ভবিষ্যৎ বিশ্বে খাদ্য সংকট মোকাবিলায় সম্ভাব্য খাবার

জেলিফিশ । ছবি: গোল্ডথ্রেডটু.কম

২০৫০ সাল নাগাদ বিশ্বের জনসংখ্যা বৃদ্ধি পেয়ে ৯ দশমিক ৩ বিলিয়নে দাঁড়াবে ধারণা করা হচ্ছে। অন্যদিকে, বিশ্ব খাদ্য ও কৃষি সংস্থার হিসাব মতে- ভবিষ্যৎ এই বিশাল জনসংখ্যার খাবারের যোগান দিতে অন্তত ৬০ শতাংশ বেশি খাদ্য উৎপাদন করতে হবে।

তবে, খাদ্য উৎপাদন এত ব্যাপক মাত্রায় বাড়ানো সম্ভব হবে কি না তা নিয়ে আছে বাস্তবিক অশঙ্কা। সেক্ষেত্রে ভবিষ্যৎ বিশ্ব তীব্র খাদ্য সংকটের মুখোমুখি মুখোমুখি হতে পারে। অন্যদিকে, প্রথাগত চাষাবাদ ব্যবস্থার আছে ভবিষ্যৎ খাদ্য চাহিদা মেটানোর সীমাবদ্ধতা। 

ছবি: সংগৃহীত

বর্তমান কৃষিব্যবস্থা বিশ্বের প্রায় ৪০ শতাংশ জমি দখল করে আছে। যা বৈশ্বিক ২৫ শতাংশ গ্রিন হাউজ গ্যাস সৃষ্টির জন্য দায়ী। এই অবস্থায় যদি অধিক পরিমাণ জমি কৃষিকাজে ব্যবহৃত হয়, তবে বিশ্বের ট্রপিক্যাল ফরেস্টের মতো স্থানগুলোতে কুড়াল চালাতে হবে। কিন্তু এর ফলে বিদ্যমান ঝুঁকিপূর্ণ বৈশ্বিক জলবায়ু আরও খারাপের দিকে যাবে। 

সংকট মোকাবিলায় সেজন্য এখন থেকেই খোঁজা হচ্ছে বিকল্প সব খাদ্য উপাদান। তালিকায় যেমন আছে তেলাপোকা, ঘাসফড়িংয়ের মতো পতঙ্গ, তেমনি আছে শৈবাল এবং সোলেনের মতো কৃত্রিম খাবার- 

কৃত্রিম মাংস। ছবি: সংগৃহীত

কালচার করা মাংস

পরীক্ষাগারে তৈরি হলেও, কালচার করা মাংস সত্যিকার অর্থেই মাংস। এ প্রক্রিয়ায় প্রাণীর সতেজ কোষের কালচার সংগ্রহ করা হয়। পরবর্তীতে যা বায়োরিঅ্যাক্টরে রাখা হয়, যাতে করে কোষ বৃদ্ধি হয়ে টিস্যুতে পরিণত হতে পারে; এবং কয়েক সপ্তাহ পরে এই পরীক্ষাগারে উৎপাদিত মাংসকে খাওয়া তো যায়ই, সঙ্গে চাইলে- বার্গার, চিকেন নাগেটের মতো খাবারেও ব্যবহার করা যায়। পরীক্ষাগারে উৎপাদিত এমন মাংসের পুষ্টিগুণ নিয়ে প্রশ্ন থাকলেও, খাবার জন্য প্রাণী হত্যার নৈতিক প্রশ্নে কালচার করা মাংসের কিন্তু জয়ী হওয়ার সুযোগ থাকছে। যেহেতু এমন প্রক্রিয়ায় পশু হত্যা, জবাইয়ের প্রয়োজন পড়ছে না, সেক্ষেত্রে অনেক ব্যবসায়ী প্রতিষ্ঠানকে দেখা যেতে পারে পরিচিত মাংসের বাইরে 'নতুন' প্রাণীর মাংস নিয়ে বাজারে হাজির হতে। কিছুদিন আগে যেমন এক স্টার্টআপ প্রতিষ্ঠানকে কালচার করা বাঘের মাংস বাজারে আনার ঘোষণা দিতে দেখা গেছে!  

