কৃষকের জন্য বরাদ্দ ঋণ প্রকৃত কৃষক পাচ্ছেন না, ভোক্তা অধিদপ্তরের পর্যবেক্ষণ

জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর, আলু, বাণিজ্য মন্ত্রণালয়, কৃষি বিপণন অধিদপ্তর,
স্টার ফাইল ফটো

জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের এক পর্যবেক্ষণে বলা হয়েছে, কৃষকের জন্য বরাদ্দ ঋণ প্রকৃত কৃষক পাচ্ছেন না।

সম্প্রতি বাণিজ্য মন্ত্রণালয়কে দেওয়া এক প্রতিবেদনে ভোক্তা অধিদপ্তর তাদের এই পর্যবেক্ষণের কথা জানিয়েছে।

ভোক্তা অধিদপ্তর আলু উৎপাদনকারী চার জেলা মুন্সিগঞ্জ, বগুড়া, রংপুর ও নীলফামারীতে হিমাগার পরিদর্শন ও জেলা প্রশাসনসহ সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে মতবিনিময় সভা থেকে পাওয়া তথ্যের আলোকে এই পর্যবেক্ষণ জানিয়েছে।

প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, "কৃষকদের জন্য বরাদ্দ ঋণ প্রকৃত কৃষক পাচ্ছেন না। হিমাগারের মালিকেরা কৃষকদের নামে প্রাপ্ত ঋণ অনৈতিকভাবে তুলে তাদের নিয়োগ দেওয়া এজেন্টদের মাধ্যমে আলু উৎপাদন মৌসুমে দাদন প্রথার মতো কৃষকদের স্বল্প মূল্যে আলু বিক্রি করতে বাধ্য করেন।"

এতে বলা হয়েছে, এজেন্টরা প্রাপ্ত অর্থ ব্যবহার করে মৌসুমে কৃষকদের কাছ থেকে কম দামে আলু কিনে তা হিমাগারে সংরক্ষণ করে। অনেক সময় প্রভাবশালী এজেন্টরা প্রদান করা অগ্রিম ঋণের অর্থ অনৈতিক বিনিয়োগ করে কৃষকের জমি থেকে আলু বিক্রি করতে বাধ্য করে। মৌসুমে কৃষকরা এ বছর প্রতি কেজি আলু ১০-১২ টাকায় বিক্রি করেন।

ভোক্তা অধিদপ্তরের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, হিমাগারের এজেন্টরা প্রত্যক্ষভাবে আলুর দাম নিয়ন্ত্রণ করে থাকে। প্রত্যেক হিমাগারেই কিছু সংখ্যক বেপারি এজেন্টদের সঙ্গে যোগাযোগের মাধ্যমে আলু বিক্রয় করে। এই বেপারিদের সহায়তা ছাড়া কেউ সরাসরি হিমাগার থেকে আলু কিনতে পারে না।

ভোক্তা অধিদপ্তরের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, হিমাগারের এজেন্টরা প্রত্যক্ষভাবে আলুর দাম নিয়ন্ত্রণ করে থাকে। প্রত্যেক হিমাগারেই কিছু সংখ্যক বেপারি এজেন্টদের সঙ্গে যোগাযোগের মাধ্যমে আলু বিক্রয় করে। এই বেপারিদের সহায়তা ছাড়া কেউ সরাসরি হিমাগার থেকে আলু কিনতে পারে না।

হিমাগারে সংরক্ষিত আলুর জন্য হিমাগার থেকে যে স্লিপ দেওয়া হয় তাতে শুধু কৃষক অথবা মজুতদারের নাম ও সংরক্ষিত আলুর বস্তার সংখ্যা উল্লেখ থাকে। এই স্লিপ যার কাছে থাকে তিনিই আলুর মালিক হিসেবে বিবেচত হন। হিমাগার থেকে দেওয়া স্লিপ পর্যবেক্ষণে আলু সংরক্ষণকারীর কোনো ঠিকানা বা মোবাইল নম্বর দেখা যায়নি।

অর্থাৎ, স্লিপ অনুসন্ধানকে প্রকৃত মালিকের তথ্য যেমন পাওয়া সম্ভব নয়, তেমনি এটি কোনোভাবে হারিয়ে গেলে বা বেহাত হলে প্রকৃত মালিকের বঞ্চিত হওয়ার সম্ভবনা থাকে, বলা হয়েছে প্রতিবেদনে।

এতে আরও বলা হয়েছে, উল্লেখিত বেপারিরা আলু বিক্রির কোনো রশিদ দেন না। শুধু ট্রাক বা পরিবহন চালানের মাধ্যমে আলু বিক্রি করেন। এই চালানে আলুর পরিমাণ উল্লেখ থাকলেও কোনো বিক্রয় মূল্য উল্লেখ থাকে না। আলুর সম্পূর্ণ ব্যবসা পরিচালিত হয় মোবাইলে যোগাযোগ বা ক্ষুদে বার্তা আদান-প্রদানের মাধ্যমে।

এদিকে আলু সরকার নির্ধারিত দরে বিক্রি করতে কিছু সুপারিশও করেছে জাতীয় ভোক্তা-অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর।

এদিকে ভোক্তা অধিদপ্তর তাদের ওই সুপারিশ করেছে, কৃষি পণ্যের দাম স্থিতিশীল রাখতে এবং বাজারে কৃষি পণ্যের সরবরাহ নিরবিচ্ছিন্ন রাখতে প্রয়োজনে দ্রুত সময়ের এসব পণ্য রপ্তানি ও আমদানির অনুমতি দিতে হবে।

