যুক্তরাষ্ট্রের ওপর নিরাপত্তা নির্ভরতা কমাতে ইইউর ৮০০ বিলিয়ন ইউরোর পরিকল্পনা

ইউরোপীয় ইউনিয়নের অফিসের সামনে সংস্থাটির পতাকা উড়ছে। ফাইল ছবি: এএফপি
ইউরোপীয় ইউনিয়নের অফিসের সামনে সংস্থাটির পতাকা উড়ছে। ফাইল ছবি: এএফপি

এতদিন পর্যন্ত ইউরোপের নিরাপত্তার বিষয়টি বড় আকারে যুক্তরাষ্ট্রের ওপর নির্ভরশীল ছিল। বিভিন্ন কারণে সেই প্রেক্ষাপট বদলে গেছে।

আজ বৃহস্পতিবার ইউরোপীয় ইউনিয়নের (ইইউ) নেতাদের বৈঠকে ৮০ হাজার কোটি ইউরোর একটি পরিকল্পনা পেশ করবেন ইউরোপীয় কমিশনের চেয়ারম্যান উরসুলা ফন ডেয়ার লাইয়েন।

এ বিষয়টিকে সামনে রেখে উরসুলা মন্তব্য করেন, 'এটা ইউরোপের মুহূর্ত, আমাদের প্রত্যাশা পূরণ করতে হবে।'

সম্প্রতি মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ইউক্রেনকে সামরিক ও আর্থিক সাহায্য দেয়া বন্ধ করে দিয়েছেন। বিশ্লেষকদের মতে, এই পরিস্থিতিতে ইইউ-র সামনে নিজেদের সুরক্ষা বাড়িয়ে সামরিক ক্ষেত্রে স্বনির্ভর হওয়া ছাড়া আর কোনো পথ নেই।

কয়েকদিন আগে ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল মাখোঁর ডাকা বৈঠকে এবং গত রোববার যুক্তরাজ্যের প্রধানমন্ত্রী কিয়ের স্টারমারের ডাকা বৈঠকে এ বিষয়টি নিয়ে আলোচনা করেছেন ইউরোপের দেশগুলোর শীর্ষ নেতারা।

এবার উরসুলা ৮০ হাজার কোটি ইউরোর 'রিআর্ম ইউরোপ' পরিকল্পনা পেশ করছেন।

উরসুলা ইউরোপের নেতাদের চিঠি দিয়ে বলেছেন, 'পরিস্থিতি আগের চেয়ে অনেক খারাপ। আমাদের জীবনকালে এরকম বিপদ আগে আসেনি। প্রবল ঝুঁকির মুখে পড়েছে স্বাধীন ও সার্বভৌম ইউক্রেন এবং ইউরোপের নিরাপত্তা ও সমৃদ্ধি।'

সামরিক খাতের জন্য আরো অর্থ

ইউরোপীয় কমিশন প্রধান উরসুলা ভন ডার লেইন। রয়টার্স ফাইল ফটো

উরসুলার আশা, তার এই পরিকল্পনা ইউরোপের দেশগুলোর প্রতিরক্ষা বাজেটের চরিত্র বদলাবে। অতীতে বিভিন্ন দেশের সরকার আর্থিক অসুবিধার কারণ দেখিয়ে বাজেট বরাদ্দ কম রাখত। ইউরোপের দেশগুলোতে জিডিপির সঙ্গে সঙ্গতি রেখে ঋণের সর্বোচ্চ সীমা বেঁধে দেয়া হয়েছে। প্রতিরক্ষা ক্ষেত্রে সেই সীমা বাড়াবার কথা বলা হয়েছে উরসুলার প্রস্তাবে। এর ফলে আগামী চার বছরে সামরিক খাতে বিনিয়োগের পরিমাণ ৬৫০ কোটি টাকা বেড়ে যাবে।

ইইউর বাজেটে ১৫ হাজার কোটি টাকা ঋণ নেয়ার কথাও বলা হয়েছে। তবে এক্ষেত্রে ইইউ-র কিছু দেশের আপত্তি আছে। এক কর্মকর্তা জানিয়েছেন, এই অর্থ দিয়ে মিসাইল ডিফেন্স সিস্টেম, ড্রোন, সাইবার প্রস্তুতি বাড়ানো হবে। এই বিষয়গুলোতে ইউরোপ এখনও যুক্তরাষ্ট্রের ওপর নির্ভরশীল।

এক প্রবীণ ইইউ কর্মকর্তা বলেছেন, নেতারা দ্রুত এই প্রস্তাবের বাস্তবায়ন চান। তাহলেই ইইউ-র পক্ষে নিজেদের জন্য সুরক্ষা জোরদার করা সম্ভব হবে।

হাঙ্গেরি, স্লোভাকিয়ার অবস্থান

হাঙ্গেরি ও স্লোভাকিয়া ইঙ্গিত দিয়েছে, ইউক্রেনকে সাহায্য করা নিয়ে তাদের আপত্তি আছে। স্লোভাকিয়ার প্রধানমন্ত্রী রবার্ট ফিকো এই বিষয়টি উল্লেখ করে একটি চিঠি লিখেছেন। সেখানে তিনি বলেছেন, স্লোভাকিয়া এই পরিকল্পনা আটকাবে না, কিন্তু তারা কোনো অর্থও দিতে পারবে না।

জার্মানি রাজি, সুইডেনের দ্বিধা

ইউরোপের অনেক দেশেরই সামরিক সক্ষমতা ও নিজেদের সুরক্ষিত রাখার বিষয়টি প্রশ্নবিদ্ধ। প্রতীকী ছবি: ডিডব্লিউ
ইউরোপের অনেক দেশেরই সামরিক সক্ষমতা ও নিজেদের সুরক্ষিত রাখার বিষয়টি প্রশ্নবিদ্ধ। প্রতীকী ছবি: ডিডব্লিউ

এই পরিকল্পনা নিয়ে সুইডেনের দ্বিধা ছিল। তবে সুইডিশ ডিফেন্স রিসার্চ এজেন্সির গবেষক ক্যালে হ্যাকানসন বলেছেন, কয়েকদিন ধরে সুইডেনের মনোভাবে একটা পরিবর্তন দেখা যাচ্ছে। বিশেষ করে ট্রাম্প ও ভলোদিমির জেলেনস্কির মধ্যে সম্পর্ক খারাপ হওয়ার পর তাদের মনোভাবে পরিবর্তন দেখা যাচ্ছে।

হ্যাকানসন জানান, সুইডিশ প্রধানমন্ত্রী উলফ ক্রিস্টেরসন বলেছেন, তিনি উরসুলার পরিকল্পনা সমর্থন করেন। ফিনল্যান্ড, ডেনমার্ক ও জার্মানিরও দ্বিধা ছিল, কিন্তু তারা তাদের অবস্থান বদল করেছে।

উরসুলা এই পরিকল্পনার কথা জানানোর কয়েক ঘণ্টা আগে সিডিইউ নেতা ফ্রিডরিশ ম্যার্ৎস জানিয়েছেন, তারা প্রতিরক্ষা ও পরিকাঠামো খাতে পাঁচ হাজার কোটি ইউরো করে বেশি বিনিয়োগ করবেন।

Comments

The Daily Star  | English
Tariffs

Economic lessons from the tariff war

Our understanding of tariffs might not be complete.

9h ago