কারওয়ান বাজারে সবজির দাম কম কেন

স্টার ফাইল ফটো

রাজধানীর শেওড়াপাড়া থেকে এক দিন পরপর বাসে চেপে কারওয়ান বাজারে আসেন বাবুল মিয়া। উত্তরের শেওয়াপাড়া থেকে প্রায় সাড়ে পাঁচ কিলোমিটার দক্ষিণে কারওয়ান বাজারে আসেন মূলত পরিবারের জন্য সবজি কিনতে। সবজি কিনে আবার বাসে চেপে বাড়ি ফেরেন তিনি।

বাবুল মিয়া দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, 'প্রয়োজনের তাগিদেই আমাকে এ কাজ করতে হয়। কারওয়ান বাজারে ৩০০ টাকার সবজি কিনলে অন্তত ১০০ টাকা বাঁচে। মহল্লার বাজারের তুলনায় কারওয়ান বাজারে সবজির দাম কম।'

বাবুল মিয়ার মতো আরও অনেকে কারওয়ান বাজারে আসেন কম খরচে ঘরের কেনাকাটা করতে।

কাঁচাবাজারের জন্য কারওয়ান বাজারের খ্যাতি আছে। রাজধানীর সবচেয়ে বড় কাঁচাবাজার হিসেবে পরিচিত এই বাজারের মূল অংশের আশেপাশের রাস্তা-ফুটপাতে প্রতিদিন সকালে সবজি নিয়ে বসেন খুচরা বিক্রেতারা। তাদের কাছেই কম দামে পাওয়া যায় নানা ধরনের সবজি। শহরের যেকোনো বাজারের তুলনায় এখানে সবজির দাম কম থাকে।

সাধারণত মধ্যরাত থেকে সকাল ৭টার মধ্যে পাইকারি বিক্রি শেষ হয়ে যায়। বিক্রির পর যা থেকে যায় পাইকাররা তা খুচরা বিক্রেতাদের কাছে কম দামে বিক্রি করে দেন। তারপর সেগুলো বিক্রি হয় বাবুল মিয়ার মতো নানান জায়গা থেকে আসা সকালের খুচরা গ্রাহকদের কাছে।

খুচরা বিক্রেতা আশরাফুল ইসলাম ডেইলি স্টারকে বলেন, 'পাইকারি বাজার বন্ধ হয়ে যাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে বড় ব্যবসায়ীরা তাদের বিক্রি না হওয়া সবজিগুলো কম দামে ছেড়ে দেন। আমরা সেগুলো কিনি। পরে সেগুলো খুচরা গ্রাহকদের কাছে বিক্রি করি।'

পাইকারদের কাছ থেকে সবজি কিনতে খুচরা বিক্রেতাদের গাড়ি ভাড়া দিতে হয় না। আবার সবজি নষ্ট হওয়ার আগেই তুলনামূলক কম দামে সেগুলো বিক্রি করে দেওয়া যায়।

দামে তারতম্য

সম্প্রতি মিরপুর-১১, শেওয়াপাড়া, কাজীপাড়া, ফার্মগেট, ইব্রাহিমপুর, কচুক্ষেত ও কড়াইল বেলতলী বস্তি এলাকাসহ অন্তত আটটি বাজার ঘুরে দেখা গেছে কারওয়ান বাজারের খুচরা সবজির দাম অন্যান্য বাজারের তুলনায় ১০ থেকে ১৫ শতাংশ কম।

কারওয়ান বাজারে বেগুন, লাউ, ঢেঁড়স, পটল, ঝিঙা, পেঁপে ইত্যাদি বিক্রি হয় ৪০ টাকা থেকে ৬০ টাকা কেজি দরে। এসব সবজি রাজধানীর অন্যান্য বাজারে কেজিপ্রতি বিক্রি হয় ৬০ টাকা থেকে ১০০ টাকায়।

কারওয়ান বাজারে আলুর দাম ১৮ থেকে ২০ টাকা। অন্যান্য বাজারে ২০ থেকে ২৫ টাকা। কাঁচা মরিচ অন্যান্য বাজারের তুলনায় বিক্রি হয় ১০ টাকা থেকে ৪০ টাকা কমে।

একই বাজার থেকে সবজি কিনে বিক্রেতারা অন্যান্য বাজারের তা বিক্রি করেন বেশি দামে।

ইব্রাহিমপুর বাজারের মোহাম্মদ রাকিব ডেইলি স্টারকে বলেন, 'সবজি দ্রুত নষ্ট হয়ে যায়। নিয়ে আসার সময় ও মজুদ করার সময় তিন থেকে পাঁচ শতাংশ পণ্য নষ্ট হয়। ঘর ভাড়া দিতে হয়। অন্যদের বেতন ও যাতায়াত খরচ আছে। এসব কারণে পাঁচ থেকে ১৫ শতাংশ খরচ বেড়ে যায়।'

অন্যান্য বাজারের তুলনায় কারওয়ান বাজারে সবজির দাম কম হওয়ায় বাবুল মিয়ার মতো আরও অনেকে দূরে থেকে কষ্ট করে হলেও এখানে আসেন।

কষ্ট ভুলিয়ে দেয় কম দাম

দূর-দূরান্ত থেকে কারওয়ান বাজারে আসা কষ্টকর। তবে অনেকের কাছে কষ্ট হলেও সাশ্রয়ী। বিশেষ করে, তাদের জন্য যাদের সংসার চালাতে হিমশিম খেতে হয়। কষ্ট করে কারওয়ান বাজারে এলে তাদের কয়েকটা টাকা বাঁচে।

মোহাম্মদ রাকিব বলেন, 'ভিড় বা ঝক্কি কোনোটাই ভালো লাগে না। কিন্তু, দিন শেষে টাকাটাই সব। কয়েকটি টাকা বাঁচলে তা দিয়ে সংসারের অন্যান্য জিনিস কেনা যায়।'

কলাবাগানের গৃহকর্মী নাসিমা আক্তার ডেইলি স্টারকে বলেন, 'সূর্য ওঠার আগেই ঘর থেকে বের হই। কারওয়ান বাজারে সপ্তাহে একবার আসি। যদি ৫০-৬০ টাকা বাঁচে তা দিয়ে ডিম-ডাল কিনি।'

তেজগাঁওয়ের এক বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের কর্মী মোহাম্মদ ইসমাইল ডেইলি স্টারকে বলেন, 'টাকা বাঁচানোই সব না। কারওয়ান বাজারে তাজা সবজি পাওয়া যায়। ভোরে আসলে ভালো সবজি কেনা যায়।'

Comments

The Daily Star  | English
Former Jahangirnagar professor Anu Muhammad

Anu Muhammad questions interim govt sincerity on FB

His post goes on to explain that all this hustle and bustle, this air of secrecy and gimmicky tales regarding the Chattogram port, corridor access, munitions factory, hastily done opaque LNG import deal, Starlink agreement, etc. indicate exactly that

13m ago