গাছ গজানো ও সবুজ দাগযুক্ত আলু খাওয়া কি নিরাপদ?
প্রতিদিনের রান্নায় সর্বাধিক ব্যবহৃত সবজি আলু। বাঙালির ঘরে আলু ছাড়া একদিনও চলে না। আলুর চাহিদা মেটাতে সংরক্ষণ করে রাখেন অনেকেই, সেই আলুতে অঙ্কুর গজাতে দেখা যায় হরহামেশাই। গাছ গজানো ও সবুজ হয়ে যাওয়া আলু খাওয়া ঠিক কি না সেটি অনেকেই জানেন না।
এই বিষয়ে জানিয়েছেন পপুলার মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের প্রধান পুষ্টিবিদ নিশাত শারমিন নিশি।
গাছ গজানো বা অঙ্কুরিত আলু
পুষ্টিবিদ নিশাত শারমিন বলেন, আলুতে গ্লাইকো-অ্যালকালয়েড নামক এক ধরনের টক্সিন থাক, যা আলুকে কীটপতঙ্গের আক্রমণ থেকে রক্ষা করে। অর্থাৎ আলুর সুরক্ষায় ভূমিকা রাখে এই টক্সিন। জামিনেট আলু বা গাছ গজানো আলুতে গ্লাইকো-অ্যালকালয়েড নামক টক্সিন প্রাকৃতিকভাবেই বেশি পরিমাণে বাড়তে থাকে।
যেকোনো টক্সিনসহ খাবার খাওয়া স্বাস্থ্যের জন্য নিরাপদ নয়। সাধারণত অনেকেই আলু সংরক্ষণ করে রাখেন দীর্ঘদিন ধরে। সংরক্ষণ করে রাখা আলুতে অঙ্কুর গজাতে দেখা যায়। এই ধরণের আলু কম খাওয়াই ভালো।
আলুতে অঙ্কুর তৈরি হয়ে গেলে পুষ্টিগুণের বেশ পরিবর্তন হয়। বিশেষ করে গাছ গজানো আলু খেলে সুগার বেড়ে যাওয়ার ঝুঁকি থাকে। তাই ডায়াবেটিস রোগীদের পরিমিত পরিমাণে আলু খাওয়ার সুযোগ থাকলেও গাছ গজানো বা অঙ্কুরিত আলু খাওয়া একদমই উচিত নয়। যেহেতু এই ধরনের অঙ্কুরিত আলুতে প্রাকৃতিকভাবেই কিছু টক্সিন তৈরি হয়ে যায়, তাই অতিরিক্ত পরিমাণে খেলে হজমে সমস্যা হতে পারে, পেট ব্যথা, ডায়রিয়া, মাথা ব্যথা, শরীরে ঝিমঝিম ভাব, বমি হতে পারে। বেশি পরিমাণে খাওয়ার কারণে অনেক সময় হাসপাতালে ভর্তি হওয়ার কারণ হয়ে দাঁড়াতে পারে।
সবুজ দাগযুক্ত আলু
আলুতে সবুজ দাগ বা যেকোনো সবজিতেই সবুজ দাগ দেখলেও আমরা তা গুরুত্ব দিই না। অনেকের ধারণা নেই এই ধরনের সবজিগুলা খাওয়া যায় কি না, অনেক সময় না জেনেই সবুজ হওয়া সত্ত্বেও বিশেষ করে আলু ফেলে না দিয়ে খোসা ছাড়িয়ে রান্নার জন্য ব্যবহার করেন অনেকে।
আলুতে যদি সবুজ দাগ হয়ে যায় তাহলে বুঝতে হবে আলু বিষাক্ত বা টক্সিন তৈরি হয়ে গেছে। সবুজ হয়ে যাওয়া আলুতে সোলানিন নামক টক্সিন থাকে। সোলানিনযুক্ত আলু শরীরে বিভিন্ন সমস্যার মূল কারণ। অনেকে মনে করেন আলু সেদ্ধ করলে বা ভাজলে এই ধরনের টক্সিন নষ্ট হয়ে যেতে পারে। যেহেতু এগুলো রাসায়নিক পদার্থ সাধারণত যেকোনো সিদ্ধ, ভাজা বা যেকোনো ফর্মেই রান্না করা হউক না কেনো সবুজ দাগ বা সবুজ রঙের আলুতে টক্সিনের কোনো পরিবর্তন হয় না।
আলুতে সবুজ দাগের পরিমাণ অল্প থাকলে কোনো সমস্যা না হলেও পরে আলুর বেশি অংশ সবুজ হয়ে যাওয়ার পর অতিরিক্ত পরিমাণে খেলে গ্যাস্ট্রোইনটেস্টাইনাল বিভিন্ন সমস্যা হতে পারে। পেটে ব্যথা, বমি, ডায়রিয়াসহ বিভিন্ন সমস্যা হতে পারে। এছাড়া মাথা ব্যথা, মাথা ঘোরা, শরীরে ঝিমঝিম ভাবসহ স্নায়ুজনিত বিভিন্ন সমস্যা দেখা দিতে পারে। শিশুদের, ডায়াবেটিস রোগী, কিডনিজনিত জটিলতা আছে এমন রোগীদের সবুজ দাগসহ আলু না খাওয়াই ভালো।
পুষ্টিবিদ নিশাত শারমিন বলেন, এক কথায় সবুজ হয়ে যাওয়া আলু না খাওয়াই ভালো। আলু যদি সামান্য সবুজ হয়, তবে সবুজ অংশ এবং অঙ্কুর কেটে ফেলে ভালোভাবে ধুয়ে ব্যবহার করা যেতে পারে। আলুর বড় অংশ সবুজ হয়ে গেলে এবং দীর্ঘদিন ধরে গজানো আলু না খাওয়াই ভালো।
Comments