স্বাদ নাকি স্বাস্থ্য

ভোজন রসিক বাঙালি হওয়ায় আমাদের খাবারে অনীহা যেন কখনই আসেনা। বারো মাসে তেরো পার্বণের ঐতিহ্য বহন করতে গিয়ে অতিরিক্ত ভোজন কে আমরা বেশ স্বাভাবিক ভাবেই মেনে নিয়েছে। কিন্তু এই তথাকথিত ‘ভোজন রসিক বাঙালি’ উপাধি বহন করতে গিয়ে নিজেরাই যে নিজেদের স্বাস্থ্যের মারাত্মক ক্ষতি করছি সে ব্যাপারে আমরা যথেষ্ট উদাসীন।

ইতিহাস পর্যালোচনা করলে দেখা যায়, প্রাচীন মোগল আমলের মুখরোচক মোগলাই খাবার এবং তরিকার প্রভাব এখনো এদেশের মানুষের খাদ্যাভ্যাসের সঙ্গে ওতপ্রোত ভাবে জড়িত। এসব খাবার সুস্বাদু ও মুখরোচক তো বটেই, তবে কতটা স্বাস্থ্যকর তা নিয়ে যথেষ্ট সন্দেহ রয়েছে। কালক্রমে ব্রিটিশ শাসনের প্রভাবে পাশ্চাত্যের বেশকিছু খাবারও বাঙালির খাদ্য তালিকাভুক্ত হয়। স্বাস্থ্যসচেতন ইংরেজরা অবশ্য নিজেদের খাদ্যতালিকায় স্বাস্থ্যকর ও ঝুঁকিহীন খাবারই রেখেছে। কিন্তু বাঙালি যখন তা নিজেদের খাদ্য তালিকাভুক্ত করল, তখন সেসব খাবারকে মুখরোচক করার উদ্দেশ্যে তাতে আরো মাল-মসলাযুক্ত করল। অর্থাৎ স্বাস্থ্যকর খাবারের চেয়ে সুস্বাদু খাবারের দিকে ঝোঁক বরাবরই বেশি ছিল। এতে স্বাস্থ্যহানি হলেও কারো খুব একটা দুঃখ হবে বলে মনে হয়না। এই খাদ্যাভ্যাসের জন্যই মূলত আমরাদের দেশের মানুষ স্বাস্থ্যহীনতায় ভুগছে।

কথায় আছে, ‘সুস্থতাই স্বাস্থ্য’; তবে আমাদের জন্য তা ‘স্থূলতাই স্বাস্থ্য’হলে ই যেন যথার্থ হবে। স্বাস্থ্যের প্রতি এই ধারণা যে একদম ভুল, তা এতদিনে আমরা বুঝেছি এবং বেশ ভালো করেই বুঝেছি। খাবারকে সুস্বাদু করতে আমরা এতটাই মগ্ন থাকি যে, এর গুণাগুণের দিকে বিশেষ নজর দেয়া হয়না। রান্নায় তেল, ঘি ও মসলা পরিমাণে প্রয়োজনের তুলনায় অতিরিক্ত ব্যবহার করা হয়। ফলে খাবারের স্বাদ অতুলনীয় হলেও খাদ্যগুণ প্রায় থাকেনা বললেই চলে। কেবল স্বাদকে প্রাধান্য দিতে গিয়ে আমরা বেশ মোটাসোটা একটা ভুঁড়ি বানাচ্ছি ঠিকই, কিন্তু যেসব খাবার খাচ্ছি তার পুষ্টিগুণ দেহে পৌঁছে দিতে ব্যর্থ হচ্ছি। এজন্য অধিক খাবার গ্রহণের পরও আমরা নানাবিধ রোগে আক্রান্ত হচ্ছি। অনেকের মনে প্রশ্ন জাগতে পারে, কেন এত খাবার খাওয়ার পরও নানা রকম রোগ আমাদের তাড়া করে বেড়াচ্ছে? এর উত্তরটিও কিন্তু প্রশ্নের মধ্যেই রয়েছে। হ্যাঁ, অধিক পরিমাণে খাবার গ্রহণের ফলেই মানুষ এত রোগে ভুগছে। যার প্রধান এবং অন্যতম কারণ হলো, স্বাদকে প্রাধান্য দিয়ে খাবারের প্রকৃত খাদ্যগুণ নষ্ট করে ফেলা। মুখরোচক খাদ্যের দিকে না ঝুঁকে আমরা যদি স্বাস্থ্যকর খাবারের দিকে দৃষ্টিপাত করি, তবে দেখা যাবে বেশ সহজ উপায়ে পরিমিত পরিমাণ খাবার খেয়ে আমরা প্রকৃতপক্ষে সুস্বাস্থ্যের অধিকারী হয়ে উঠব। অনেকের ধারণা, স্বাস্থ্যকর খাবার সুস্বাদু হয়না। কিন্তু স্বাদ এবং পুষ্টির সংমিশ্রণ ঘটালে তা সবার কাছে গ্রহণযোগ্যতা পাবে।

সুতরাং, স্বাদ বনাম স্বাস্থ্য বিতর্কে যেকোনো একটির বলিদান না করে বরং সঠিক উপায়ে এদের সংমিশ্রণ ঘটালে হয়তো ‘ভোজন রসিক বাঙালি’ কথাটির সঙ্গে ‘স্বাস্থ্য সচেতন বাঙালি’ উপাধিটিও আমাদেরই হবে।

ছবি : সংগ্রহ

Comments

The Daily Star  | English

Yunus returns home completing 4-day Japan tour

A flight of Singapore Airlines, carrying the CA landed at Hazrat Shahjalal International Airport at 12:15am on Sunday

1h ago