবে। ডেঙ্গু পরীক্ষাগুলো যেন ভর্তুকি মূল্যে সহজলভ্য হয়, সেটাও সরকারকে নিশ্চিত করতে হবে।
পাশাপাশি, সিটি করপোরেশন ও পৌরসভাগুলোতে নিয়মিত মশা নিয়ন্ত্রণ কার্যক্রম ও সচেতনতামূলক প্রচারণা চালানো জরুরি। এগুলো ডেঙ্গুর প্রাদুর্ভাব কমাতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। ডেঙ্গু এখন মহামারিতে পরিণত হয়েছে। যার ফলে, এর বিস্তার রোধে এবং অপ্রয়োজনীয় মৃত্যু ঠেকাতে আমাদের টেকসই, বছরব্যাপী উদ্যোগ নিতে হবে।
Comments