লবণজাত জেলিফিশ। ছবি: সংগৃহীত

জেলিফিশ 

এশিয়ার বেশকিছু দেশে জেলিফিশ খাওয়া হলেও বৈশ্বিকভাবে জেলিফিশ খায় এমন মানুষের সংখ্যা নগণ্য। কম চর্বি, আমিষ এবং খনিজ সমৃদ্ধ জেলিফিশকে হয়তো শিগগিরই বিশ্বের অনেক সুপারশপেই শুকনো চিপস, হিমায়িত পণ্য হিসেবে ব্যাপকহারে বিক্রি হতে দেখা যেতে পারে। 

কৃত্রিমভাবে তৈরি খাবার। ছবি: সংগৃহীত

কৃত্রিম খাদ্য 

২০১৭ সালে যাত্রা করা 'সোলার ফুডস' নামে ফিনিশ এক কোম্পানি বাজারে কৃত্রিম খাদ্য সুলভ করার ঘোষণা দিয়েছে। 'সোলার ফুডস' যে উপায়ে কৃত্রিম খাদ্য তৈরি করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে, তার প্রথম ধাপ হলো বিদ্যুৎ ব্যবহার করে হাইড্রোজেন সৃষ্টি করা। যে হাইড্রোজেনকে পরবর্তীতে কার্বন-ডাই-অক্সাইড, পানি, ভিটামিন এবং খনিজের সঙ্গে মেশানো হবে। এই মিশ্রণ এক ধরনের মাইক্রোবিয়াল ম্যাসকে খাওয়ানো এবং বৃদ্ধির জন্য ব্যবহার করা হবে এবং সেই বায়োম্যাসকে পরবর্তীতে খাবার উপযোগী প্রোটিন হিসেবে ব্যবহার করা যাবে।  

কীটপতঙ্গ থেকে তৈরি খাবার। ছবি: সংগৃহীত

কীটপতঙ্গ 

বিশ্বের প্রায় ২ বিলিয়ন মানুষ ঘাসফড়িংয়ের মতো কীটপতঙ্গ খেয়ে থাকে বলে জানা যায়। বেশিরভাগ মানুষের কাছে কীটপতঙ্গ খাওয়ার ব্যাপারটা অরুচিকর ঠেকে বলে, মানুষের ব্যাপক উদরপূর্তির হাত থেকে কীটপতঙ্গ আজো বেঁচে আছে। তবে আসন্ন বৈশ্বিক খাদ্য সংকটকালে তাদের এই বেঁচে থাকা দুষ্কর হয়ে পড়তে পারে বলে মনে করা হচ্ছে।   

শৈবাল থেকে তৈরি খাবার। ছবি: সংগৃহীত

শৈবাল

কেল্প নামে এক ধরনের শৈবাল শুধু যে অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট এবং আয়োডিনে সমৃদ্ধ তা নয়, বরং এটি বেশ টেকসই একটি খাদ্যসামগ্রী। কেল্পসহ বেশ কিছু সামুদ্রিক শৈবালের আছে আগামী বিশ্বের অন্যতম প্রধান খাদ্য উপাদান হওয়ার সম্ভাবনা।   

এমন খাদ্য তালিকা তৈরির পাশাপাশি, ভবিষ্যৎ বিশ্বের খাদ্য সংকট মোকাবিলায় অনেকের পরামর্শ হচ্ছে- প্রথাগত আনুভূমিক কৃষি চাষাবাদের পাশাপাশি লম্বালম্বিভাবে চাষাবাদ প্রক্রিয়ার ব্যাপক প্রচলন। অর্থাৎ উঁচু উঁচু কাঠামোর পুরোটা জুড়ে চাষাবাদ করা। এ ধরনের উদ্ভাবনের ফলে জমির স্বল্পতা পাশ কাটানো গেলেও, তা ব্যাপক পরিসরে সফল করতে প্রয়োজন পড়বে বিপুল অর্থ ও অত্যাধুনিক প্রযুক্তির ব্যবহার।  

 

তথ্যসূত্র: সিএনএন, ফ্রি থিঙ্ক.কম
 

Comments

The Daily Star  | English
CSA to be repealed

Govt will scrap CSA within a week

The Cyber Security Act will be repealed within a week and all cases filed under the act will be withdrawn, Nahid Islam, adviser to the posts, telecommunications, and information technology ministry, said yesterday.

16m ago