এতে আরও বলা হয়েছে, আলুসহ অন্যান্য কৃষি পণ্য বিক্রির সব পর্যায়ে পাকা রশিদ দেওয়া নিশ্চিত করতে হবে। বিশেষ করে কোল্ড স্টোরেজ থেকে আলু সরবরাহের সময় আবশ্যিকভাবে পাড়িতে পাকা ভাউচারসহ আলু পরিবহন নিশ্চিত করা।

ভোক্তা অধিদপ্তর আরও সুপারিশ করেছে, খুচরা ও পাইকারি বাজারে মূল্য তালিকা প্রদর্শন নিশ্চিত করতে হবে। ন্যায্য মূল্যে কৃষকদের বীজ আলু, আলু ও সার প্রাপ্তি নিশ্চিত করা। হিমাগারের সামনে আলুর সরকার নির্ধারিত মূল্য লেখা ব্যানা টাঙানো। সংশ্লিষ্ট দপ্তরের সমন্বয়ে একটি মনিটরিং সেল গঠন করতে হবে, যার মাধ্যমে কৃষি পণ্য উৎপাদন, মজুত ও সরবরাহের হালনাগাদ তথ্য সরকারকে নিয়মিতভাবে জানাতে হবে।

এতে আরও বলা হয়েছে, কৃষিপণ্যের পাইকারি ও খুচরা বাজারে নজরদারি বাড়ানো। কৃষকদে জন্য শষ্য বিমা চালু। কৃষি পণ্য সংরক্ষণে প্রয়োজনীয় অবকাঠামো নির্মাণ। উৎপাদন, সংরক্ষণ, বিপণন ব্যবস্থার প্রতিটি ক্ষেত্রে প্রকৃত তথ্য ও ডেটা সংরক্ষণ।

ভোক্তা অধিদপ্তরের সুপারিশে আরও বলা হয়েছে, আলুর বর্তমান সংকট মোকাবিলায় সীমিত আকারে আমদানির অনুমতি দেওয়া যেতে পারে। প্রান্তিক কৃষকদের কৃষ প্রাপ্তি সহজ করতে ও প্রকৃত কৃষকদের হাতে মোবাইল অ্যাপের মাধ্যমে কৃষি ঋণ প্রাপ্তি নিশ্চিত করতে হবে, বলা হয়েছে ওই প্রতিবেদনে।

এই বিষয়ে জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের মহাপরিচালক এ এইচ এম সফিকুজ্জামান দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, 'আমরা বেশ কিছু সুপারিশ ওই প্রতিবেদনে তুলে ধরেছি। সরকারের সংশ্লিষ্টরা এই সুপারিশ বাস্তবায়ন করলে এ বছর বাজারে যে সংকট তৈরি হয়েছে তা ধীরে ধীরে কেটে যাবে।'

'পাশাপাশি আগামী বছর দেশের সাধারণ মানুষকে এই ধরনের পরিস্থিতির সম্মুখীন হতে হবে না,' বলেন তিনি।

এর আগে, গত ১৪ সেপ্টেম্বর বাজার নিয়ন্ত্রণে প্রথমবারের মতো তিনটি কৃষিপণ্যের দাম বেঁধে দিয়েছিল সরকার। এগুলো হচ্ছে ডিম, আলু ও দেশি পেঁয়াজ। বেঁধে দেওয়া দাম অনুযায়ী, প্রতিটি ফার্মের ডিম ১২ টাকা, আলু খুচরা পর্যায়ে ৩৫-৩৬ টাকা (হিমাগার পর্যায়ে ২৬-২৭) এবং দেশি পেঁয়াজের দাম হবে ৬৪-৬৫ টাকা।

এরপর ঢাকাসহ দেশের সব বিভাগ ও জেলা পর্যায়ে আলু, পেঁয়াজ ও ডিমসহ নিত্য প্রয়োজনীয় পণ্যের মূল্য স্থিতিশীল ও সরবরাহ স্বাভাবিক রাখতে ভোক্তা অধিদপ্তর বাজার অভিযান পরিচালনা শুরু করে।

কৃষি বিপণন অধিদপ্তরের তথ্য মতে, দেশে উৎপাদিত আলুর সাড়ে ৫ শতাংশ স্থানীয় বাজার পর্যায়ে বিক্রি হয়। বাকি ৯৪ দশমিক ৫ শতাংশ জেলা শহর পর্যায়ে বা সারা দেশের বিভিন্ন বাজারে বিক্রি হয়ে থাকে।

এদিকে দাম নির্ধারণের পর প্রায় তিন সপ্তাহ পেরিয়ে গেলেও আলুর দাম নিয়ন্ত্রণে আসেনি।

রাজধানী ঢাকার মিরপুরের বর্ধিত পল্লবী এলাকার খুচরা ব্যবসায়ী মোহাম্মদ পনির হোসেন জানান, আজ তিনি প্রতি কেজি আলু ৪৫ থেকে ৫০ টাকায় বিক্রি করেছেন।

তিনি বলেন, 'বেশি দাম দিয়ে কেনার কারণেই বেশি দামে বিক্রি করতে হচ্ছে। যখন কম দামে কিনতে পারব, তখন কম দামে বিক্রি করব। এ কারণেই এখন সরকার নির্ধারিত দামে আলু বিক্রি করতে পারছি না।'

Comments

The Daily Star  | English

One killed in multi-vehicle crash on Dhaka-Mawa highway

The chain of crashes began when a lorry struck a private car from behind on the Mawa-bound lane

33m ago