কিশোর নিহতের জেরে প্যারিস ছাড়াও বিক্ষোভ ছড়িয়েছে আরও ৫ শহরে

প্যারিসের শহরতলীর নানতেরে এলাকায় বিক্ষোভকারীরা গাড়িতে আগুন ধরিয়ে দিলে দমকল কর্মীরা তা নিয়ন্ত্রণে আনার চেষ্টা চালান। ছবি: রয়টার্স
প্যারিসের শহরতলীর নানতেরে এলাকায় বিক্ষোভকারীরা গাড়িতে আগুন ধরিয়ে দিলে দমকল কর্মীরা তা নিয়ন্ত্রণে আনার চেষ্টা চালান। ছবি: রয়টার্স

ফ্রান্সের রাজধানী প্যারিসের একটি তল্লাশিচৌকিতে পুলিশের গুলিতে কিশোর নিহত হওয়ার জেরে দেশজুড়ে বিক্ষোভের আগুন ছড়িয়ে পড়েছে। টানা ২ দিন ধরে চলা এই উত্তপ্ত পরিস্থিতি সামলাতে হিমশিম খেয়ে যাচ্ছে প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল মাখোঁর সরকার।

আজ বৃহস্পতিবার বার্তা সংস্থা রয়টার্স জানিয়েছে, এ ঘটনায় রাজধানী প্যারিস ছাড়াও দেশের বিভিন্ন অংশের শহর ও গ্রামে জনগণ সহিংস বিক্ষোভ করছে। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী জেরাল্ড দারমানিন জানান, পুলিশ ২ দিন ধরে চলমান বিক্ষোভে মোট ১৫০ জনকে গ্রেপ্তার করেছে।

ফ্রান্সে দীর্ঘদিন থেকেই বিভিন্ন মানবাধিকার সংস্থা ও এর কর্মীরা আইন প্রয়োগকারী সংস্থার বিরুদ্ধে সহিংসতা ও বর্ণবাদী আচরণের অভিযোগ আনছে, বিশেষ করে নিম্ন আয়ের ও  ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীর মানুষের ক্ষেত্রে।

প্যারিসের পশ্চিম সীমান্তের বাইরের অংশে অবস্থিত শহর নানতেরে এলাকায় ট্রাফিক চেকপোস্টের নির্দেশনা না মেনে পালিয়ে যাওয়ার চেষ্টা চালালে উত্তর আফ্রিকান বংশোদ্ভূত তরুণ নাহেলের (১৭) খুব কাছে থেকে গুলি চালান এক পুলিশ কর্মকর্তা। স্থানীয় কৌসুলি জানিয়েছে, তদন্তকারী ম্যাজিস্ট্রেট এ ঘটনায় দায়ী পুলিশ কর্মকর্তাকে সজ্ঞানে ও স্বেচ্ছায় মানব হত্যার অভিযোগে আনুষ্ঠানিক তদন্তের আওতায় এনেছেন।

ফ্রান্সের আইনি ব্যবস্থা অনুযায়ী, আনুষ্ঠানিক তদন্ত অভিযোগ গঠনের সমতুল্য।

কৌসুলি প্যাসকাল প্রাশ এক সংবাদ সম্মেলনে বলেন, 'তথ্য-প্রমাণ অনুসারে, (এ ঘটনার ক্ষেত্রে) অস্ত্র ব্যবহারের আইনি শর্ত মানা হয়নি।'

প্রেসিডেন্ট মাখোঁ বুধবার জানান, এই গুলির ঘটনা অমার্জনীয়। এক জরুরি বৈঠকে তিনি সহিংস বিক্ষোভের প্রতিও নিন্দা জানান।

জরুরি বৈঠকের শুরুতে তিনি বলেন, 'গত কয়েক ঘণ্টায় বিভিন্ন থানা সহিংস হামলার শিকার হয়েছে। শুধু থানাই নয়, স্কুল ও টাউন হলগুলোও আক্রান্ত হচ্ছে—অর্থাৎ, দেশের সরকারি স্থাপনা আক্রান্ত হচ্ছে, যা পুরোপুরি অযৌক্তিক।'

সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়া একটি ভিডিওতে দেখা যায়, একটি মার্সিডিজ এএমজি গাড়ির পাশে পুলিশের ২ কর্মকর্তা দাঁড়িয়ে আছেন। ট্রাফিক সিগনাল না মেনে পালিয়ে যাওয়ার চেষ্টা চালালে, ১ পুলিশ গাড়ির তরুণ চালককে একেবারে কাছে থেকে গুলি করেন। স্থানীয় কৌসুলি জানান, গুলির আঘাত পাওয়ার কিছুক্ষণের মধ্যে চালক মারা যান। রয়টার্স এই ভিডিওর সত্যতা যাচাই করতে সক্ষম হয়েছে।

এ তদন্তের বিষয়ে জানেন এমন এক সূত্র রয়টার্সকে জানান, চালকের লাইসেন্স ছিল না এবং তিনি অবৈধভাবে গাড়ি চালাচ্ছিলেন। নানতেরে'র কৌসুলি জানান, এই অপ্রাপ্তবয়স্ক তরুণ পুলিশের কাছে পরিচিত ছিলেন। আগেও তিনি একবার ট্রাফিক আইন লঙ্ঘন করেছিলেন।

১৭ বছর বয়সী তরুণ নাহেল পুলিশের গুলিতে নিহত হলে বিক্ষোভকারীরা অসংখ্য পরিবহনে অগ্নিসংযোগ করে। ছবি: রয়টার্স
১৭ বছর বয়সী তরুণ নাহেল পুলিশের গুলিতে নিহত হলে বিক্ষোভকারীরা অসংখ্য পরিবহনে অগ্নিসংযোগ করে। ছবি: রয়টার্স

কৌসুলিরা জানান, মঙ্গলবারও তিনি পুলিশ কর্মকর্তাদের নির্দেশ মানেননি।

গত ২ দিনে বিক্ষোভকারীরা নানতেরে এলাকায় অসংখ্য গাড়ি পুড়িয়েছে এবং পুলিশের সঙ্গে সংঘাতে জড়িয়েছে। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে প্যারিসজুড়ে বাড়তি ২ হাজার পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে।

প্যারিস ছাড়াও আরও অন্তত ৫ শহর ও বেশ কিছু জেলায় বিক্ষোভ দেখা দিয়েছে বলে কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে।

এ বছর ইতোমধ্যে ট্রাফিক সিগনাল না মানার কারণে মোট ৩ ব্যক্তিকে গুলি করে হত্যা করল ফ্রান্সের পুলিশ।

পুলিশের মুখপাত্র জানান, গত বছর একই কারণে পুলিশের গুলিতে ১৩ জন নিহত হন, যা একটি নতুন রেকর্ড সৃষ্টি করেছিল।

রয়টার্সের হিসাব মতে, ২০২১ ও ২০২০ এ ট্রাফিক অমান্য করার জন্য ৫ জনকে হত্যা করে ফ্রান্সের পুলিশ।

আর ২০১৭ থেকে শুরু করে এখন পর্যন্ত এ কারণে মারা যাওয়া ব্যক্তিদের বেশিরভাগই কৃষ্ণাঙ্গ অথবা আরব বংশোদ্ভূত।

 

Comments

The Daily Star  | English
Protests disrupt city life in Dhaka

Protests disrupt city life, again

Protests blocking major thoroughfares in Karwan Bazar and Shahbagh left the capital largely paralysed

1h ago